কল থেকে জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’দল মহিলার ধস্তাধস্তি বেধেছিল। দ্রুত তাতে রাজনীতির রঙ লাগে। সিপিআই এবং তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও মারামারি বেধে যায়। দু’পক্ষের পাঁচ মহিলা-সহ জখম ৭ জন হাসপাতালে ভর্তি। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে আরামবাগের মানিকপাট গ্রামে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নামে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের এক ‘নিরীহ সমর্থক’ পুলিশের লাঠির ঘায়ে জখম হয়েছেন বলে ওই দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তাঁকেও ভর্তি করা হয়েছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে।
এই ঘটনার জেরে পুলিশ কর্মীদের ঘেরাও করেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। পরে আরামবাগের এসডিপিও আকাশ মাগারিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলে ঘেরাও ওঠে। মারামারির ঘটনায় দু’পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেছে থানায়। পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও। কোনও পুলিশ-কর্মীর ‘দোষ’ প্রমাণ হলে ‘বিভাগীয় ব্যবস্থা’ নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানিকপাটের চড়কতলায় পঞ্চায়েতের পানীয় জলের কল সিপিআই সমর্থক প্রদীপ মালিক, চিত্ত মালিকদের বাড়ির সামনে। ওই পরিবার এবং সংলগ্ন কয়েকটি বাড়ির লোকজন কল চত্বর প্রতি দিন পরিষ্কার করেন। এ দিন ভোর ৬টা নাগাদ গ্রামের পাত্র পাড়ার মহিলারা পানীয় জল নিতে এলে ঝামেলার সূত্রপাত। মেয়েদের দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি, চুলোচুলি বেধে যায়। দু’তরফে বেশ কয়েক জন পুরুষও জুটে যায়। শুরু হয় মারামারি। কল চত্বরে সাত সকালে এই ঘটনায় আশপাশের লোকজন জল নিতে পারছিলেন না। তাঁরা খবর দিলে পুলিশ আসে।
|
মারামারির কারণ নিয়ে সিপিআই সমর্থক শ্যামলী মালিক, বাসন্তী মালিকদের বক্তব্য, “আমরা প্রতি দিন দু’বেলা কলতলা পরিষ্কার করি। সকালে সেখানে ঝাঁট দিতে দিতে কারও নাম না করেই বলেছিলাম, এখানে সবাই দাঁতন, নোংরা খাবার-দাবার ফেলে। কল পরিষ্কারের নাম নেয় না কেউ। এ সব নিয়েই খানিক গজ গজ করছিলাম। তা শুনতে পেয়ে পাত্রপাড়ার মহিলারা মারধর শুরু করে। গালিগালাজ করে।” অন্য দিকে, পাত্রপাড়ার আল্পনা পাত্র, সুলেখা পাত্রদের অভিযোগ, “পঞ্চায়েতের কলে আমাদের জল নিতে দিচ্ছিল না মালিকপাড়ার মেয়ে-বউরা। গালাগাল দিচ্ছিল। বলছিল, ওটা নাকি ওদের নিজেদের সম্পত্তি। প্রতিবাদ করলে ওরাই মারধর করেছে।”
পুলিশের লাঠির ঘায়ে লক্ষ্মীকান্ত পাত্র নামে এক তৃণমূল সমর্থক জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, “বলেন, “আমার কিডনির অসুখ। কাজকর্ম করতে পারি না। ঘরের দাওয়ায় বসে মুড়ি খাচ্ছিলাম। এক জন পুলিশ হঠাৎ এসে আমাকে পেটাতে শুরু করল।” লক্ষ্মীকান্তবাবুর স্ত্রী অনিমাদেবীর বক্তব্য, “আমরা পুলিশকে হাতে-পায়ে ধরে বললাম, অসুস্থ মানুষটাকে এ ভাবে মারবেন না। দশ মাস ধরে উনি শয্যাশায়ী ছিলেন। সবে একটু হাঁটাচলা করছেন। কিন্তু কোনও কথাই শুনল না।”
তৃণমূলের স্থানীয় নেতা সুফল চানক বলেন, “পুলিশ আমাদের নিরীহ এবং অসুস্থ সমর্থককে অযথাই মারধর করেছে। অথচ, আমাদের লোকজনের উপরে যারা চড়াও হল, সেই সিপিআই কর্মী-সমর্থকদের গায়ে আঁচড়টিও পড়েনি।” তাঁর দাবি, সিপিআইয়ের ‘সন্ত্রাসের’ প্রেক্ষিতেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ।
অন্য দিকে, স্থানীয় সিপিআই নেতা রঘুপতি বাড়ুই বলেন, “একেবারেই পাড়াগত ঝামেলা। অকারণে তাতে রাজনীতি জড়াচ্ছে তৃণমূল।” তিনি বলেন, “সিপিআই আবার সন্ত্রাস করবে কী! তৃণমূলের সন্ত্রাসেই তো সকলে তটস্থ।”
|