|
|
|
|
সিবিআই তদন্ত চায় ঢাকা |
চিকিৎসা করাতে এসে ছেলেকে খোয়ালেন বাবা |
উত্তম সাহা • শিলচর |
যে প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে হরিদ্বারে ছুটে গিয়েছিলেন, সেই ছেলেকে হারিয়ে এখন দোরে দোরে ঘুরছেন বাংলাদেশের মৌলভিবাজারের ব্যোমকেশ ভট্টাচার্য। এত দিন নিখোঁজ ছিলেন স্ত্রী সঞ্চিতাও। আড়াই মাস আগে এক দিন তিনি গিয়ে ওঠেন সিলেটে, বাপের বাড়িতে। প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন। ছেলের কথা কিছুই বলতে পারছেন না। ১৭ বছরের বিশ্বকান্তির হদিস পাচ্ছে না পুলিশ। তাই এনআইএ অথবা সিবিআই-কে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করানোর জন্য ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন।
ছেলের সন্ধানে ব্যোমকেশবাবু গত ক’মাসে বেশ ক’বার ভারতে এসেছেন। ঘুরে ফিরেছেন হরিদ্বার, লখনউ, দিল্লি। তিনি জানান, ছেলেটির সেরিব্রাল পালসি। জন্ম থেকে বোধবুদ্ধি প্রায় নেই। কথাও বলতে পারে না। খাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছু তাঁদেরই করিয়ে দিতে হয়। গত বছর ১ জুলাই ব্যোমকেশবাবু তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা, ছেলে বিশ্বকান্তি ও মেয়ে আশাপূর্ণাকে নিয়ে হরিদ্বারের পতঞ্জলি ধর্মশালায় ওঠেন। ৮ তারিখে চিকিৎসা শুরু হয় ধর্মশালা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে, রামদেবের যোগ ন্যাচারোপ্যাথি পঞ্চকর্মা ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে। সঞ্চিতা থেকে যান ছেলের সঙ্গে। মেয়ে আশাপূর্ণাকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যান ব্যোমকেশবাবু। ৪ অগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত কথা হয়েছে স্বামী-স্ত্রীর। কিন্তু ৬ অগস্ট থেকে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যোমকেশবাবু যোগ সেন্টারের ফোনে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, ছেলে-সহ সঞ্চিতা ‘রিলিজ’ নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে কোথাও তাঁদের সন্ধান না পেয়ে ব্যোমকেশবাবু যোগাযোগ করেন বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক ও দিল্লির বাংলাদেশ হাই কমিশনে। ৭ সেপ্টেম্বর ফের আসেন হরিদ্বারে। কিন্তু সর্বত্র তন্নতন্ন করে খুঁজেও সন্ধান মেলেনি।
১৮ সেপ্টেম্বর খালি হাতে দেশে ফেরেন ব্যোমকেশবাবু। আর ২৩ সেপ্টেম্বর হঠাৎ সিলেটে বাপের বাড়ি গিয়ে ওঠেন তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা। পরনে ছেঁড়া শাড়ি, কথাবার্তা অসংলগ্ন। তাঁর বিভিন্ন কথা যোগ করলে যা দাঁড়ায়, অন্য আশ্রমে সস্তায় আরও ভাল চিকিৎসা হবে বলে সন্দীপ নামে পতঞ্জলির এক কর্মী ৬ অগস্ট রামদেবের সেন্টার থেকে বিশ্বকান্তিকে ছাড়িয়ে নেয়। ৩৬ হাজার টাকার বিল হয়। সঞ্চিতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে-ই তা মেটায়। পরে পতঞ্জলির কাছাকাছি এক জায়গায় তাদের রাখা হয়। সে দিনই সঞ্চিতার মোবাইল ‘খোয়া যায়’। সন্দীপ তাঁকে জানায়, ব্যোমকেশবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করেই সে সব কিছু করছে। ক’দিন বাদে তার বন্ধু হিসাবে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় সন্দীপ। সে-ই তাদের নিয়ে ট্রেনে করে রওনা হয় ভাল চিকিৎসার জন্য। সঞ্চিতার আবছা মনে পড়ে, তিন জনে মিলে যে স্টেশনে নামেন, তার সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘লখনউ’। স্টেশনেই তিনি আর বিশ্বকান্তিকে দেখতে পাননি, উধাও সেই ছেলেটিও। কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন তিনি। এর পর আর কিছু মনে করতে পারেন না সঞ্চিতা। অসংলগ্ন ভাবে কখনও বলেন, রেলে হাওড়া এসেছিলেন। সেখান থেকে বাসে শিয়ালদহ। পরে বনগাঁর এক আশ্রমে ক’দিন থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে তিনি বাংলাদেশে যান।
হরিদ্বারের সিনিয়র পুলিশ সুপার পুস্কর সিংহ সেলাল জানান, বিশ্বকান্তিকে তাঁরা খুঁজছেন। সন্দীপকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী অফিসার ওমকান্ত ভূষণ জানান, তার জেরা চলছে। অনেকের ধারণা, সন্দীপ কিডনি চোরাই চক্রের পাণ্ডা। লখনউ ও দিল্লিতেও গিয়েছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|