কোথাও আক্রমণ, কোথাও বিদ্রূপ ধোনিদের
এক দিনের সিরিজেও গুঁড়িয়ে দেব, হুঙ্কার অস্ট্রেলীয় কোচের
স্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতীয় ক্রিকেটের লজ্জার আত্মসমর্পণের পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এক দিকে চলছে ভারতীয় ক্রিকেটকে আক্রমণের পালা, অন্য দিকে অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যমের তীব্র বিদ্রূপের মুখেও পড়তে হচ্ছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলকে।
এ সবের মাঝেই আবার ভারতকে হুমকি দিয়ে রাখলেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ। পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, এক দিনের সিরিজেও ধোনির দলকে গুঁড়িয়ে দেবেন তাঁরা। মিকি আর্থারের কথায়, “শেন ওয়াটসনকে আমরা অ্যাডিলেড টেস্টের জন্য পাব কি না, জানি না। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে সুস্থ ওয়াটসনকে পেয়ে যাওয়ার আশাই করছি। আর সেটা হলে ধোনিদের কপালে দুঃখ আছে। আমরা ভারতকে স্রেফ গুঁড়িয়ে দেব।”
টেস্ট সিরিজে এত সহজে ৩-০ জয় এসে যাবে ভাবতে পারেননি আর্থার। বলছিলেন, “আমি ভাবতেই পারিনি তৃতীয় টেস্টের পর স্কোরলাইনটা এ রকম দাঁড়াবে।” এর পর ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির জন্য পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। “ভারতের উচিত কয়েক জন তরুণ প্রতিভাকে চিহ্নিত করা। তার পর তাদের আস্তে আস্তে জাতীয় দলে সুযোগ করে দিতে হবে।”
সোমবার আমদাবাদে পুড়ল টিম ইন্ডিয়ার পোস্টার। ছবি: রয়টার্স।
এ তো গেল অস্ট্রেলীয় কোচের হুঙ্কার আর প্রেসক্রিপশন। অন্য দিকে অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যম কিন্তু খোলাখুলি আক্রমণ করেছে ধোনি এবং বাকি ব্যাটসম্য্যানদের। কোথাও লেখা হয়েছে, “ভারতীয় টিমের স্তম্ভরা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে”। কোথাও বা লেখা হয়েছে, “ভারতের পারফরম্যান্স এত খারাপ ছিল যে সাংবাদিক সম্মেলনে তো মাইকেল ক্লার্ককে প্রশ্ন করা হয়, আপনার কি মনে হচ্ছিল যে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলছেন?” অধিনায়ক ধোনি সম্পর্কে লেখা হয়েছে, তাঁকে মাঠের মধ্যে এগিয়ে এসে নিজে থেকে কোনও ভূমিকা নিতে দেখা যায় না। লেখা হয়েছে, “ভারতীয় ক্রিকেটাররা কোটি কোটি টাকা পকেটে পুরলেও বড় কোনও আত্মত্যাগ করতে চায় না।”
আক্রমণ আর বিদ্রূপের মাঝে আবার সাসপেন্ড হওয়ার কারণে অ্যাডিলেড টেস্টে নেই ধোনি। তাঁর বদলে নেতৃত্ব দেবেন বীরেন্দ্র সহবাগ। অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যমের চাঁছাছোলা প্রশ্ন: “সহবাগের নিজেরই যা ফর্ম ও ভারতীয় ক্রিকেটকে কী ভাবে টেনে তুলবে? সহবাগের সিরিজে গড় হল ১৯। ও তো নিজের সমস্যার সমাধানই করতে পারছে না তো দলের সমস্যা মেটাবে কী করে?” ভারতীয় ক্রিকেটের ডামাডোলের ছবিটা নানা দিক দিয়ে ফুটে উঠেছে। গত কাল প্রচারমাধ্যমে ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসনকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছিল, “অন্য দেশ ভারতে এলে আমরাও হারিয়ে দেব।” আজ শ্রীনিবাসন এ কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি এ ধরনের কোনও মন্তব্য কোথাও করিনি।”
টেস্ট ক্রিকেটে দু’নম্বর জায়গাটা ইতিমধ্যেই হারিয়েছে ভারত। এ বার সামনে ০-৪ হারের দুঃস্বপ্ন। স্বাভাবিক ভাবেই তোপের মুখে পড়েছেন ধোনি এবং তাঁর দল। প্রাক্তন ক্রিকেটাররা এক হাত নিচ্ছেন। এমনকী ক্রিকেটারদের পোস্টার, ছবি পোড়ানোর ঘটনাও ঘটছে ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সঞ্জয় মঞ্জরেকর যেমন টুইট করেছেন, “ব্যাটসম্যান ধোনির আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছে...ভারতের দুর্ভাগ্য হল ধোনিকে সঙ্গ দিচ্ছে আরও কয়েক জন ব্যাটসম্যান।” এই ‘আরও কয়েক জন’ ব্যাটসম্যানের মধ্যে ভিভিএস লক্ষ্মণ আছেন। ক্রিকেট মহলের একাংশ মনে করছে, লক্ষ্মণ হয়তো শেষ টেস্ট খেলে ফেলেছেন পারথে। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিংয়ের এই বিপর্যয়ের কারণ কী? আইপিএলের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অতিরিক্ত মনোনিবেশ করা? এই তত্ত্ব আবার মানতে চান না সুনীল গাওস্কর। তিনি বলছিলেন, “আইপিএলের জন্য ব্যাটসম্যানদের টেকনিক খারাপ হয়ে গিয়েছে, এটা মানা যায় না। অনেক আন্তর্জাতিক ব্যাটসম্যানই তো আইপিএল খেলে। তাদের টেকনিক তো খারাপ হয়নি।” তা হলে এখন কী করা উচিত? গাওস্করের বক্তব্য, “টিম ম্যানেজমেন্টের উচিত ধোনির সঙ্গে বসা। হাতে আট দিন সময় আছে। প্রয়োজন হলে অ্যাডিলেডে এক জন ব্যাটসম্যান বসিয়ে অশ্বিনকে খেলানো যেতে পারে।”
তবে ভারতের এই বিপর্যয় কিন্তু ক্রিকেট মাঠের বাইরেও প্রভাব ফেলছে। যেমন মোটামুটি দশ দিনে তিন টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে আর্থিক দিক দিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে হয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে। টিকিট বিক্রির টাকা কমে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, টিভি-র দর্শকের সংখ্যাও দ্রুত কমছে। আশঙ্কায় পড়েছে বিভিন্ন স্পনসরও। এক কোম্পানির সেলস কর্তা: বলছিলেন, “কিছু সময় ধরে যদি ক্রিকেট থেকে দর্শকরা চোখ সরিয়ে নেন, তা হলে খেলাটার ব্র্যান্ড ভ্যালু কমে যেতে বাধ্য।”
সব মিলিয়ে ধোনিদের বিপর্যয় শুধু ভারতীয় ক্রিকেটকেই সঙ্কটের মুখে ফেলেনি, ক্রিকেটের ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’-কেও চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.