শেয়ার বাজার কি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে? নতুন বছরের গোড়ায় অন্তত সেই রকমটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অবস্থার উন্নতি অনেকটাই নির্ভর করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর। তাই আগামী ২৪ জানুয়ারি ঋণ নীতির পর্যালোচনার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।
এক সময়ে বিশেষজ্ঞদের সিংহ ভাগই আশঙ্কা করছিলেন, শেয়ার বাজারের পক্ষে ২০১২ সালটা হবে নিস্ফলা বছর। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি লক্ষ্য করে তাঁদের মধ্যে অনেকেই চলতি বছরেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।
কী দেখে বিশেষজ্ঞদের মতে আশার আলো জেগেছে? এক দিকে দীর্ঘ দিন বাদে উল্লেখযোগ্য ভাবে মূল্যবৃদ্ধির হার কমা, অন্য দিকে গত কয়েক দিনে দ্রুত গতিতে টাকার দাম বৃদ্ধি। এই দুইয়ের যুগলবন্দি ইতিমধ্যেই আকৃষ্ট করে ফেলেছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে। দীর্ঘ দিন হাত গুটিয়ে থাকার পর ওই সব সংস্থা ভারতের বাজারে ফের বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর, গত শুক্রবারই ওই সব সংস্থা প্রায় ৩৫৮ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে।
এ দিকে নতুন বাজেট ২০১২-১৩ সালে দেশের আর্থিক অগ্রগতির হার ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে যাতে ৮ শতাংশ হয় তাপ জন্য কিছু পদক্ষের করবে বলে এই দিন মন্তব্য করেছেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুয়ালিয়া। এই মন্তব্যও লগ্নিকারীদের বিশেষ ভাবে উৎসাহী করে তুলেছে বলে শেয়ার বাজার সূত্রের খবর।
সোমবার এক লাফে সেনসেক্স বেড়েছে ২৭৬.৬৯ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময় সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ১৬৪৬৬.০৫ অঙ্কে। গত দেড় মাসের মধ্যে বাজার বন্ধের সময় সেনসেক্স এতটা উপরে ওঠেনি।
পাশাপাশি হুহু করে বাড়ছে টাকার দর। এই দিনই ডলারের প্রেক্ষিতে টাকার দাম বেড়ে গিয়েছে ৬৪ পয়সা। প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫০.৭৩/৭৪ টাকা। গত দুই মাসের মধ্যে টাকার এটাই সর্ব্বোচ দাম।
বিশেষজ্ঞরা যে আশার উপর নির্ভর করে বুক বেঁধেছেন তা হল, আগামী ২৪ জানুয়ারি ঋণনীতির পর্যালোচনায় কম পরিমাণ হলেও সুদের হার অন্তত কিছুটা কমাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সাম্প্রতিক কালে দেশের শিল্প সংস্থাগুলিতে অগ্রগতির হার থেমে থাকার জন্য দেশ জুড়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেই দায়ী করা হচ্ছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ক্রমাগত সুদের হার বাড়ানোয় শিল্প সংস্থাগুলির মূলধন সংগ্রহের খরচ বেড়ে গিয়েছিল। কমছিল শিল্পোৎপাদনের হারও।
যে জিনিসটির মোকাবিলা করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ওই পথে হাঁটতে হচ্ছিল, সেই মূল্যবৃদ্ধির হার এখন কমে এসেছে। তাই সকলের আশা, এবার সুদের হার কমাতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অবশ্য কেউ কেউ মনে করছেন, আরও একটু দেখে নিয়ে সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ওই সব বিশেষজ্ঞের মতে, সে ক্ষেত্রে প্রথমত সুদের হার বাড়ানো হবে না। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক অন্তত এমন কিছু পদক্ষেপ করবে, যাতে ভবিষ্যতে সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত অন্তত পাওয়া যাবে।
এই দিন ব্যাঙ্ক, রসায়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ সমস্ত ক্ষেত্রের সংস্থার শেয়ার দরই বেড়েছে। বিশেষ করে বেড়েছে রিলায়্যান্স, ইনফোসিস, মারুতি, টাটা স্টিল, এনটিপিসি, এল অ্যান্ড টি, হিন্দালকো ইত্যাদি সংস্থার শেয়ার দর। |