ফের ‘বেনিয়ম’ বিএসইউপি-তে
ইসিএলের জমিতে বাড়ি, অভিযুক্ত পুরসভা
ফের বেসিক সার্ভিসেস ফর আরবান পুওর (বিএসইউপি) প্রকল্পে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বাড়ি তৈরির অভিযোগ উঠল আসানসোল পুরসভার বিরুদ্ধে। রাজ্য সরকারের লোকাল অডিট দফতরের অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলের জমিতে ওই প্রকল্পে বেশ কিছু বাড়ি গড়েছে পুরসভা। বিষয়টি নজরে আসতেই অভিযোগ দায়ের করেছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, “যে জমিতে বাড়িগুলি হয়েছে সেটি স্থানীয় এক ব্যক্তির।”
বাম আমলের আর্থিক দুর্নীতি খুঁজে বের করতে রাজ্যের বিভিন্ন দফতর ও স্বশাসিত নিগমগুলিতে অডিটের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট পরিচালিত আসানসোল পুরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সাধারণ অডিট শুরু হয়েছে।
আসানসোরে দামড়ায় এই বাড়িগুলি নিয়েই বিতর্ক। ছবি: শৈলেন সরকার।
আর সেখানেই পরপর বেনিয়মের প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের লোকাল অডিট দফতর। গত ৭ ডিসেম্বর আসানসোল পুরসভার বিএসইউপি প্রকল্পের কাজগুলির সাধারণ অডিট শুরু হয়েছে। সহকারী অডিট অফিসার তপন বারিক একটি রিপোর্টে উল্লেখ করেন, পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের দামড়া এলাকায় বিএসইউপি প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের একাধিক বাড়ি গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। ৮টি ব্লকে ভাগ করে বাড়িগুলি তৈরি হচ্ছে। চারতলা বিশিষ্ট প্রতিটি ব্লকে ১৬টি করে দু’কামরার বাড়ি হবে। আনুমানিক খরচ ২৪ কোটি টাকা। সেগুলি বানাবার জন্য তিন জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ইতিমধ্যে চারটি ব্লক দোতলা ও চারটি ব্লকে একতলা পর্যন্ত গড়া হয়েছে।
অডিট রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, এই বাড়িগুলি বানানো হয়েছে রাস্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা ইসিএলের জমিতে। কিন্তু সে জন্য ইসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জমি হস্তান্তরের কোনও চুক্তি করা হয়নি। ফলে শহরের গরিবদের জন্য এই প্রকল্পটি ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি খাস জমি বা পুরসভার নিজস্ব জমিতে বিএসইউপি প্রকল্পের বাড়িগুলি বানাতে হয়। শহরের বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষজনকে এই বাড়ির মালিকানা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ইসিএলের জমিতে এই বাড়িগুলি তৈরি হওয়ায় যেহেতু তার মালিকানা পুরসভার হাতেই নেই, স্বভাবতই প্রাপকেরাও তা পাবেন না। ফলে যে ২৮টি পরিবারের এই বাড়ি পাওয়ার কথা তাঁরা ভবিষ্যতে বিপাকে পড়বেন। অবৈধ ভাবে জমি দখল করে নির্মাণের অভিযোগে আবাসিকদের উচ্ছেদ করতে পারেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নিলাদ্রী রায় জানান, না জানিয়ে তাঁদের জমিতে পাকা নির্মাণ তুলেছে আসানসোল পুরসভা। তিনি বলেন, “আমরা পুরসভাকে কোনও জমি দিইনি। এ ব্যাপারে আমরা আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।” তিনি আরও জানান, দামড়া এলাকাটি শ্রীপুর এরিয়ার অন্তর্গত। কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখার পরে এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সুজিত সরকারকে জানান। সুজিতবাবু এরিয়ায় সার্ভেয়ার পাঠিয়ে মাপজোক করে নিশ্চিত হন, জমিটির একাংশ ইসিএলের। তার পরেই পুরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
এ দিকে, নিয়ম ভেঙে ইসিএলের জমিতে সরকারি প্রকল্পের টাকায় গরিবদের বাড়ি বানানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি তৃণমূল মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তেওয়ারির দাবি, “ইসিএলের জমিতে আমরা কোনও নির্মাণ করিনি। যে জমিতে বাড়িগুলি হয়েছে সেটি স্থানীয় এক ব্যক্তির। তিনি নিঃশর্তে জমিটি পুরসভাকে দিয়েছেন।” ওই ব্যক্তি কে? তিনি যে জমি দিয়েছেন সে সবের নথিপত্র পুরসভায় জমা আছে কি না জানতে চাওয়া হলে জিতেন্দ্রবাবু বলেন, “আমরা সে সব পুরসভায় জমা করে দেব।”
অডিট রিপোর্টে এই বেনিয়মের অভিযোগ ওঠা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিরোধী শিবির। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায় বলেন, “বেনিয়ম তো অডিটেই ধরা পড়েছে। আমরা আর কী বলব? সরকারি টাকা এ ভাবে নষ্ট করা উচিত নয়।” আসানসোলে তৃণমূলের জোটসঙ্গী কংগ্রেসের জেলা কমিটির সম্পাদক তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলামেরও কটাক্ষ, “ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা এ ভাবে নষ্ট করা ঠিক হচ্ছে না। এতে গরিবেরা বিপদে পড়বেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.