|
|
|
|
রক্ষীদের তৎপরতায় বানচাল ‘শিকার’ |
মোরগ লড়াই সুন্দরবনের গ্রামে গ্রামে |
নির্মল বসু • হিঙ্গলগঞ্জ |
আইনের চোখে নিষিদ্ধ। কিন্তু বললেই তো হল না! আদিবাসী মানুষের বক্তব্য, এ তাঁদের বাপ-ঠাকুর্দার আমলের ‘সংস্কৃতি’। অতএব, মোরগ লড়াই বন্ধ হয়নি সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রামে। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, প্রত্যন্ত এলাকায় এত নজরদারি সম্ভব নয়। মানুষের সচেতনতা না বাড়লে এ জিনিস বন্ধ করা মুশকিল।
টুসু উৎসবের অঙ্গ হিসাবে পৌষ পার্বণ এবং সরস্বতী পুজো উপলক্ষে তিন দিনের মোরগ লড়াইয়ের আসর বসে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ-সহ সুন্দরবনের বহু এলাকায়। হিঙ্গলগঞ্জের সর্দারপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল এমনই মোরগ লড়াইয়ের আসর। মোরগের পায়ে ধারাল ছুরি, ব্লেড বেঁধে দেওয়া হয়। একের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বড়সড় চেহারার দুই প্রতিপক্ষ মোরগ। শেষমেশ রক্তারক্তি কাণ্ড। কিন্তু তা দেখে হইহই রইরই করেন দর্শকেরা। চটাপট হাততালি পড়ে। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
সর্দারপাড়ার পঁচাশি বছরের বৃদ্ধ দাসু সিংহ বলেন, “বাবার মুখে শুনেছি, এক সময়ে জমিদারেরা বদ্ধভূমিতে প্রজাদের ঢুকিয়ে মল্লযুদ্ধ দেখে আনন্দ পেত। তা দেখে মনে মনে ক্ষোভে ফেটে পড়ত গরিব প্রজারা। কিন্তু লেঠেল বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে পারত না।” দাসু জানান, সেই আক্রোশ থেকেই আদিবাসী মানুষ ঠিক করেন, মোরগ লড়াইয়ের মাধ্যমে এর ‘জবাব’ দেবেন। ক্রমে ক্রমে অমনেক পরিবর্তন এসেছে এই লড়াইয়ের নিয়ম-কানুনেও। এখন মোরগ লড়াইয়ে বহু টাকার বাজি ফেলা হয়। জয়ী মোরগের মালিকেরও মেলে বীরের সম্মান। মেডেল পরানো হয় তাঁর গলায়। পরে কাঁধে চড়িয়ে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। মহিলারা তাঁর কপালে তিলক কেটে দেন। রাতভর হাড়িয়া খেয়ে চলে নাচগানের অনুষ্ঠান।
অন্য একটি মোরগ লড়াইয়ের আসরে ভাস্কর সর্দার, উত্তম সর্দারেরা জানালেন, সাধারণ মোরগের দাম ৫-৬ শো টাকা। সেখানে রাঁচির একটি মোরগের দাম এ বার উঠেছে ৩ হাজার টাকা। পৌষ সংক্রান্তিতে কিংবা সরস্বতী পুজোর দিন মোরগ কিনে সারা বছর তাকে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয় লড়াইয়ের জন্য। কান্ডি মুর্মু, ভরদ্বাজ লোহার, কানু সর্দারেরা বলেন, “আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে মোরগ লড়াইয়ে জয়ী হওয়া খুবই গর্বের ব্যাপার।” |
|
|
|
|
|