দলের মধ্যেই প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ৮ জেলায় বিশেষ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে হল ফরওয়ার্ড ব্লককে! একের পর এক জেলা বিশেষ সম্মেলন করতে বেঁকে বসার পরিপ্রেক্ষিতেই দলের রাজ্য নেতৃত্বকে পিছু হঠতে হল বলে ফব সূত্রের খবর। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে নতুন নির্দেশিকা জারি করে জেলা কমিটিগুলিকে জামিয়ে দেওয়া হয়েছে, আপাতত ওই সম্মেলন হচ্ছে না। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে এই বাম শরিক দল বহু দিন জর্জরিত হলেও বিশেষ সম্মেলনে গিয়ে এমন নাস্তানাবুদ হওয়ার নজির সাম্প্রতিক কালে নেই!
ফব-র অন্দরে পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো যে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে বৈঠক করতে দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস গিয়েও সুরাহা করতে পারেননি। দেবব্রতবাবুর সঙ্গেই ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য হাফিজ আলম সৈরানি ও জয়ন্ত রায় সম্প্রতি বৈঠক করতে গিয়েছিলেন বারাসতে। গোড়ায় তাঁদের পরিকল্পনা ছিল জেলা কমিটির সঙ্গেই আলোচনায় বসার। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বই লিখিত ভাবে রাজ্য নেতৃত্বকে জানান, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর আগে কথা না-বলে জেলা কমিটির সঙ্গে বসা যাবে না। কার্যক্ষেত্রে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে বৈঠকও মিনিট কুড়ির বেশি স্থায়ী হয়নি! জেলা নেতৃত্বের বড় অংশের প্রতিবাদের মুখে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াও স্থগিত রাখার কথা বলে আসতে হয় দেবব্রতবাবু, জয়ন্তবাবুদের।
প্রবীণ রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ দায়িত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দেওয়ায় জয়ন্তবাবুকে ‘গুরুত্ব’ দেওয়ার জন্যই ফব-র রাজ্য নেতৃত্ব ‘তাড়াহুড়ো’ করছেন, এমন অভিযোগই উঠছে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলি থেকে। সম্মেলন নিয়ে ২৫ জানুয়ারি রাজ্য ও হুগলি জেলা নেতৃত্বের বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু হগলির তরফে জানানো হয়েছে, তারা বৈঠকে বসতে রাজি নয়! হুগলির মতো বিশেষ সম্মেলনের বিষয়ে লিখিত ভাবে আপত্তি তুলেছে হাওড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান ও জলপাইগুড়ি। বর্ধমান ও জলপাইগুড়ি, এই দু’টি জেলাকেই সাংগঠনিক ভাবে দু’টি ভাগে ভেঙে নিয়েছে ফব। তাতেও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব মেটানো যায়নি। ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “নির্দিষ্ট পদ্ধতি না-মেনে কাজ করতে গিয়ে যে ঘটনা ঘটল, তাতে দলেরই সম্মানহানি হল।”
ফব সূত্রের খবর, তাঁর পুরনো দল জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্যদের ফব-য় অন্তর্ভুক্তির যে তালিকা জয়ন্তবাবু দিয়েছেন, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে কয়েকটি জেলা নেতৃত্বের। তাতে সমস্যা ঘনীভূত হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বৈঠকে এই নিয়ে জয়ন্তবাবুর উপস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠেছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। তবে ফব-রই একাংশের মতে, বিশেষ সম্মেলন নিয়ে এই ‘জটিলতা’র জেরে ফের প্রমাণিত হল প্রবীণ অশোকবাবুর নেতৃত্বই ‘অপরিহার্য’। |