বয়স সংক্রান্ত বিতর্কে এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন সেনাপ্রধান বিজয়কুমার সিংহ। এই প্রথম সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে গেলেন দেশের কোনও সেনাপ্রধান।
বেশ কিছু দিন ধরেই বয়স ও অবসরের সময় নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছিল জেনারেল সিংহের। সেনাপ্রধানের দাবি, তাঁর জন্ম ১৯৫১ সালের ১০ মে। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার সার্টিফিকেটে সেনাপ্রধানের এই জন্ম তারিখেরই উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বক্তব্য, জেনারেল সিংহের প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯৫০ সালের ১০ মে। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে ভর্তির সময় জেনারেল সিংহ ইউপিএসসি পরীক্ষা দেন। সেই ফর্মে ১৯৫০ সালের তারিখটির উল্লেখ রয়েছে। সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ২০১২-র ৩১ মে জেনারেল সিংহের অবসর নেওয়ার কথা।
বয়স-বিতর্কের গোড়া থেকেই সেনাপ্রধান বারবার বলেছেন, পুরো বিষয়টি তাঁর ‘সম্মান’ ও ‘মর্যাদার’ সঙ্গে জড়িত। আদতে হরিয়ানার বাসিন্দা এই সেনা অফিসারের বাবা এবং ঠার্কুদাও সেনাবাহিনীতে যুক্ত ছিলেন। বিজয় কুমারের সৈনিক জীবনও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। তিনি ১৯৭১-এর যুদ্ধে প্যারা-কম্যান্ডো রেজিমেন্টের অফিসার হিসেবে সামিল হয়েছিলেন। এহেন পেশাদার সৈনিক আইনি লড়াইয়ের পথে যাওয়ায় তীব্র অস্বস্তিতে ইউপিএ সরকার।
সেনাপ্রধান ভিকে সিংহ |
প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির কাছে আগে দু’বার নিয়মমাফিক নিজের বক্তব্য জানিয়েছিলেন সেনাপ্রধান। কিন্তু অ্যান্টনি সেই বক্তব্য মানতে রাজি হননি। অ্যাটর্নি জেনারেল জি ই বাহনবতীর মত চেয়েছিল কেন্দ্র। তিনি জানান, কেন্দ্রের অবস্থানই ঠিক।
সেনাপ্রধান আদৌ কোর্টে যাবেন না বলে জল্পনাও শুরু হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী, অবসরের পরে তাঁকে কোথাও রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রদূতের পদে নিয়োগের সম্ভাবনার কথাও শোনা গিয়েছিল। জেনারেল সিংহ নিজে কোনও সম্ভাবনার কথাই উড়িয়ে দেননি। জানিয়েছিলেন, এটা তাঁর একান্ত ‘ব্যক্তিগত’ বিষয়। তিনি মামলা করায় তাঁর উত্তরসূরি স্থির করার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিল।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সেনাপ্রধানের তরফে রিট পিটিশন দায়ের করেন তাঁর আইনজীবীরা। শীর্ষ আদালতে এই মামলাটি লড়বেন আইনজীবী ইউ ইউ ললিত।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা সেনাবাহিনীর তরফে এখনও এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। সরকার আগে রিট পিটিশনের বক্তব্য খতিয়ে দেখতে চায় বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তাঁর কথায়, “এটা যিনি মামলা করেছেন তাঁর ও আদালতের ব্যাপার।” কিন্তু বিরোধী শিবির এবং সরকারের একাংশের মতে, অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে এই সমস্যার মোকাবিলা করা উচিত ছিল।
বিজেপি প্রকাশ্যেই জানিয়েছে, এই ঘটনা ইউপিএ সরকারের অপদার্থতার প্রমাণ। সরকারের অন্দরেও কয়েক জন মনে করেন, আরও ধৈর্যের সঙ্গে জেনারেল সিংহের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। সেনাবাহিনীর সঙ্গে নির্বাচিত সরকারের সম্পর্কে অবনতি নিয়ে এখন উত্তাল প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। বার বার সেনা অভ্যুত্থানে সরকারের পতন হয়েছে সে দেশে। কিন্তু বরাবরই নির্বাচিত সরকারের আদেশ মেনেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। তাই কেন্দ্র ও সেনাপ্রধানের বিরোধ আদালতের আঙিনায় না এলেই ভাল হত।
কর্মরত অবস্থায় মামলা করলে জেনারেল সিংহকে বরখাস্ত করা হতে পারে বলেও কোনও কোনও সূত্রে আভাস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই পদক্ষেপ করলে কেন্দ্র আরও চাপে পড়বে কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল দীপক কপূরের কথায়, “কোনও সেনাপ্রধান ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে কোর্টে গেলে তা দেশ ও বাহিনীর পক্ষে শুভ নয়।” |