|
|
|
|
রক্ষীদের তৎপরতায় বানচাল ‘শিকার’ |
নিরাপত্তায় ঘেরা চিড়িয়াখানায় চোরাশিকারির হানা |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
এ বার আর উন্মুক্ত অরণ্যে নয়, একেবারে নিরাপত্তা বেষ্টিত দুর্গের মধ্যেই শিকারি হানা! খোদ গুয়াহাটি চিড়িয়াখানায় গন্ডার মারতে চোরাশিকারি ঢুকে পড়ল। তবে গন্ডার হত্যার আগেই, রাত-টহলে থাকা অরণ্য সুরক্ষা বিভাগের জওয়ানরা এই চোরাশিকারিকে পাকড়াও করে ফেলেন।
কাজিরাঙার অগরাতলি রেঞ্জে গত কালও গন্ডার মেরে, খড়্গ নিয়ে পালিয়েছে চোরাশিকারিরা। গোলাঘাট থেকে বোকাখাত, ওরাং জাতীয় উদ্যান, পবিতরার অভয়ারণ্যে গন্ডার নিধন হয়ে চলেছে। কিন্তু সে সব তো বিস্তীর্ণ বনভূমি। সেখানে বনরক্ষীর সংখ্যা তো নগণ্য। পালাবার সুযোগও অবাধ। কিন্তু গুয়াহাটি শহরের বুকে, চারদিক উঁচু পাঁচিল ঘেরা চিড়িয়াখানাতেও যে চোরাশিকারি হানা দেবে তেমনটা আগে কেউ ভাবেইনি। কিন্তু টাকার লোভে এমন অসাধ্য সাধন করতেও পিছপা হচ্ছে না শিকারিরা।
গত কাল রাতে অন্য দিনের মতোই, গুয়াহাটি চিড়িয়াখানায় রাতটহল দিচ্ছিলেন, বনরক্ষী রবীন্দ্র বরুয়া, অসম অরণ্য সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ান মাখন নাথ ও দুই মহিলা জওয়ান নিরূপমা কলিতা, হিমাদ্রি বরুয়া। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ চিড়িয়াখানার রাস্তার দিকের নিচু পাঁচিল পার হয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে মণিপুর থেকে আসা চোরাশিকারি চিন্ খাং সং। বয়স আনুমানিক ৫৫। আদতে সে টাংখুল নাগা। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত নায়েক চিন্-এর হাতে ছিল গুলিভরা রাইফেল। পিঠে ব্যাকপ্যাক। পাঁচিল টপকে সে সোজা সিংহের খাঁচার পিছনে উঠে যায়। উদ্দেশ্য ছিল, রাতে রক্ষীরা যখন মাঘী-বিহুর আনন্দে মেতে উঠবেন তখনই গন্ডার মেরে খড়্গ নিয়ে সে পালাবে। কিন্তু চৌকিদার হামিদ আলি সিংহের খাঁচার আশপাশে ‘নড়াচড়া’ লক্ষ্য করে বনরক্ষীদের খবর দেন। বনরক্ষী ও অরণ্য সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানরা প্রথমে ভেবেছিলেন কোনও প্রাণী বোধহয় বের হয়ে এসেছে। এর আগেও রাতে খাঁচা থেকে সিংহ বের হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তল্লাশি চালিয়ে তাঁর দেখেন, চারপেয়ে নয়, দু’পেয়ে অবয়ব দৌড়ে পালাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ চোর-পুলিশ কাণ্ড চলার পরে চিন্কে কব্জা করে ফেলেন তাঁরা।
আজ সকালে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সুরেশ চাঁদ চিড়িয়াখানায় গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুঁটিয়ে দেখেন তিনি। চাঁদ বলেন, “চূড়াচাঁদপুরের বাসিন্দা চিন্-এর কাছ থেকে একটি .৩০৩ রাইফেল, ছয় রাউন্ড তাজা কার্তুজ, একটি দা, কুড়ুল, ৪৬৬৫ টাকা, মোবাইল ফোন ও টেলিফোন নম্বর লেখা ডায়েরি মিলেছে। ১৩ জানুয়ারি সে ইম্ফল থেকে বাসে গুয়াহাটি এসেছিল। পল্টনবাজারের একটি হোটেলে ছিল। গত রাতে সুযোগ বুঝে চিড়িয়াখানায় ঢোকে। সঙ্গে থাকা রেশন কার্ড থেকে জানা গিয়েছে, সে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। আমাদের রক্ষীরা তৎপর না হলে অঘটন ঘটত।”
চিড়িয়াখানায় চোরাশিকারি ঢোকার ঘটনা এই প্রথম হলেও কয়েক বছর আগে হাই-টেনশন তার ফেলে গন্ডার মারার চেষ্টা হয়েছিল। তবে সে বার কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। চাঁদ বলেন, “রাতে পশুদের বেরিয়ে যাওয়া বা বহিরাগতদের প্রবেশ রুখতে দশ জনের একটি বাহিনী টহল দেয়। কী ভাবে ওই ব্যক্তি রাইফেল নিয়ে হোটেলে ছিল, রাস্তা দিয়ে চিড়িয়াখানা অবধি এল, তাও বিস্ময়কর। বিষয়টির আরও তদন্তের জন্য চিন্কে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।” উল্লেখ্য, চিড়িয়াখানায় এখন ৯টি একশৃঙ্গ গন্ডার রয়েছে। |
|
|
|
|
|