|
|
|
|
নিরীহ খুনে সায় ছিল না বলেই আত্মসমর্পণ, দাবি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
রাগ ছিল সিপিএমের উপরে। তাই মাওবাদী স্কোয়াডে নাম লেখানো। দলমায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়া। প্রথমে মাওবাদীদের সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্বে। পরে ঘাটবেড়া প্লাটুনের ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্বে। একের পর এক সিপিএম নেতা খুন। পুলিশকে এলাকায় ঢুকতে বাধাদান। সব মিলিয়ে ১১টি নির্দিষ্ট ঘটনায় অভিযুক্ত পুরুলিয়ার দুন্দুড়ি গ্রামের লম্বোদর মাঝি ওরফে ইভেন্ট ওরফে নান্টুর বিরুদ্ধে। জাগরী বাস্কের স্বামী রাজারাম সরেনের ‘শিষ্য’ লম্বোদরও রাজারামের দেখানো পথেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চেই ওই অত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটে।
এই আত্মসমর্পণের ‘কারণ’ ব্যাখ্যা করতেই সোমবার মেদিনীপুরে পুলিশের তরফে লম্বোদরদের হাজির করা হয়েছিল সাংবাদিকদের সামনে। লম্বোদর বক্তব্য, “মাওবাদীরা অনেক নিরীহ মানুষকে খুন করেছে। প্রতিবাদ করেছি। বলত, আমি নাকি কিছু বুঝি না। নিরীহদের মৃত্যুদণ্ড মানতে পারিনি। তাই আত্মসমর্পণ করেছি।” লম্বোদরের সঙ্গেই করণ কৈবর্ত, ভজহরি মাহাতো ও সুখদেব ওরফে বাদল মাহাতোও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। মেদিনীপুরে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলেন তাঁরাও। আর ছিলেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ। শুরুতেই সাংবাদিক বৈঠকের কারণ বোঝাতে আইজি বলেন, “বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে ভিভিআইপি-রা থাকায় আত্মসমর্পণকারীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলার সুযোগ হয়নি। ওঁদের কথা শোনানোর জন্যই সাংবাদিক বৈঠক।” |
 |
সাংবাদিক বৈঠকে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
সেই সঙ্গে আইজি-র দাবি, “লম্বোদরদের মতো আরও অনেকেই আত্মসমর্পণ করার জন্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।”
পুলিশের দাবি, লম্বোদর ২০০৬ সাল থেকে মাওবাদী স্কোয়াডের সঙ্গে যুক্ত। লম্বোদরের কথায়, “আমি তৃণমূলকে ভালবাসতাম। এক সময়ে বলরামপুরে এক পঞ্চায়েতের নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীও হই। তার পরেই সিপিএম আরও বেশি করে অত্যাচার শুরু করে। তখনই রাজারামের সঙ্গে দেখা। রাজারাম বলেছিল, মাওবাদীরা গরিব মানুষের পক্ষে লড়াই করে, সিপিএমের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, এলাকার উন্নয়নের দাবিতে সোচ্চার হয়। ওই কথা বিশ্বাস করেই মাওবাদীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম।” শেষে মোহভঙ্গ।
বাঘমুণ্ডির মাদলা গ্রামের করণ কৈবর্ত ওরফে সঞ্জয় ওরফে মহেশ ওরফে বিকল্প ছিলেন আদিবাসী-মূলবাসী জনগণের কমিটির অন্যতম নেতা। ২০০৯ সালে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ২০১০ সালে ছাড়া পাওয়ার পরে ফের মাওবাদী-দলে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধেও ১০টি অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়। বাগবিন্ধায় ৭ জন খুনের ঘটনা, রাজেন মাহাতো খুন ও কোবরা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়েও করণ জড়িত বলে পুলিশের দাবি। ভজহরি মাহাতো ওরফে ভরতের নামেও বীরসায় গুলি চালানো-সহ ২টি মামলা ছিল। সুখদেব মাহাতো ওরফে বাদল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির বেলিয়াশোল গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, সুচিত্রা মাহাতোর ‘শিষ্য’ এই সুখদেব। ২০০২-এ ‘জনযুদ্ধ’-এ যোগ। একটি খুনের মামলায় এক সময়ে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ছাড়া পাওয়ার পরে ফের মাওবাদী-দলে যোগ দেন। সুখদেবের ‘উপলব্ধি’, “কোনও দলই ভাল নয়। মাওবাদীরা খুনের রাজনীতি করছে। আমরা সাধারণ মানুষ। সাধারণ ভাবেই বাঁচতে চাই। তাই আত্মসমর্পণ।” এই ‘সার-কথা’ বুঝতে এত সময় লাগল কেন? তাঁর কথায়, “বুঝেছিলাম অনেক আগেই। কিন্তু ওই দল থেকে সহজে বেরোনো যায় না। সুযোগ খুঁজছিলাম।” |
|
|
 |
|
|