সরকারের কাজ নিয়ে শাসক ও বিরোধী শিবিরের চাপানউতোর অব্যাহত। ফের সরকারি কাজের সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
শনিবারের পরে রবিবারও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সূর্যবাবুর বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন। ফলে, সমালোচনা এবং ‘রিজয়েন্ডার’ সমানে চলছে!
নতুন সরকারের ২৪০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরে কী কী কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তার এ দিন তার খতিয়ান চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসাবে একটি আলোচনাচক্রে এ দিন বাগুইআটিতে সূর্যবাবু বলেছেন, “১০০ দিন হওয়ার পরে মোটা বই বার করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ৭৫% কাজই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে তাঁদের। কিন্তু ২০০ দিনের পরে তো বই পেলাম না! ২৪০ দিন হয়ে গেল, বই কোথায়?” এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কটাক্ষ’ করে সূর্যবাবু বলেন, “সরকার হয়েছে ১৮০০ দিনের (৫ বছর) জন্য। ১০০ দিনেই ৭৫% কাজ করে ফেললে বাকি দিনগুলোয় কী করবেন?” ৮ মাসের কাজের ‘সরকারি’ খতিয়ানের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন সূর্যবাবু।
টাকার অভাবে অনেক কাজ করা যাচ্ছে না বলে মুখ্যমন্ত্রী বারবার যে দাবি করছেন, তার পাল্টা হিসাবে সূর্যবাবু বলেছেন, “টাকা নেই বলছেন। কিন্তু দেড় কোটি টাকা খরচ করে ফেললেন দিঘার সৈকত উৎসবে!” সরকারের কাজের সমালোচনা না-করে মুখ্যমন্ত্রী যে বিরোধীদের ‘চুপ’ করে থাকতে বলছেন, সেই প্রসঙ্গ টেনে সূর্যবাবুর মন্তব্য, “জরুরি অবস্থায় তো লোকে চুপ করে থাকতে বলে!”
মুখ্যমন্ত্রীর ‘নির্দেশে’ শনিবারই তৃণমূল ভবনে শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু সূর্যবাবুর সমালোচনার ‘জবাব’ দিয়েছিলেন। শিল্পমন্ত্রীর এ দিনের ‘জবাব’, “সূর্যবাবু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলছেন। আসলে সংবাদে থাকার জন্যই উনি এ সব বলছেন!”
শুধু বিরোধীরাই নয়, সংবাদমাধ্যমে কেন সরকারের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সেই প্রশ্নও তুলেছে সরকার পক্ষ তথা প্রধান শাসক দল। গঙ্গাসাগরে লট-৮ জেটিঘাটে সাগরমেলা উপলক্ষে এ দিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে পার্থবাবু বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরানোর চেষ্টা করছেন। প্রতিটি জেলায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল বানানোর পরিকল্পনা করছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবার খোলনলচে বদলানোর চেষ্টা করছেন। সেই সময় ছোট ছোট কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা তুলে ধরে কিছু সংবাদমাধ্যম প্রচার চালাচ্ছে।” তাঁর বক্তব্য, “আমাদের মনে
হচ্ছে, কোনও ব্যবসায়ী স্বার্থান্বেষী মহল সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনারা একটু ভেবে দেখুন!”
একা হাতে অন্য আরও কিছু দফতরের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য দেখভাল করতে পারছেন না বলে সূর্যবাবু যে মন্তব্য করেছিলেন, এ দিনও ফের তার প্রতিবাদ করেন পার্থবাবু। তিনি বলেন, “এ রাজ্যে সাড়ে ৮ কোটি লোকের অধিকাংশই সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরে নির্ভরশীল। সেখানে ছোট দু-একটা ঘটনাকে তুলে ধরে সংবাদমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রচার চালাচ্ছে।” পার্থবাবুর ক্ষোভ, “একটা সময় ছিল, যখন সরকারি চিকিৎসার নামে লোক ঠকানো হত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্যের হাল ফেরানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবায় নতুন দিশা দেখাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পণ। অথচ তারাই ব্যবসায়িক স্বার্থে এমন প্রচার চালাচ্ছে!”
সূর্যবাবু অবশ্য এ দিনও মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কটাক্ষ’ করে বলেছেন, “উনি এমন কথা বলেন যে, না হেসে থাকতে পারি না! রবীন্দ্র রচনাবলি উনি জারোয়া ভাষায় অনুবাদ করবেন বলেন বা সিধু-কানহু-ডহরের কথা বলতে গিয়ে ডহরবাবু বলে ডাকেন। এতে না-হেসে পারি না! আমি হাসলেই দোষ?” সরকারের কাজের সমালোচনা করার পাশাপাশি আত্মসমালোচনাও করেছেন সূর্যবাবু। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ে নিজেদের সাংগঠনিক ‘দুর্বলতা’ অন্যতম কারণ ছিল, তা স্বীকার করে সূর্যবাবু বলেন, “নরম মাটিতেই বিড়াল আঁচড় দেয়। আমাদের আত্মসমালোচনা করে দেখতে হবে, কেন মাটিটা নরম হয়েছিল?” নরম মাটিকে ফের শক্ত জমিতে পরিণত করতে সূর্যবাবুর দাওয়াই, “আমাদের পিঠ মানুষের দিকে পেতে দিচ্ছি। আমাদের পিঠটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। পিঠটা পরিষ্কার করুন।” একই সঙ্গে তাঁর ‘সতর্ক-বার্তা’, “পিঠ পরিষ্কার করতে গিয়ে ঝামা-ইট দিয়ে ঘষে রক্তারক্তি করবেন না!” |