নির্বাসিত অধিনায়কের বদলে অ্যাডিলেডে ঋদ্ধিমান
আমিই সবচেয়ে বড় অপরাধী, স্বীকারোক্তি ধোনির
দত্যাগ না করলেও চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করে নিচ্ছেন নিজেই। জানিয়ে দিচ্ছেন, নেতা হিসেবে এই হারের দায় সম্পূর্ণ তাঁর। কিন্তু একই সঙ্গে স্লো ওভার রেটের দায়ে অভিযুক্ত অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠেয় চতুর্থ টেস্টে খেলা হচ্ছে না মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। তাঁর বদলে অধিনায়কত্ব করবেন বীরেন্দ্র সহবাগ। ধোনি অধিনায়ক না থাকায় অ্যাডিলেড টেস্টে খেলবেন বাংলার উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা। এর আগে বাঙালি উইকেটকিপার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলেছেন প্রবীর সেন (খোকন)।
পারথ টেস্টে স্লো ওভার রেটের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মদুগলের ধোনিকে এক টেস্ট নির্বাচন দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ গত এক বছরে স্লো ওভার রেট নিয়ে দ্বিতীয় বার আইনভঙ্গ করলেন ধোনি। কারও কারও অবশ্য ধারণা, এতে ভালই হয়েছে। ০-৪-এর লজ্জা তাঁর ঘাড়ে আর থাকছে না। পারথে ম্যাচ শেষে ধোনি অবশ্য কোনও রকম অজুহাতের রাস্তায় যাননি। বলেছেন, “অধিনায়ক হিসেবে অবশ্যই নিজেকে দায়ী করতে চাই। অবশ্যই আমিই সবচেয়ে বড় অপরাধী। হ্যাঁ, নিজেকেই দায়ী করছি।”

অবিলম্বে আত্মসমালোচনা দরকার
• সুনীল গাওস্কর: আমার মনে হয় অবিলম্বে অনেক কিছু নিয়ে আত্মসমালোচনা দরকার। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট পরিকাঠামোটাকে দেখতে হবে। কী ধরনের উইকেটে খেলা হয়, কী ভাবে ম্যাচ দেওয়া হয়-- সব কিছু খুব ভাল করে খতিয়ে দেখা দরকার। সামনে এগোতে দেশের সেরা ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কদের কাজে লাগানো হোক। নির্বাচন কমিটিকে কতগুলো বদল করতেই হবে। যাদের খারাপ সময় চলছে তাদের বিশ্রাম দিতে হবে।
• অজিত ওয়াড়েকর: অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশে টেস্ট ক্রিকেটকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় কারণ এটাই আসল ক্রিকেট। সেখানে ভারতে ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি অগ্রাধিকার পায়।
• বিষেণ সিংহ বেদী: প্রত্যেকটা টেস্ট হারই খুব বেদনাদায়ক। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আইপিএল শুরু হলেই সবাই এ সব ভুলে যাবে। ভারতীয় বোর্ড খেলাটার চরম ক্ষতি করে দিয়েছে।
• দিলীপ বেঙ্গসরকর: বিদেশে এই অধঃপতন তত দিন অব্যাহত থাকবে যত দিন সেই সব রাজনীতিবিদ খেলাটার প্রশাসনের শীর্ষ পদে থাকবে যাদের ক্রিকেট সম্পর্কে কোনও প্যাশন, আগ্রহ বা জ্ঞান নেই।
• কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত: আমরা একেবারে ভেঙে পড়েছি। অস্ট্রেলিয়ায় যে ভাবে হারলাম, অত্যন্ত হতাশাজনক। চেন্নাইয়ে বসে আমার পক্ষে বলা শক্ত ঠিক কী কারণে এই বিপর্যয়। তবে মূল কারণটা নিশ্চয়ই ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিক ব্যর্থতা। যা ছিল ইংল্যান্ড সফরেও।
• সঞ্জয় মঞ্জরেকর: নির্বাচকদের এখন খুব ভেবেচিন্তে ক্রিকেটার বাছাই করতে হবে। সেই ধরনের ক্রিকেটারদের বাছতে হবে যারা দেশের বাইরে পেস ও বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। এক পা এক পা করে সামনের দিকে এগোতে হবে।
• মাইকেল ভন: আইপিএলের আগে এবং গাঙ্গুলির নেতৃত্বে প্রায় এই একই দল নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে ভারত জিতেছিল আর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ড্র করেছিল... সেই সময় দলটা অসম্ভব লড়াকু ছিল!! সেই লড়াইটা কোথায় গেল? হারার মধ্যে কোনও লজ্জা নেই কিন্তু যে ভাবে হারছে... কোনও রকম লড়াই ছাড়াই যে ভাবে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে সেটা সত্যিই দুশ্চিন্তার কারণ।
• ক্রিস গেইল: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্ট খেলার জন্য ভারতীয় বোর্ডের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছি! কপালে থাকলে অস্ট্রেলীয়দের বিরুদ্ধে ব্যাট চালিয়ে একটু ফাজলামি করার সুযোগ পেয়ে যাব!

সুনীল গাওস্কর-সহ গোটা দেশ যখন সিনিয়রদের ছেঁটে ফেলার দাবিতে সরব, তখন ধোনি কিন্তু তাঁদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। “এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, আর সেটা খুব সাবধানে নিতে হবে। সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেটা জুনিয়রদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে।” স্বীকার করে নিচ্ছেন, ব্যর্থতার প্রধান কারণ স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান তুলতে না পারা। তাঁর সাফাই, “ইংল্যান্ডে এবং এখানে খেলা টেস্টগুলো খতিয়ে দেখবেন, আমরা যথেষ্ট রান স্কোরবোর্ডে তুলিনি। যে রানটা বিপক্ষকে দু’বার আউট করার জন্য বোলারদের দিতে হয়। টেস্ট ক্রিকেটে একটা বা দুটো খারাপ ইনিংস হতে পারে। কিন্তু টানা সাতটা টেস্ট ধরে খারাপ ব্যাটিং মেনে নেওয়া কঠিন।”
এতেই শেষ নয়। ধোনি মেনে নিচ্ছেন, এটাই ভারতীয় ক্রিকেটের চরম দুঃসময়। এবং এর জন্য দায়ী ব্যাটসম্যানরা। “আমি যা ক্রিকেট দেখেছি তার মধ্যে এটাই যে সবচেয়ে খারাপ সময়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ধারাবাহিক ভাবে আমরা ব্যর্থ। চোট-আঘাতের জন্য বোলিংয়েরও ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু মনে হয় না বোলিং নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার কারণ আছে।” জাতীয় দলের কিংবদন্তিদের বাদ দেওয়াটা যে একটা পদ্ধতি, কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বলছেন বারবার। “কিংবদন্তিদের বাদ দেওয়াটা একটা পদ্ধতি। আমি এটা নিয়ে ভাবিনি। তবে ক্রিকেটার থেকে বোর্ড, সবাইকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। লক্ষ্যটা হবে সেরা সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিছু লোক চেয়েছিল বিরাটকে ছেঁটে ফেলতে। কিন্তু বিরাট এই টেস্টে দুর্দান্ত ব্যাটিং করল।” ধোনির আরও ব্যাখ্যা, সিনিয়রদের ভবিষ্যৎ সিরিজের শেষেই ঠিক হতে পারে। “সিনিয়ররা নিজেরা কী ভাবছে সেটাও খুব জরুরি। মনে হচ্ছে ওদের কী ভাবে বাদ দেওয়া যেতে পারে তা নিয়েই সবাই ভাবছে। সব সিনিয়রকে এক সঙ্গে বাদ দেওয়া যায় না।” নিজের অধিনায়কত্ব সম্পর্কে ধোনি বলছেন, “ট্যাকটিক্যালি নিজেকে দোষ দিচ্ছি না, কারণ স্ট্র্যাটেজি কার্যকর করার ব্যাপারে সবাই জড়িত থাকে। বোলাররা যদি ফিল্ডমতো বল করতে না পারে, কিছু করার থাকে না।”
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছেন, ধোনি আর টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে ততটা সিরিয়াস নন। তা নিয়ে ধোনি বলছেন, “একমাত্র আমি জানি আমি কতটা সিরিয়াস। অন্যদের পক্ষে সেটা বিচার করা কঠিন। কিন্তু ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক হিসেবে নিজের পারফরম্যান্সের ছবিটা যদি দেখি, চিন্তার কারণ থাকছে। আমি বর্তমান নিয়ে ভাবি। যেটা করতে হবে, সেটা করি। যেটা বিদেশে শেষ সাতটা টেস্টে করে দেখাতে পারিনি। দেশে ফিরে হয়তো আবার আমরা ভাল খেলব। কিন্তু দেখতে হবে, দেশের বাইরে গেলে কী ভাবে আমরা ভাল খেলতে পারি।”
অস্ট্রেলিয়ায় বিপর্যয় যে টিমের সবাইকে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে, বলছেন ধোনি। “আমাদের সবারই খারাপ লাগছে। দলের সবাই পেশাদার হলেও দিনের শেষে আমরা মানুষও। আমাদেরও আবেগ আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের জীবনে এটা হয়েই থাকে।” কোচ ডানকান ফ্লেচারের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেননি ধোনি। বরং বলেছেন, “উনি এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম অভিজ্ঞ কোচ। ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে অনেক সুক্ষ্ম জিনিস জানেন। উনি কোচ হওয়ার পরে আমরা দুটো সিরিজ হেরেছি বলেই ওঁকে দোষ দিতে হবে, তার কোনও মানে নেই। কোচ তো আর মাঠে গিয়ে খেলে না!”
সাংবাদিক সম্মেলনে কেউ ধোনির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ম্যাচের পর মন হাল্কা করতে টিম কি গো-কার্টিং করবে? ধোনি পাল্টা বলেন, “হয়তো অন্য কোনও খেলাও কাজ করতে পারে!”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.