নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং ডানকান ফ্লেচার। বিপর্যস্ত ভারত অধিনায়ক এবং কোচ। দু’জনকেই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেওয়া হল, তোমাদের ওপর আমরা আস্থা হারিয়েছি। রবিবার চেন্নাইয়ে দল নির্বাচনী বৈঠক হল অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় এক দিনের টুর্নামেন্টের দল বাছার জন্য। খুব স্বাভাবিক ছিল, টেলিকনফারেন্সে ধোনি এবং ফ্লেচার সেই বৈঠকে পারথ থেকে যোগ দেবেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচকেরা বৈঠক সেরে নিলেন অধিনায়ক এবং কোচের সঙ্গে কোনও কথা না বলেই।
অতীতে এ রকম সন্ধিক্ষণে ভারতীয় বোর্ড হস্তক্ষেপ করেছে। আর বোর্ড চুপচাপ থাকা মানে বুঝে নিতে হবে নির্বাচকেরা যা করতে চাইছেন তার প্রতি তাদের সায় আছে। এ দিন ঠিক সেটাই ঘটল। নির্বাচকেরা অধিনায়ক বা কোচের সঙ্গে আলোচনা না করে টিম করছেন জেনেও বোর্ড সেই সিদ্ধান্তকে পাল্টানোর চেষ্টা করেনি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির যে যোগ্য বিকল্প এই মুহূর্তে নেই সেটা বৈঠকের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু তাঁর অধিনায়কত্বের প্রতি খুব আস্থাব্যঞ্জক কথাবার্তা বৈঠকে হয়েছে, বলা যাচ্ছে না। টিমের পরপর হারের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বরং দীর্ঘ বৈঠকে একাধিক বার উত্তপ্ত আবহাওয়া তৈরি হয়েছে বলেও খবর। বৈঠক থেকে বেরিয়ে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত প্রকাশ্যে বলেওছেন, ভারতীয় দলের বিপর্যয়ে তাঁরা সবাই খুব হতাশ। |
একদিনের দলে মনোজ। ফিরলেন ইরফান পাঠান। |
অন্য দিকে, বোর্ড-নির্বাচকেরা অপেক্ষা করতে চাইছেন দ্রাবিড় এবং লক্ষ্মণ কী করেন। সভায় এক জন বলেন যে, তাঁর কাছে খবর রয়েছে দু’জনেই অ্যাডিলেড টেস্টের পর অবসর নিতে পারেন। যা শুনে সিদ্ধান্ত হয়, তা হলে অ্যাডিলেড পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখা যাক। ওঁরা নিজেরা অবসর না নিলে তখন ভাবা যাবে।
বাংলার অশোক দিন্দা টিমে ঢুকতে ঢুকতেও ছিটকে গেলেন ইরফান পাঠানের সুইং বোলিংয়ের কাছে। সভায় উত্তারঞ্চল নির্বাচক মোহিন্দর অমরনাথ বলেন, অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা পেসটা ঠিক খেলে দেবে। ওদের মারতে হবে সুইং দিয়ে। ইরফানের যেটা আছে। পূর্বাঞ্চল নির্বাচক রাজা বেঙ্কট ততক্ষণে একটা লড়াই জিতে উঠেছেন। তিনি বা বাংলার ক্রিকেটভক্তরা কেউ যে লড়াইয়ের আঁচই পাননি। মনোজ তিওয়ারিকে নিয়ে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ঘরের মাঠে শেষ এক দিনের সিরিজে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মনোজ। তার পরেও এ দিন নির্বাচকদের একাংশ বেশি করে বলতে থাকেন অজিঙ্ক রাহানেকে নিয়ে। রাজা তখন উত্তেজিত সওয়াল জোড়েন, ইতিমধ্যেই চার জন ওপেনার নেওয়া হয়েছে। সচিন, সহবাগ, গম্ভীর এবং প্রয়োজনে পার্থিব পটেল। আবার এক জন ওপেনার কেন নেওয়া হবে? মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে মনোজের যাওয়াটাই ঠিক বিচার হবে। প্রধান নির্বাচক শ্রীকান্ত তাঁকে সমর্থন করায় মনোজের রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যায়। সেই অস্ট্রেলিয়াতেই তিনি আবার যাচ্ছেন, যেখান থেকে অভিষেকে তাঁকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল। কিন্তু দিন্দার জন্য আপ্রাণ লড়েও রাজা বাকিদের মানাতে পারেননি। বাংলার পেসারের জন্য সুযোগের দরজা খুলতে পারে একমাত্র যদি কেউ চোটের কবলে পড়েন। তখন পরিবর্ত হিসেবে তিনিই যাবেন অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপের পর ফের এক দিনের ক্রিকেটে ফিরছেন সচিন তেন্ডুলকর এবং জাহির খান। জাহিরের ফিটনেস নিয়ে এখনও নির্বাচকেরা একশো শতাংশ নিশ্চিত নন। সেই কারণে তাঁরা দলে পাঁচ পেসার রেখেছেন। স্থানীয় ক্রিকেটমহলে অনেকের মনে হচ্ছে, দিন্দা এ বার রঞ্জিতে যা বল করেছেন তাতে পাঁচ পেসারের মধ্যে তাঁর জায়গা হওয়া উচিত ছিল।
সতেরো জনের দলটি এ রকম: মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (অধিনায়ক), বীরেন্দ্র সহবাগ (সহ-অধিনায়ক), গৌতম গম্ভীর, সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়না, রবীন্দ্র জাডেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, উমেশ যাদব, প্রবীণ কুমার, বিনয় কুমার, মনোজ তিওয়ারি, রাহুল শর্মা, পার্থিব পটেল, জাহির খান এবং ইরফান পাঠান। |