একশো দিন প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ ও টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে খণ্ডঘোষের বেরুগ্রামে। ওই পঞ্চায়েতের কালনা গ্রামে একশো দিনের কাজে হওয়া তিনটি প্রকল্পের ব্যাপারে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই অভিযোগ হাতে পেয়ে বর্ধমানের (দক্ষিণ) মহকুমাশাসক বিডিও-কে তদন্তের নির্দেশ দেন। ব্লক প্রশাসন তিনটি কাজেরই তদন্ত করে। ব্লকের সোশ্যাল অডিট দল তদন্তে নামে। বিডিও একটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করেন নির্মাণ সহায়ক ও দুই সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে। তবে গ্রামবাসীর দাবি, অন্য দু’টি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও দুর্নীতি ধরা পড়েছে মাস পাঁচেক আগের ওই তদন্তে। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গ্রামবাসীরা যে তিনটি প্রকল্পের ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সেগুলি হল, ‘পরিমলের বাড়ি থেকে দত্তপুকুর শ্মশান ঘাট’ পর্যন্ত মোরাম রাস্তা তৈরি, দিঘির পাড় লজুরি পুকুর থেকে দিঘির শ্মশান ঘাট ও কালনা বাইদা নালার সংস্কার তথা কালনা পাকা নালা নির্মাণ প্রকল্প। খণ্ডঘোষের বিডিও রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস থানায় যে অভিযোগ দায়ের করেন গত ২২ জুলাই, তাতে বলা হয়েছিল, মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) এই তিনটি প্রকল্পে অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে তাঁকে তদন্তের নির্দেশ দেন গত ২১ জুন। এই তিনটি প্রকল্পের কাজ নিয়ে বিডিও-র নির্দেশে তদন্ত করেন ব্লকের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং জুনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার। এই তদন্তে প্রমাণ হয়, প্রথম কাজটি অর্থাৎ পরিমলের বাড়ি থেকে দত্তপুকুর শ্মশান ঘাট পর্যন্ত মোরাম রাস্তার কোনও কাজই হয়নি। অথচ এই কাজের জন্য বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত মোট এক লক্ষ ৮০ হাজার ৮৪০ টাকা দিয়েছিল মালপত্র সরবাহারকারীকে। নির্মাণ সহায়ক অনুপম সেন এই মালপত্র পেয়েছেন বলে পঞ্চায়েতকে রিপোর্ট দেন। তাই প্রকল্পের ওই নির্মাণ সহায়ক-সহ দুই সুপারভাইজার হাসানুল্লা হাজি ও ধনঞ্জয় বাগদি সরকারি অর্থ নয়ছয় করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
কালনা গ্রামের বাসিন্দা অনুপ রায়, দেবুপ্রসাদ রায়দের দাবি, “গ্রামে প্রচার করে বাসিন্দাদের এই তদন্তের সময় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। সকলের সামনেই চলে তিনটি প্রকল্প নিয়ে তদন্তের কাজ। তখনই ধরা পড়ে, ওই প্রকল্পের কাজে অর্থ নয়ছয় ঘটেছে।” গ্রামবাসী সুমন চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণকান্ত পণ্ডিতদের দাবি, “গত ২ অগস্ট সোশ্যাল অডিট দলের তদন্তে জানা যায়, দু’নম্বর প্রকল্পে বরাদ্দ করা দু’লক্ষ ৩৪ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ২৬ হাজার টাকার কাজ হয়েছিল। তিন নম্বর প্রকল্পে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার মধ্যে মাত্র তিন লক্ষ সাত হাজার টাকার কাজ হয়েছিল বলেও প্রমাণিত হয় অডিট টিমের তদন্তে। কোনও কাজের মানই সন্তোষজনক নয় বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু বিডিও এই তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই ২২ জুলাই শুধু একটি প্রকল্পের ঘটনায় আর্থিক তছরুপের ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করলেন কী করে?” গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা কার্তিকচন্দ্র রায়ের কথায়, “কেন রিপোর্ট জমা পড়ার আগে একটি প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ হল, বাকি দু’টি প্রকল্পের ব্যাপারে কোনও উচ্চবাচ্য হল না, বিডিও তা আমাদের জানাতে চাইছেন না।” গ্রামবাসীর দাবি, দু’টি প্রকল্পের আর্থিক নয়ছয়ের ব্যাপারে নতুন করে তদন্ত হোক। গ্রামবাসীর তরফে আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “অভিযুক্ত দুই সুপারভাইজারকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে তুলেছিল। কিন্তু নির্মাণ সহায়ককে পুলিশ দীর্ঘদিন গ্রেফতার করেনি। তিনি হাইকোর্টে আগাম জামিন নিয়ে নিয়েছেন।”
তবে বিডিও রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “যে প্রকল্পেটিতে আর্থিক নয়ছয় প্রমাণিত হয়েছে, সেটিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্যগুলিতে এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। শুধু প্রমাণ হয়েছিল, কাজের মান উপযুক্ত নয়। তাই বেরুগ্রামের প্রধান বা এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টকে ‘শো-কজ’ করা হয়েছে। আসলে ওই প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হওয়ার প্রায় দু’বছর পরে গ্রামের মানুষ অভিযোগ করেন। তত দিনে আর্থিক দুর্নীতি প্রমাণ করার মতো কিছু মেলেনি।” |