পুরসভা নকশা অনুমোদন করা সত্ত্বেও ‘জমি মাফিয়ার’ হুমকির জেরে বাড়ি তৈরি করা যাচ্ছে না। এমনই অভিযোগ আসানসোলের বাসিন্দা এরিক লুইসের। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই অভিযোগে দু’বার চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়েছে। তদন্ত চলছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফ্যাক্স বার্তা মারফত পাঠানো অভিযোগপত্রে এরিক জানিয়েছেন, ২০১০-এর জানুয়ারিতে আসানসোলের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লোয়ার চেলিডাঙায় বাড়ির কাছেই মোট ৬ কাঠা জমি কেনেন তিনি। সে বছরের অগস্টে পুরসভা থেকে নিজেদের নামে ‘মিউটেশন সার্টিফিকেট’ এবং নভেম্বরে বাড়ির নকশার অনুমোদন পান। কিন্তু ২০১১ সালের এপ্রিলে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করতে গেলে আশপাশের কয়েক জন বাসিন্দা বাধা দেন। তাঁরা ওই জমি নিজেদের বলে দাবি করতে থাকেন। এরিকের দাবি, প্রভাত যোসেফ ঠাকুর নামে এক ব্যক্তির মদতেই এমন বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই হুমকির বিষয়টি তিনি পুলিশের কাছে জানান। কিন্তু কোনও প্রতিকার না মেলায় ৮ জুন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানান। পরে ১৪ জুন ফের এক বার সেই অভিযোগপত্র প্রতিনিধি মারফত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠান।
এরিক জানান, এর পরে ১২ জুলাই আসানসোল দক্ষিণ থানার দক্ষিণ ফাঁড়ির এএসআই শ্যামলকুমার মণ্ডল তদন্ত করতে তাঁর বাড়িতে আসেন। এরিকের দাবি, ওই এএসআই তাঁকে এ ব্যাপারে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যান। তার পরে আর পুলিশের দিক থেকে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে ২০১১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দর সঙ্গে দেখা করেন। অজয়বাবু তাঁকে তৎকালীন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ভি সুলেমনের কাছে পাঠান। তিনি আসানসোল দক্ষিণ থানার তৎকলানী ওসি অর্ঘ্য মণ্ডলকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। তাঁর দায়ের করা অভিযোগের অনুলিপি অর্ঘ্যবাবু আসানসোল দক্ষিণ থানার এএসআই হেমন্ত দত্তের কাছে দেখতে চাইলে তা হেমন্তবাবু দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ এরিকের। তিনি জানান, এর পরে অর্ঘ্যবাবু শহরে অশান্তির কারণে তাঁকে দক্ষিণ থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পরে ওই থানার দায়িত্বে এসে ওসি অশোক বসু দু’পক্ষকেই জমির কাগজ নিয়ে ২০১১ সালের ১৬ অক্টোবর থানায় ডেকে পাঠান। সেখানে বিবাদী পক্ষ কোনও কাগজ দেখাতে পারেননি। এরিক জানান, ওসি-র নির্দেশমতো তার পরের দিন তাঁরা বাড়ির কাজ শুরু করতে গেলে জনা পঞ্চাশ দুষ্কৃতী লাঠি, বাঁশ নিয়ে চড়াও হয়। এরিক আরও জানান, এর পরে তাঁরা এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিলে দুষ্কৃতীরা সেখানেও গিয়েও তাঁদের মারধর করে। মোবাইল ফোন ও টাকাও ছিনিয়ে নেয়। তাঁর আরও অভিযোগ, রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁরা ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ভি সুলেমানের কাছে যান। তিনি আসানসোল দক্ষিণ থানার ওসি-র কাছে অভিযোগ করতে বলেন। এরিকের দাবি, অভিযোগ নেওয়া হলেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ওই জমিতে কাজ শুরু তো দূরের কথা, বাস করতেই ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন প্রভাত যোসেফ ঠাকুর। তাঁর দাবি, “আমার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগাযোগ নেই। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে।” রাজ্যের আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “কোনও প্রোমোটার জোর করে জমি নিতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জমি সংক্রান্ত বিবাদ হলে আদালতে বিচার হবে।” আসানসোল দক্ষিণ থানার ওসি অশোক বসু বলেন, “এরিকের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়েছে। এক অভিযুক্ত অগ্রিম জামিনও নিয়েছেন। এক প্রতিবেশীর আবেদনের ভিত্তিতে ওই জায়গাটিতে ১৪৪ ধারা জারি আছে।” |