প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের বানানো দামোদর নদের জেটি আর খনি বাংলোকে ঘোষণা করতে হবে ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থাপত্য (হেরিটেজ) হিসেবে। এমনই দাবি তুলে রানিগঞ্জের বাসিন্দারা চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে হেরিটেজ কমিশনে। চিঠি দেওয়া হয়েছে ইসিএল এবং কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রীকেও। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নের আশ্বাস, “বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর করে বিবেচনা করা হবে।”
১৮৩৫ সাল। রানিগঞ্জের নারায়ণকুড়ি এলাকায় কয়লা খনন শুরু করেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। এই ব্যবসায় তাঁর অংশীদার ছিলেন ইংরেজ বন্ধু উইলিয়ম কার। কোম্পানির নাম হয় কার টেগোর কোম্পানি। খনির কাজ দেখাশোনার জন্য খনি সংলগ্ন একটি উঁচু জমিতে বাংলো তৈরি করান দ্বারকানাথ। এখানেই তিনি থাকতেন। কথিত আছে, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে বালক রবীন্দ্রনাথ-ও বেশ কয়েক বার আসেন পিতামহের এই বাংলোয়। কলকাতা-সহ উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়লা পরিবহণের জন্য খনি সংলগ্ন দামোদর নদে একটি জেটি বানিয়েছিলেন তিনি। সে সময় নৌকা করে কয়লা পরিবহণ হত।
প্রায় ১৮০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ওই খনি-বাংলো আর জেটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তারই অবশিষ্টাংশ সংরক্ষণ করে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। |
কিন্তু বাধ সেধেছে ইসিএল। এখানে একটি খোলামুখ খনি বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। জোটবদ্ধ ভাবে এর প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এর ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে দেশের প্রথম ভারতীয় খনি মালিকের শেষ চিহ্নটুকু।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রধান মণ্ডলের দাবি, “শিল্পাঞ্চলে মাত্র কয়েকটিই এমন জায়গা আছে, যার সঙ্গে ইতিহাসের যোগ রয়েছে। সেগুলিও ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও অনুমতি ছাড়াই জনবসতি অঞ্চলে ইসিএল এই খোলামুখ খনি বানাচ্ছে।”
গ্রামবাসীদের দাবির কথা পৌঁছেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নের কাছেও। তিনি বলেন, “আবেগের বশে তো হেরিটেজ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয় না। এর বাস্তবতা খতিয়ে দেখে বিবেচনা করব।” তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রয়োজনে একটি বিশেষজ্ঞ দল এলাকায় গিয়ে সব চাক্ষুষ করবে।
তবে ওই এলাকায় খনি বানানোর সিদ্ধান্ত থেকে এখনই সরে আসতে নারাজ ইসিএল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সিএমডির কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “সবই প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এগুলি সংরক্ষণের মতো অবস্থায় থাকলে আমরা অবশ্যই ভেবে দেখতাম। এখানে এখন খনি বানিয়ে কয়লা তোলাই শ্রেয়।” তাঁর দাবি, ওই এলাকায় ভূপৃষ্ঠের খুব কাছেই অতি উন্নতমানের কয়লা মজুত আছে। ইসিএলকে লাভজনক করে তুলতে ওই কয়লা খনন করা খুবই দরকার। নীলাদ্রিবাবু জানিয়েছেন, একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ইতিমধ্যেই ওই কয়লা খননের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাসে ৫ লক্ষ টন কয়লা এখান থেকে উঠে আসবে। আর তা বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়াবে ইসিএল। গ্রামের মানুষের ভাবাবেগ না কি ইসিএলের ভবিষ্যত-স্বপ্ন, কী গুরুত্ব পায় সেটাই দেখার। |