পারথে আবার অপমানজনক হার এবং এ বার মাত্র সাতটা সেশনে। খারাপ থেকে ভারতের পারফরম্যান্স নিয়মিত ভাবে আরও খারাপ হয়ে চলেছে। বিদেশে টানা সাতটা হারের পরে বলতেই হচ্ছে, এর চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কখনও হয়নি। আমি অন্তত কোনও ভারতীয় দলকে মনে করতে পারছি না যারা বিদেশে টানা সাতটা টেস্ট হেরেছে। প্রত্যেকটা টেস্টের আগে সমর্থক, মিডিয়া এবং ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সবাই আশা করেন এই টেস্টটা থেকে চাকা ঘুরবে, কিন্তু দিনের শেষে পারফরম্যান্স আরও হতাশাজনক হয়। পারথের পিচ আগের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে গিয়েছে বলে অনেক কথা শোনা গিয়েছিল, কিন্তু পিচ মোটেই সে রকম ছিল না। আমার কাছে এটাই ছিল সিরিজের সেরা ব্যাটিং উইকেট। এই উইকেটে যখন ভারত ১৬১ রানে প্রথম দিন শেষ হয়ে গেল, মাঠে আমরা যারা ছিলাম, জানতাম আরও একটা বড় হার স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও যে ভারত এ ভাবে আত্মসমর্পণ করবে, সেটা আর হতাশা নয়। বরং মেনে নেওয়া যে এই টিম আর জিতবে না বা আগামী কয়েকটা সপ্তাহ অস্ট্রেলিয়ায় লড়াইটাও করতে পারবে না। এদের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ক্রিকেট খেলেছি বলেই কমেন্ট্রি বক্সে বসে এই টিমের টানা সাতটা হার দেখে যন্ত্রণা হচ্ছে। কিন্তু এটাই বাস্তব। ভারতীয় ক্রিকেট এখন এখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই টিমটার প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। যথার্থ কারণেই হয়েছে। একটা টিম এত দিন ধরে এত খারাপ খেললে সমর্থক, মিডিয়া, প্রশাসক সবাই ধৈর্য হারাতে বাধ্য। তার জন্য ওদের দোষ দেওয়া যায় না। |
বরং এটাই টিমের প্রাপ্য। এই রকম সমালোচনার মধ্য দিয়ে আমাকেও যেতে হয়েছে। এ সব ক্ষেত্রে আপনি ভাববেন, আমিই কেন! কিন্তু টিম ইন্ডিয়ার এটা মেনে নেওয়ার সময় হয়েছে। কিছু কিছু সময় ব্যাপারটা মেনে নিলেও টিমের ভাল হয়। ভারতীয় ক্রিকেটের সামনের দিকে তাকানোর জন্য কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আর সেটা করতে গেলে প্রত্যেককে নিজের ভূমিকাটা সঠিক ভাবে পালন করতে হবে। নির্বাচক, ক্রিকেটার, প্রশাসক সবাইকে। সোজা কথা হল, কঠিন এবং সৎ সিদ্ধান্ত সাহসের সঙ্গে নেওয়া। পারথ টেস্টের আগে বারবার নতুন ক্রিকেটারদের নেওয়ার কথা উঠেছে। আমি ব্যাপারটার সমর্থন করি। একটা টিমকে সময় সময় নতুন প্রতিভা আমদানি করতে হয়। এখন নির্বাচকদের সেটা করার সময় এসেছে। ভারতীয় ক্রিকেটে বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের অত্যন্ত কঠোর সিদ্ধান্তও নিতে হবে। এই সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে। আগে দেখেছি নির্বাচকেরা দুর্বল টার্গেটকে বাদ দিয়ে দায় সেরেছেন। যাদের বাদ দিলে দেশ জুড়ে হইচই হবে না। তাতে শুধু নিজেদের পিঠই বাঁচাননি, লোককেও খুশি রেখেছেন। কিন্তু এখন সঠিক সিদ্ধান্তগুলো নিতেই হবে।
নির্বাচক কমিটির মাথায় শ্রীকান্ত, রয়েছেন মোহিন্দর অমরনাথের মতো ব্যক্তিত্বও। সবার নজর ওঁদের দিকেই থাকবে। ওঁরা যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারেন, ভারত-সহ গোটা বিশ্ব ভারতীয় ক্রিকেটের উপর আস্থা হারাবে। আর সেটা হবে ভারতে ক্রিকেটের জন্য চূড়ান্ত ক্ষতিকর। এটা একটা বিবৃতি দেওয়ার সময়। যখন গোটা বিশ্ব আইপিএলের কথা বলছে, সেটা ঠিক বা ভুল হতে পারে, এই সময়ই নির্বাচকদের বোঝাতে হবে কেন জাতীয় দল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি এটা ওঁরা জানেন। কিন্তু কাজে করে দেখাতে হবে। নির্বাচকদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে পুরোপুরি সৎ থাকতে পারা। যেমন লক্ষ্মণকে নিয়ে বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে তো বটেই, অ্যাডিলেড টেস্টেই ওকে ছেঁটে ফেলা হোক। তাই যদি হয়, তা হলে আমি বলব একই নিয়ম বাকি অনেক ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত। লক্ষ্মণের দুর্দান্ত ক্রিকেটার। তবে খেলাধুলোয় একটা সময় থামতেই হয়। কিন্তু প্লেয়ার হিসেবে আপনি সব সময় চাইবেন সঠিক বিচার। ভারতীয় ক্রিকেটকে যদি এগোতে হয়, সঠিক বিচারটাই এখন সবচেয়ে বেশি দরকার। সিনিয়র বা জুনিয়র যাকেই বাদ দেওয়া হোক, সবার জন্য যেন মানদণ্ড এক থাকে। যেখানে বার্তা পৌঁছয় যে পারফরম্যান্সটাই বিচারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছে। খেলাধুলোয় এমন উদাহরণ থাকবেই যেখানে এক জন অন্য জনের চেয়ে সামান্য বেশি সময় পেয়েছে বা পাচ্ছে। কিন্তু এ বারে ব্যাপারটা তেমন হওয়া উচিত নয়। পরপর এতগুলো হারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এত জঘন্য হার হতেই পারত না যদি না কয়েক জন নিয়মিত ভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স করে যায়। এই মুহূর্তে টিমে অনেকেই সেই জায়গাটায় রয়েছে এবং যখন টিমের সবচেয়ে বেশি দরকার, কোনও রকম পারফরম্যান্স করছে না।
কয়েক দিনের মধ্যেই ওয়ান ডে সিরিজ শুরু হবে। কিন্তু সেটা ভারতের সমস্যা না। ওখানে ভারত ভাল খেলবে আশা করছি। কারণ ওয়ান ডে অন্য ফর্ম্যাট এবং সেখানে সফল হতে একেবারে অন্য স্কিলের দরকার। ভারতের আসল দুশ্চিন্তা হল টেস্ট টিমের পারফরম্যান্স। এই সিরিজের পর বেশ কয়েক মাস ভারত টেস্ট খেলবে না। কাজেই আমি দেখতে খুব উৎসাহী গোটা ব্যাপারটা নির্বাচকেরা কার্পেটের তলায় ঢুকিয়ে দেবেন না কি ভারতীয় ক্রিকেটকে সামনে নিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন? আমার কাছে এটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় এবং জরুরি বিষয়। শ্রীকান্ত এবং কোম্পানি, গোটা দেশ কিন্তু আপনাদের লক্ষ করছে। দাবি একটাই। সততা এবং সুবিচার। |
পারথ টেস্টের স্কোর |
অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস ৩৬৯
ভারত
প্রথম ইনিংস: ১৬১
দ্বিতীয় ইনিংস
(আগের দিন ৮৮-৪) |
দ্রাবিড় বো হ্যারিস ৪৭
বিরাট ক হাডিন বো সিডল ৭৫
ধোনি ক পন্টিং বো সিডল ২
বিনয় ক ক্লার্ক বো হিলফেনহস ৬
জাহির ক ক্লার্ক বো হিলফেনহস ০
ইশান্ত ক কাওয়ান বো হিলফেনহস ০
উমেশ ন.আ. ০
অতিরিক্ত ৯
মোট ৬৩.২ ওভারে ১৭১।
পতন: ২৪, ২৫, ৪২, ৫১, ১৩৫, ১৪৮, ১৭১, ১৭১, ১৭১।
বোলিং: হ্যারিস ১৬-৩-৩৪-১, হিলফেনহস ১৮-৬-৫৪-৪, স্টার্ক ১২-৪-৩১-২
সিডল ১৫.২-৫-৪৩-৩, হাসি ২-০-৩-০।
|
|
|