হাতি খেদানোর প্রথম দিনে বড় সাফল্য পেল না বন দফতর। মঙ্গলবার সকালে বড়জোড়ার সাহারজোড়ার জঙ্গল থেকে ১০০টি হাতিকে বেলিয়াতোড়ের দিকে খেদানো শুরু হয়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত হুলাপার্টি হাতির পালটিকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মুখার্জিবাঁধ পর্যন্ত নিয়ে যায়। ডিএফও বাঁকুড়া (উত্তর) এস কুলন ডেইভাল বলেন, “১০০ হাতির এই দলটিকে তাড়াতে প্রথম দিন প্রায় ২০০ জন হুলা কর্মীকে নামানো হয়। ঠিক হয়েছে বড়জোড়ার সংগ্রামপুর গ্রামের পথ দিয়ে দলটিকে বেলিয়াতোড়ের জঙ্গলে পৌঁছে দেওয়া হবে। সেখান থেকে তাদের চেনা রাস্তায় বিষ্ণুপুর হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পথ ধরানো হবে।” |
সাহারজোড়ার জঙ্গলে হাতির দল। ছবি: বিকাশ মশান |
বড়জোড়ার বিভিন্ন গ্রামে হত কয়েক সপ্তাহে দলমার এই হাতির পালের তাণ্ডবে মারা যান একজন। জখম হন পাঁচ জন। ৭০টি বাড়ি ধুলিসাৎ করে। ফসল নষ্ট হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার। বাসিন্দাদের বিক্ষোভে পড়ে হাতি তাড়ানোর উদ্যোগ নেয় বন দফতর। হাতিদের ফেরানোর পথে গ্রামে গ্রামে সতর্কতার জন্য মাইকে করে প্রচারও চালানো হয়। সব হাতি একত্রিত করে পিছনে ও দু’পাশে ব্যারিকেড গড়ে হাতিদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে। বড়জোড়া রেঞ্জ অফিসার সৌমেন মণ্ডল বলেন, “এগোবার সময় বিভিন্ন গ্রামে বাধা পেয়ে হাতির দল যদি পিছন ফিরে আসে তাহলে আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে। গ্রামবাসীদের সবার স্বার্থের কথা ভেবে সংযত থাকতে বার বার বোঝানো হচ্ছে।”
বস্তুত গত কয়েক দিন ধরে ক্ষোভে উত্তপ্ত মোহনপুর, কেশবপুর, বাগুলি, মালিয়াড়া, বাথানডোবা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সাহারজোড়া, চিতরং, খাঁড়ারি ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি। রোজই বনদফতরের বড়জোড়া রেঞ্জ অফিসে এসে গ্রামবাসীরা হাতি তাড়ানো এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বন দফতরের আধিকারিকদের মতে, এই অবস্থায় প্রশাসনের এই উদ্যোগ গ্রামবাসীদের ক্ষোভ খানিকটা প্রশমিত করতে পারে। কিন্তু বনদফতরের এই অভিযানের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে হাতির দলের মতিগতির উপরে।
খাঁড়ারি গ্রামের অভিজিৎ কর্মকারের আশঙ্কা, “হাতির দল আসার সময় আমাদের এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। একজনকে আছাড় মারে। পরে তাঁর মৃত্যুও হয়। এবার হাতির দল ফেরার সময় কী করবে ভেবে আতঙ্কে রয়েছি।” একই রকম শঙ্কার কথা শোনালেন বৃন্দাবনপুর গ্রামের সুভাষ তুং, পাথরা গ্রামের দয়াময় কুণ্ডুরা। তাঁরা বলেন, “হাতির দল বার বার হানা দেওয়ার জমি-বাড়ি গিয়েছে। সরকারও ক্ষতুপূরণ দিচ্ছে না।” |