নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চার্চিল-২ (লালরিন্ডিকা, হেনরি)
মোহনবাগান-৩ (ওডাফা পেনাল্টি-সহ হ্যাটট্রিক)
|
ওডাফা! ওডাফা! ওডাফা!
চিৎকারটা খুব চেনা মারগাওয়ের ফতোরদা স্টেডিয়ামের। গোয়ার সব ফুটবলপ্রেমীর। কিন্তু রবিবার বিকেলের ‘ওডাফা-ওডাফা’ চিৎকার আগের থেকে একেবারে আলাদা। সমর্থন বদলে গিয়েছে হা-হুতাশ আর গালাগালে।
গত মরসুম পর্যন্ত চার্চিলের ঘরের ছেলে ওডাফা ওকোলি লাল জার্সি গায়েই গোটা ভারত দাপিয়ে বেড়াতেন। গোল করতেন। হ্যাটট্রিক ছিল মোহনবাগানের বিরুদ্ধেও। রবিবার চাকা ঘুরল উল্টো দিকে। পুরনো ক্লাব চার্চিলের গোলেই ওডাফা বল পাঠালেন তিন বার। অধিনায়ক ওডাফা দলকে তুলে দিলেন আই লিগ টেবিলের দু’নম্বরে। ডেম্পোর সঙ্গে মোহনবাগানের ফারাক তিন পয়েন্টের। সেই সঙ্গে গোয়ার মাঠে গত কয়েক বছরের হিসাবে সেরা সাফল্য পেল মোহনবাগান। আই লিগের সেরা অ্যাওয়ে ম্যাচ জয় তো বটেই! আর ১৪ গোল করে ওডাফা এখন র্যান্টির (১৫) ঠিক পরেই।
হ্যাটট্রিকের জ্বালাও অবশ্য পোহাতে হল ওডাফাকে। ম্যাচ শেষে যখন চার্চিলের পুরনো ফুটবলার বন্ধুদের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে দেখা করতে যান ওডাফা তখনই তাঁর উপর চড়াও হন পুরনো ক্লাবের কিছু কর্তা এবং সমর্থকরা। ওডাফার উদ্দেশে চলতে থাকে গালাগাল। তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান মোহনবাগান কর্তারা। চার্চিল অখুশি রেফারিংয়েও। গোয়ার ক্লাবটির কর্তা চার্চিল আলেমাওয়ের দাবি, তিনটি পেনাল্টি থেকে তাঁরা আজ বঞ্চিত। সেই অভিযোগ অবশ্য ধোপে টিকছে না। |
ওডাফা: পুরনো দলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক। |
সাধারণত দেখা যায়, গোয়ার মাঠে বাংলার ক্লাব বরাবরই ছন্দ হারায়। রবিবার শুরুতে আচমকা গোলে পিছিয়ে গেলেও মোহনবাগান কিন্তু ম্যাচের রাশ রেখেছিল নিজের হাতে। এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান বজায় রাখতে পেরে খুশি মোহন-টিডি সুব্রত ভট্টাচার্য। বলছিলেন, “গোয়ার দু’টো ম্যাচ থেকে যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট নিয়ে যেতে পারব ততই ভাল। একটা থেকে পুরো তিন পেলাম। দেখা যাক পরেরটায় কী হয়!”
প্রথম ৪৫ মিনিটে জুয়েল রাজা আর ওডাফার দুর্দান্ত দু’টি শট ছিটকে গেল ক্রসপিস থেকে। ১৮ মিনিটে রহিম নবির ক্রসের নাগাল পাননি গৌরমাঙ্গি। নবি তখন নিজের লেফট ব্যাকের জায়গা থেকে পৌঁছে গিয়েছেন রাইট আউটে। ওডাফা সেই ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে গোলে রাখেন।
সুব্রত ভট্টাচার্য শুরু করেছিলেন ৪-১-৪-১ ছকে। ডিফেন্সিভ ব্লকার শুভাশিস রায়চৌধুরি। ড্যানিয়েল জেলেনি আর রাকেশ মাসি মাঝমাঠে। ড্যানিয়েল বেশ কয়েক বার বেটোর পা থেকে বল কেড়ে নিলেন। ঘরোয়া লিগের ‘ডার্বি’ থেকেই হয়তো পেয়েছেন দরকারি আত্মবিশ্বাস। আর রাকেশ দেখার মতো কিছু পাস বাড়ালেন। জুয়েল রাইট উইংয়ে নজর কাড়লেন দারুণ স্কিলে। বাঁ দিকের উইং বরং খুব সচল ছিল না। স্নেহাশিস থমকে থাকায়। যিনি খোলস ছেড়ে বেরোলেন বিরতির পর। এ দিনই আই লিগে অভিষেক হল মনীশ ভার্গবের। জয়ের আনন্দের সঙ্গে একটি কাঁটাও রইলকার্ড সমস্যায় সৌভিক নেই পরের ম্যাচে।
ম্যাচের চার মিনিটে লালরিন্ডিকা লালতের গোলটা যখন হল মোহনবাগান রক্ষণ তখনও আড়মোড়া ভাঙেনি। সুরকুমার আর রাকেশের ধীর নড়াচড়ার সুযোগেই জোরালো শট লালতের। এর পর মাঠের দখল নিয়ে নিলেন ওডাফারা। চার্চিল ফের দৌড়তে শুরু করল বিরতির পর। আর ১-৩ পিছনোর পর তো ভয়ঙ্কর। তবু তার মধ্যেই ব্যারেটো দু’টি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। জুয়েলের পায়ের পেশিতে টান ধরায় বিরতির পরই মাঠে ব্যারেটোকে নামাতে বাধ্য হন সুব্রত। ৭৩ মিনিটে একার চেষ্টায় দলকে ২-১ এগিয়ে দেন ওডাফা। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে গৌরমাঙ্গি এবং নবীনকে বোকা বানিয়ে বাঁ পায়ে শট নিয়েছিলেন তিনি। তার মিনিট চারেক পরই বক্সের মধ্যে ব্যারেটোকে পিছন থেকে ট্যাকল করেন ডেনজিল ফ্র্যাঙ্কো। পেনাল্টি থেকে হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেন ওডাফা।
উল্টো দিক থেকে তখন হেনরি-এন ডি ওপারা-বেটোরা আছড়ে পড়ছেন মোহন-রক্ষণে। কোনও শট সংগ্রাম তালুবন্দি করছেন, তো কোনওটা বেরিয়ে যাচ্ছে পোস্ট ঘেঁষে। তার মধ্যেই ২-৩ করেন হেনরি। পাঁচ মিনিট ইনজুরি টাইমের একেবারে শেষে বিনীশ বালনের দুরন্ত শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচান সংগ্রাম। ম্যাচের সেরা ‘সেভ’ অবশ্যই। তিন পয়েন্ট তো নিশ্চিত হল তাতেই। মোহনবাগানের দু’নম্বরে থাকাও।
মোহনবাগান: সংগ্রাম, সুরকুমার (মনীশ), কিংশুক, আনোয়ার, নবি, শুভাশিস, জুয়েল (ব্যারেটো), রাকেশ (সৌভিক), ড্যানিয়েল, স্নেহাশিস, ওডাফা।
|
আই লিগে প্রথম ছয় |
দল |
খেলা |
জয় |
ড্র |
হার |
গোল |
পয়েন্ট |
ডেম্পো |
১৪ |
১০ |
০ |
৪ |
৩৪-১৩ |
৩০ |
মোহনবাগান |
১৪ |
৮ |
৩ |
৩ |
২৮-১৯ |
২৭ |
ইস্টবেঙ্গল |
১৪ |
৮ |
৩ |
৩ |
২৫-১২ |
২৭ |
চার্চিল |
১৩ |
৮ |
২ |
৩ |
২৪-১২ |
২৬ |
পুণে এফসি |
১৪ |
৬ |
৫ |
৩ |
২১-১৮ |
২৩ |
প্রয়াগ ইউনাইটেড |
১৪ |
৫ |
৭ |
২ |
২২-১৪ |
২২ |
|