পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, বৃহত্তর কলকাতাতেই ধুমধাম করে ম্যারাপ বেঁধে, লোকজন নিমন্ত্রণ করে এক নাবালিকার বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। রেখা কালিন্দী, আফসানা খাতুনদের মতো সেই নাবালিকা কিন্তু বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়নি। কিন্তু অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরীর ফোন শেষ পর্যন্ত ওই বিয়ে আটকে দিল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ একটি ফোন আসে শিশুদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে। ফোনে কিশোরীকণ্ঠ জানায়, লেকটাউন দক্ষিণদাড়িতে সুপ্রিয়া ওরফে শম্পা মণ্ডল নামে এক নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বুধবার। যে কোনও উপায়ে যেন নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়। তার বলা ঠিকানায় দ্রুত পৌঁছে যান ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। শম্পাদের বাড়িতে গেলে স্থানীয় মানুষের রোষের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। শেষে লেকটাউন থানার পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয় সাড়ে ষোলো বছরের কিশোরীকে।
শম্পা অবশ্য জানিয়েছে, তাকে বিয়ের জন্য কেউ জোর করেনি। কিন্তু নাবালিকার বিয়ে বেআইনি বলে পুলিশ রাতে শম্পা ও তার মা ময়নাদেবীকে থানাতেই রাখে। খবর দেওয়া হয় উত্তর ২৪ পরগনার সমাজ উন্নয়ন কর্তাকে। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হবে। থানার বেঞ্চিতে নীল শাল গায়ে মায়ের কাঁধে মাথা রেখে জড়োসড়ো হয়ে বসেছিল মাধ্যমিক পাশ শম্পা। কানে বিয়ে উপলক্ষে কেনা সোনার দুল। কান্নায় ধরে আসা গলায় বললেন, “আমার বিয়েতে অমত নেই। অনেক কষ্ট করে বাবা-মা আয়োজন করেছিলেন। কেউ জোর করেনি।” মা ময়নাদেবী জানান, বেআইনি জেনেও তাঁরা নাবালিকার বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছিলেন কারণ, মেয়ে ‘বিপথে’ চলে যাচ্ছিল। পাড়ার পরিবেশ খারাপ, অর্থাভাবে মেয়েকে আর পড়াতে পারছিলেন না। এখন কী করবেন? মাথা নিচু করে থাকেন তিনি।
শম্পার বাবা পার্থ মণ্ডলের একটি চায়ের দোকান আছে গোলাঘাটা অঞ্চলে। স্বামী-স্ত্রী মিলে চালান। হতাশ গলায় বললেন, “আমার তিন মেয়ে। শম্পা মেজ। বিয়ে না-দিয়ে উপায় ছিল না। কিন্তু সব আয়োজন জলে গেল। মাছ-মাংস-মিষ্টি সব নষ্ট হবে। পুলিশ যখন বারণ করেছে, বিয়ে তো আর দেওয়া যাবে না।” রানাঘাটের বাসিন্দা কৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল শম্পার। কৃষ্ণ ওড়িশায় ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের কাজ করেন। তাঁর বয়স ২১ বলে পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে। কৃষ্ণ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, বুধবার বিয়ে না-হলেও শম্পার জন্য তিনি অপেক্ষা করবেন। এবং ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর শম্পাকেই বিয়ে করবেন। |