আরামবাগ শহরে রমরমিয়ে বাড়ছে চিটফান্ডের ব্যবসা। রীতিমতো অফিস খুলে এই ব্যবসা চলছে পুলিশ-প্রশাসনের চোখের সামনে। বহু মানুষকে প্রতারিত করে এই ধরনের একাধিক সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে, এমনই অভিযোগ তুলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “কয়েক জন এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ৮টি সংস্থার নামে অভিযোগ হয়েছে। পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট এলেই বোঝা যাবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, শহরের নানা জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়ে অন্তত ৩০টি চিটফান্ডের অফিস চলছে। অধিকাংশ অফিস আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড, গৌরহাটি মোড়, বাসুদেবপুর মোড়, হাসপাতাল মোড়ের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এই সব জায়গা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে থানা, মহকুমাশাসকের দফতর, এসডিপিও দফতর। জমা রাখা টাকা অল্প দিনে দ্বিগুণ বা তিন গুণ করার লোভ দেখিয়ে এজেন্টের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করছে সংস্থাগুলি। আস্থা অর্জনের জন্য প্রথম দিকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রাপ্য না মিটিয়ে টাকা হাতিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলছে সংস্থাগুলি। পালিয়ে যাচ্ছেন সংস্থার কর্তারা।
মাস দু’য়েক আগে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডের কাছে এমনই এক সংস্থা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। মাসখানেক আগে একই অভিজ্ঞতা হয় হাসপাতাল মোড়ের কাছে একটি সংস্থায় টাকা জমা রাখা কয়েকশো মানুষের। ওই ঘটনার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নামে। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় মানুষের দাবি, সংস্থাগুলির চোখধাঁধানো প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে ব্যবসায়ী থেকে মধ্যবিত্ত, এমনকী বহু গরিব মানুষ টাকা জমা রাখছেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তাঁদের সর্বস্বান্ত হতে হচ্ছে। সরকার, পুরসভা বা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরগুলির প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়াই দিব্যি চলছে চিটফান্ড অফিসগুলি।
বিজয় ঘোষ নামে আরামবাগ শহরের এক বাসিন্দার মতে, “গরিব, খেটে খাওয়া মানুষ ভবিতব্য বুঝতে না পেরে ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
হুগলি জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “তদন্তে দেখেছি, অনেক ক্ষেত্রে দৈনিক বা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে টাকা জমানোর ব্যবস্থা করে চিটফান্ডগুলি। গরিব মানুষের পক্ষে এই ব্যবস্থা বেশ সুবিধাজনক হয়।” পুলিশ অফিসারদের বক্তব্য, সুবিধার কথা ভাবতে গিয়ে বা লোভের বশে আমানতকারীরা ওই সমস্ত সংস্থার সরকারি অনুমোদন বা বিধিবদ্ধ নথিপত্র রয়েছে কি না, তা দেখেন না। পুলিশকেও তা জানানো হয় না। যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আমানতকারীদের, একমাত্র তখনই পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু মামলা করা ছাড়া পুলিশের কিছু করার থাকে না। অভিযুক্তরা ধরা পড়ে আইনি শাস্তি পেলেও লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই চিটফান্ডের লোকজন অন্যত্র পালিয়ে যান। পুলিশকর্তাদের পরামর্শ, সব কিছু খতিয়ে না দেখে বেসরকারি কোনও সংস্থাতেই টাকা জমানো উচিত নয়।
চিটফান্ড সংস্থার কাছে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ অবশ্য হুগলিতে নতুন নয়। এই নিয়ে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হওয়ারও নজির রয়েছে। কয়েক মাস আগেই কোন্নগরে একটি চিটফান্ড সংস্থার কাছে প্রতারিত হয়ে ফাঁড়িতে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে জনতা। ওই ঘটনার কয়েক দিন পরে একই কারণে বিক্ষোভ হয় শেওড়াফুলির বৌবাজারেও। |