জল প্রকল্প আছে। কিন্তু সেই প্রকল্প থেকে মানুষের কাছে জল পৌঁছে দেওয়ার পরিকাঠামো নেই।
এই সমস্যার মোকাবিলায় এ বার গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পুর দফতর। রাজ্যের শহর এলাকায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দিতেই এই যৌথ প্রয়াস। দুই দফতরের কাজের ভাগাভাগিটাও স্পষ্ট। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর জল প্রকল্প তৈরি করবে। আর বাড়ি বাড়ি সেই জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা করবে পুর দফতর।
রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমাদের দফতর জল প্রকল্প তৈরি করছে। কিন্তু সেই প্রকল্প থেকে জল কী ভাবে মানুষের বাড়িতে পৌঁছবে, সেই পরিকাঠামোই তৈরি হচ্ছে না। তাই আমরা শহর এলাকায় পুর দফতরের সঙ্গে মিলে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” দার্জিলিং এবং সংলগ্ন এলাকায় জল পৌঁছে দিতে তৈরি হয়েছিল বালাসন নদী জল প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্প থেকে কী ভাবে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ও মিরিকে জল পৌঁছবে, তা ঠিক হয়নি। তাই উদ্বোধনই হয়নি প্রকল্পটির। জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করানোর কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু মানুষ যত ক্ষণ না প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন, তত ক্ষণ উদ্বোধন করা যাবে না।”
সমস্যার সমাধান করতে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে সুব্রতবাবু কথা বলেন। তার পরেই জট খোলে। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রীও। ঠিক হয়, রাজ্যের যেখানে যেখানে সম্ভব, সেখানেই দুই দফতরকে কাজ করতে হবে একযোগে। পাইপলাইন তৈরির জন্য দুই দফতর একসঙ্গে দরপত্র ডাকবে। দুই দফতর মিলে কোথায় কোথায় জল সরবরাহ করা হবে, তার অগ্রাধিকার-ভিত্তিক একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় রাখা হয়েছে আর্সেনিক আক্রান্ত আটটি জেলার পুরসভাগুলিকে।
এখন কলকাতা বাদে রাজ্যের ১৮টি জেলার ১২৬টি পুরসভা এলাকার মধ্যে মাত্র ছ’টিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সরাসরি নদীর জল শোধন করে সরবরাহ করে। এমন পুরসভার সংখ্যা বীরভূমে একটি, মুর্শিদাবাদে তিনটি, পুরুলিয়ায় একটি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে একটি। পরিকল্পিত ভাবে জল সরবরাহের কোনও কাজই হয়নি, রাজ্যে এমন পুরসভার সংখ্যা ৩৩। পুর দফতরের তত্ত্বাবধানে জল সরবরাহ করা হয় ৪৫টি পুরসভা এলাকায়। কলকাতা-সহ বাকি ৪৪টি পুরসভায় জল সরবরাহ প্রকল্প চালায় কেএমডি, কেএমডব্লিউএসএ এবং এডিডিএ।
কেএমডিএ অঞ্চলের বাইরের পুর এলাকায় ভূস্তরের উপরের জল অর্থাৎ নদীর জল শোধন করে গ্রামীণ এলাকায় সরবরাহের কাজ করছে জনস্বাস্থ্য দফতর। এ বার তাতে পুর দফতরও যোগ দেবে এবং গ্রাম সংলগ্ন শহরে বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ করবে পাইপলাইনের মাধ্যমে। জনস্বাস্থ্য দফতর কেন্দ্রীয় গ্রামীণ জল সরবরাহ মন্ত্রকের আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে। নতুন ব্যবস্থায় তার সঙ্গে পুর দফতরের জন্য নেহরু মিশনের টাকাও যুক্ত হবে বলে জানান পুরসচিব। |