তার খোঁজে ‘হন্যে’ হয়ে ঘুরেছেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা। কিন্তু তাঁদের নাকের ডগা দিয়েই সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করল সংগ্রামপুর চোলাই-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশা ওরফে নূর ইসলাম ফকির।
আদালত সূত্রের খবর, সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আইনজীবী জাকির হোসেন মিরের সঙ্গে ডায়মন্ড হারবারের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মৌ চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির হয় সে। বিচারক তাকে আদালতের লকআপে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। এত কাণ্ডের পরে খবর যায় গোয়েন্দাদের কাছে। পরে সিআইডি-র দলও আদালতে আসে। বেলা সওয়া তিনটে নাগাদ ফের তাকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদশাকে ১৪ দিনের সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
গত ১৪ ডিসেম্বর মগরাহাটের সংগ্রামপুরে বিষমদ খেয়ে মারা যান উস্তি, সংগ্রামপুর, মন্দিরবাজার এলাকার ১৭২ জন মানুষ। এর পরেই উঠে আসে খোঁড়া বাদশার নাম। উস্তি থানার সংগ্রামপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাদশার ঠেক থেকেই ওই মদ সরবরাহ করা হয়েছিল বলে পুলিশের অভিযোগ। ঘটনার পরেই পালিয়ে যায় বাদশা, তার দুই স্ত্রী এবং শাগরেদরা। ২৪ ডিসেম্বর রাতে ক্যানিং থেকে গ্রেফতার হয় বাদশার স্ত্রী শাকিলা ওরফে নূরজাহান এবং বক্কর-সহ তিন শাগরেদকে। কিন্তু তাদের জেরা করেও বাদশার হদিস মেলেনি। ফেরার তার আর এক স্ত্রী ফিরোজা বিবিও। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ঘটনার পর অজমের পালিয়েছিল বাদশা। দিন কয়েক আগে এ রাজ্যে ফিরেছে সে।
কে এই বাদশা?
পুলিশ সূত্রের খবর, খোঁড়া বাদশা ওরফে বাদশা খোকন আগে ডাকাত ছিল। কয়েক বার পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে সে। বছর কয়েক আগে ডাকাতি ছেড়ে চোলাই ভাটি খোলে সে। মগরাহাট এলাকায় শ’পাঁচেক ভাটির মালিক বাদশা। সঙ্গী বক্করকে নিয়ে কয়েকশো ঠেকও চালাত সে। এ ছাড়াও, ওই এলাকায় আরও যে সব দাগি অপরাধী চোলাইয়ের ঠেক খুলেছিল, তারাও ছিল বাদশার ছত্রছায়ায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোচারণ এলাকায় কালো সিরাজ, নূর আলম, খোকন সর্দার, নজরুলরাও বাদশার সঙ্গী বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঘটনার পর বাদশার রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা নিয়েও সরকার এবং বিরোধী পক্ষের চাপানউতোর শুরু হয়। বিধানসভায় সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা চোলাই-কাণ্ডে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কে এই বাদশা, তা দলীয় সূত্রে খোঁজ নিন। সব তথ্য জানালে আঁতকে উঠবেন।” বাদশা যে সিপিএমের লোক, মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিত ছিল সে দিকেই। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাম আমলে বাদশা সিপিএমে ছিল। কিন্তু ক্ষমতা বদলের পর সে তৃণমূলে ভিড়েছিল।
এ দিন কী ভাবে পুলিশের চোখ এড়িয়ে আদালতে ঢুকল বাদশা? আদালত চত্বরে গোটা ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ আদালত চত্বরে চলে এসেছিল বাদশা। ক্রাচে ভর দিয়েই তার পরিচিত আইনজীবী জাকিরের অফিসে যায়। সেখান থেকেই ওই আইনজীবীকে নিয়ে এজলাসে হাজিরা দেয় বাদশা। ডায়মন্ড হারবার থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে আদালত চত্বরে ঘুরে বেড়াল এই ফেরার অভিযুক্ত, অথচ পুলিশ কেন জানতেই পারল না? এ ব্যাপারে জেলার পুলিশ-কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এ দিন বাদশা এসেছে শুনে আদালতে চলে আসেন এক দল তৃণমূল সমর্থক। বাদশার শাস্তি চেয়ে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। লকআপ থেকে এজলাসে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীদের একাংশ বাদশার গায়ে জুতোর মালা ছোড়েন। পরে সরকারি কৌঁসুলি নীতীশ দেব বলেন, “শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বাদশার আইনজীবীরা জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন। সিআইডি বাদশাকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারক।” আদালত কক্ষের বাইরে বাদশা বলে, “আমি কোনও দোষ করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” বিকেলে সিআইডি-র দল তাকে ভবানী ভবনে নিয়ে আসে।
|
১৪ ডিসেম্বর ২০১১ |
বিষমদে ১৭২ জনের মৃত্যু |
১৫ ডিসেম্বর, ২০১১ |
মৃতের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা |
১৬ ডিসেম্বর, ২০১১ |
তদন্তভার নিল সিআইডি |
২৪ ডিসেম্বর, ২০১১ |
বাদশার এক স্ত্রী ও তিন শাগরেদ ধৃত |
৩ জানুয়ারি, ২০১২ |
বাদশার বাড়ি থেকে রাসায়নিক উদ্ধার |
১৬ জানুয়ারি ২০১২ |
আদালতে আত্মসমর্পণ বাদশার |
|