হাওড়ার জয়পুরের কুলিয়া ঘাটে সেতু তৈরির কাজ এখনও শুরু হল না। সেতুটি তৈরি হলে হাওড়ার ‘দ্বীপ’ অঞ্চল বলে পরিচিত ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ উপকৃত হতেন।
এই দু’টি পঞ্চায়েত এলাকা রূপনারায়ণ এবং মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে ঘেরা। স্থলপথে এই দু’টি এলাকার বাসিন্দারা মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। কুলিয়া ঘাট থেকে নৌকায় করে নদী পার হয়ে তবেই বাসিন্দারা মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
এই সমস্যা মেটাতে এখানে একটি সেতু তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু ২০০৬ সালে পরিকল্পনাটি হাতে নেওয়া হলেও সেতু তৈরির কাজ শুরুই হয়নি। এ দিকে, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে স্থল পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা না-থাকায় থমকে গিয়েছে এই এলাকার উন্নয়ন। ভাটোরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসক নেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যাতায়াতের পথ দুর্গম হওয়ার কারণে বার বার চেষ্টা করা হলেও এখানে কোনও চিকিৎসক আসতে রাজি হচ্ছেন না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য যে ভবনটি তৈরি হচ্ছে তার জন্য যে ইমারতি দ্রব্য লাগে সেগুলি নদীপথে বহন করে আনতে হচ্ছে। ফলে ব্যবহত হচ্ছে ভবন তৈরির কাজ। শুধু তাই নয়, নদীপথে রাস্তাঘাট তৈরির উপকরণ আনতে হয়। ফলে সেই সব কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
যাতায়াতের পথ দুর্গম হওয়ায় এক সময়ে এই এলাকায় সমাজবিরোধীদের দাপটে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে বাসিন্দাদের। পুলিশ আসতে দেরি হওয়ায় সমাজবিরোধীদের পক্ষে অপরাধ করে চম্পট দেওয়া সহজ হয়। পরিস্থতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত ভাটোরায় একটি তদন্তকেন্দ্র তৈরি করতে হয় রাজ্য পুলিশকে। তার পর থেকে অবশ্য পরিস্থতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। ২০১০ সালের শেষে তদন্তকেন্দ্রটি উদ্বোধন করতে এসে রাজ্য পুলিশ কর্তারা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছিলেন সেতুটি যাতে অবিলম্বে তৈরি করা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম না-হলে পুলিশের পক্ষে যে অপরাধমূলক কাজকর্ম দমন করা তুলনামূলক ভাবে কঠিন হবে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন পুলিশ কর্তারা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই সময়ে আশ্বাস দেওয়ার হয়েছিল সেতুটির কাজ অবিলম্বে শুরু হবে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গিয়েছে।
সেতুটি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় হাওড়া জেলা পরিষদকে। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, তারা ২০০৭ সালে একটি পাঁচ কোটি টাকার পরিকল্পনা করে সেটি পাঠায় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে।
কিন্তু প্রকল্পটি ত্রুটিপূর্ণ বলে সেটি ফেরত পাঠায় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। পরে ফের ৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গড়ে সেটি জেলা পরিষদ পাঠায় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে। সংশোধিত প্রকল্পটি অবশ্য অনুমোদন করে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। প্রকল্পটিতে টাকা দিচ্ছে ‘নাবার্ড’।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, নাবার্ড-এর কাছ থেকে টাকা পাওয়ার পরে তারা তিন বার টেন্ডার দিয়েছিল। প্রথম দু’বার কোনও ঠিকাদার সংস্থা আগ্রহ দেখায়নি। তৃতীয়বার দু’টি সংস্থা দরপত্র দিয়েছে।
কিন্তু তাতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কাজটি করার জন্য একটি সংস্থা আমাদের যে বাজেট তার থেকে ৬০ শতাংশ বেশি টাকা দর দিয়েছে। অন্য সংস্থাটি দিয়েছে ৪৫ শতাংশ বেশি দর। বাড়তি টাকা আমরা কোথায় পাবো? আমরা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরকে চিঠি লিখে বাড়তি টাকার সংস্থান করতে বলেছি। তাদের সম্মতি পেলেই আমরা কাজটি শুরু করে দেব। কিন্তু পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর এখনও আমাদের কিছু জানায়নি।”
এ দিকে সেতুর কাজটি এখনও শুরু না-হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা হারুণ রশিদ বলেন, “সেতুটিকে কেন্দ্র করে কার্যত ছেলেখেলা হচ্ছে।” |