দুর্দিন কাটছে কুমোরপাড়ায়
কুমোরপাড়ার মাটির চাকাগুলোয় ধুলো জমতে শুরু করেছে। স্টিল-প্লাস্টিকের দাপটে মাটির জিনিসপত্রের সে রকম কদর আর মেলে না। অগত্যা সংসার চালাতে অন্য পেশার সন্ধান করতে হচ্ছে মৃৎশিল্পীদের। মাটির ভাঁড়, হাঁড়ি, কলসীর বাজার এখন কোথায়?
জলঙ্গির সাহেবরামপুরের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা অবশ্য বিকল্প খুঁজে পেয়েছেন। বাবা-কাকার রেখে যাওয়া চাঁক ফেলে আধুনিক ডিজাইনের ফুলদানি, নকশা করা প্রদীপ কিংবা লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি তৈরি করে ভিন রাজ্যে পাঠাচ্ছেন তাঁরা। মুম্বই, নাগপুর, দিল্লি, রাজস্থানে বেশ ভালো দামে বিকোচ্ছে তাঁদের হাতের তৈরি বিভিন্ন জিনিস। গ্রামের মৃৎশিল্পীরা জানালেন, একটা সময়ে বাজারের পরিস্থিতি দেখে অন্য কাজ করতে শুরু করেছিলেন অনেকেই। অনেকে পেশার খোঁজে পাড়ি দিয়েছিলেন অন্য রাজ্যেও।
নিজস্ব চিত্র
সাহেবরামপুরের পাল পাড়ার বাসিন্দা গৌরাঙ্গ পাল বলেন, “বছর দেড়েক আগে বাজারের অবস্থা দেখে আমি অন্য পেশার খোঁজে কলকাতা চলে গিয়েছিলাম। সেখানে থাকতে থাকতে জানতে পারি ওখানের কয়েকটি এলাকায় কুমোরেরা আধুনিক ডিজাইনের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে। পুরোনো পেশায় ফিরে যাওয়ার আশায় সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম। প্লাস্টিক-প্যারিসের ধাঁচে মাটির কাজ দেখে মন ভরে যায়। ওখানে কাজ শিখতে শুরু করি। এখন গ্রামে ফিরে এসে ওই কাজই করছি।” তাঁর মতো আরও অনেকেই এই পেশায় ফিরছেন। মাটির বাহারি জিনিপত্রের ভাল দামও পাচ্ছেন। চোঁয়াপাড়া, জলঙ্গিতেও শুরু হয়েছে ছাঁচের তৈরি মাটির মূর্তি, প্রদীপ তৈরির কাজ।
স্থানীয় বাসিন্দা নিতাই পাল বলেন, “পোড়া মাটির তৈরি ফুলদানির এখন খুব কদর। মাটির কাজের যে ওত কদর মিলবে ভাবিনি। আসলে আমরা তো হাঁড়ি-ভাঁড়-থালা-বাটিতেই সীমাবদ্ধ ছিলাম। এখন তো আমাদের হাতের তৈরি ফুলদানি রং করার পরে বিদেশেও যাচ্ছে বিক্রির জন্য।” চোঁয়াপাড়া গ্রামের শিল্পী সুবোধ পাল বছর পনেরো বয়স থেকেই মাটির কাজ করেন। মূলত মূর্তি তৈরি করেন। তিনি বলেন, “এর আগে সারাটা বছর শুধু পুজোর মরসুমের জন্য অপেক্ষা করতাম। ভিন রাজ্যে লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি পাঠআনোর কাজ মেলার পর থেকে বছরভরই কাজের চাপ থাকে। টাকা-পয়সাও ভালই মিলছে।” মৃৎশিল্পীরা জানালেন, তাঁদেরই তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বা টেরাকোটার জিনিসে রং-পালিশ করেন স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী। তবে তাঁরা সকলে মিলে রং-পালিশের কাজটা আয়ত্বে নিয়ে আসতে পারলে বাইরে আরও বেশি দামে তাঁদের তৈরি জিনিস বিকোবে। এখন তাই কুমোরপাড়া আর আগের মতো শুনসান নয়। দিনভর চলে নতুন নতুন জিনিস তৈরি। অনেক ক্ষেত্রেই সময়ে ‘অর্ডার’ পৌঁছে দিতে রাত জেগে কাদ করেন তাঁরা। লক্ষ্মী-গণেশের হাত ধরেই অবশেষে লক্ষ্মী ফিরেছে গ্রামে। ফিরেছে হারাতে বসা মৃৎশিল্পও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.