কর্মী মারা গিয়েছেন একুশ বছর আগে। অবসরকালীন প্রাপ্য চোকানো তো দূর, এত দিনে রাজ্য তাঁর বিধবাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তাঁর স্বামীর ‘সার্ভিস বুক’ই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! যা শুনে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ আদালত অবিলম্বে সুদ-সমেত সমস্ত বকেয়া মেটানোর পাশাপাশি অবিলম্বে এই গাফিলতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিল সরকারকে।
বর্ধমানের কল্যাণেশ্বরীর আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বৈদ্যনাথ মাঝি ১৯৭১-এ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে দারোয়ানের চাকরি পেয়েছিলেন। ১৯৮৯-এ কর্মরত অবস্থায় তিনি মারা যাওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী সুখমণিদেবী অবসরকালীন প্রাপ্য চেয়ে দফতরে আবেদন করেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছে সরকারি চিঠি এসেছে একুশ বছর পরে। আর তাতে জানানো হয়েছে, কবে পেনশন বা অন্যান্য প্রাপ্য মিলবে, সরকার তা বলতে পারছে না। কারণ, বৈদ্যনাথবাবুর ‘সার্ভিস বুক’ হারিয়ে গিয়েছে। সার্ভিস বুক তৈরি হলে প্রাপ্য মেটানোর ব্যবস্থা হবে।
ওই চিঠি পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সুখমণিদেবী। বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ঘটনাটি শুনে একই সঙ্গে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্দেশ দেন, সার্ভিস বুকের যা-ই হোক, সুখমণিদেবীর সমস্ত বকেয়া অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে। সরকারি ব্যাঙ্কে মেয়াদি জমার উপরে যে সুদ পাওয়া যায়, সেই হারে সুদও দিতে হবে। আর সার্ভিস বুক যে ‘হারিয়ে গিয়েছে’, তা জানাতেই একুশ বছর সময় লাগায় বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেছেন, “এই গাফিলতি ক্ষমাহীন।” তাই বিচারপতির নির্দেশ: টাকা মেটানোর পরে দফতরের সচিবকে জানাতে হবে, এতে কার গাফিলতি রয়েছে। এবং সুখমণিদেবীকে সুদ বাবদ দেওয়া টাকা সেই ব্যক্তির প্রাপ্য থেকেই কেটে নিতে হবে। পুরো বিষয়টি সিএজি-কে জানানোর নির্দেশও দিয়েছে আদালত। |