চার বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পরে অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভৌগোলিক পরিচিতি আদায় করে নিল দার্জিলিং চা। ‘জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন’ (জিআই)-এর এই তকমা পাওয়ার অর্থ, শুধু দার্জিলিঙে তৈরি হওয়া চা-ই ইউরোপে দার্জিলিং চা বলে গণ্য হবে। অন্য জায়গার চা মেশানো (ব্লেন্ড) থাকলে তা দার্জিলিং চা বলে বিক্রি করা যাবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই স্বীকৃতি মেলায় বিশেষত রফতানি বাজারে দার্জিলিং চায়ের দাম বাড়বে বলেই আশা সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের।
দার্জিলিং চায়ের কদর গোটা বিশ্বেই। ফার্স্ট ও সেকেন্ড ফ্লাশ দার্জিলিং চায়ের প্রায় পুরোটাই রফতানি হয়, যার বেশিরভাগই যায় জার্মানি-সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে। চা শিল্পের অভিযোগ ছিল, অনেক সময়েই সেখানে দার্জিলিঙের বাইরে তৈরি অন্য (সাধারণত অর্থোডক্স) চা মিশিয়ে দার্জিলিং চা নামে বিক্রি হত। সে ক্ষেত্রে গুণগত মানের সঙ্গে আপস হওয়ায় ‘ব্র্যান্ড’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয় থাকত। আসল দার্জিলিং চায়ের দাম পেতেন না ব্যবসায়ীরা। এক অর্থে, দার্জিলিং চায়ের ঐতিহ্য সুরক্ষিত ছিল না।
সেই সুরক্ষা বলয় পেতেই ২০০৭-এর নভেম্বরে জিআই-এর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর কাছে আর্জি জানায় টি বোর্ড ও দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশন (ডিটিএ)। ডিটিএ চেয়ারম্যান শিব শঙ্কর বাগারিয়া জানান, সেই অনুমোদন মিলেছে। মেশানো চা বন্ধ হলে দার্জিলিং চায়ের চাহিদা ও দাম আরও বাড়বে। তাঁদের হিসেবে, অন্তত ২০% বাড়বে রফতানি। ভারতেও দাম ৫-১০% বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা। ডিটিএ সূত্রে খবর, এতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে দার্জিলিং চা শিল্প। কারণ উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বেশির ভাগ চা বাগানই এখন সমস্যায় জেরবার। বর্ষাকালে যে চা হয়, তার বাজার ফার্স্ট বা সেকেন্ড ফ্লাশ চায়ের মতো নয়। বর্ষাকালীন চায়ের বেশির ভাগই দেশে অনেক কম দামে বিক্রি হয়। এখন জিআই-র স্বীকৃতি মেলায় এই চায়ের চাহিদাও রফতানি বাজারে কিছুটা বাড়বে। কারণ মন্দার জন্য দামি ফার্স্ট ও সেকেন্ড ফ্লাশ চায়ের বাজার আর বেশি বাড়ার কথা নয়। |