পুড়ে গেল বার্নপুরের ইস্কো ডেলি মার্কেটে প্রায় দেড়শোটি দোকান। রবিবার ভোর রাতের ঘটনা। নষ্ট হয়েছে বহু টাকার সম্পত্তি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, ইস্কোর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নওলকিশোর ঝা এবং মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানোর আশ্বাস দেন মলয়বাবু। আসানসোলের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি করে জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হবে। |
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ দিন ভোর তিনটে নাগাদ বাজারের পশ্চিম প্রান্তে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। দোকানদারেরাই প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু উত্তুরে হাওয়ায় নিমেষের মধ্যে দোকানের বাঁশ, শালকাঠের খুঁটি ও পলিথিনের ছাউনি দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে। দ্রুত এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। দোকানদারেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন জিনিসপত্র ও টাকার বাক্স সরিয়ে ফেলতে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা বাঁচানো যায়নি। দেখতে দেখতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় গোটা সবজি ও ফল পট্টি। ঘটনাস্থলে চলে আসে ইস্কোর একটি এবং রাজ্য দমকলের তিনটি ইঞ্জিন। ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায় সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আগুন সম্পূর্ণ নিভে যায়। দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ জানিয়েছেন, কী কারণে আগুন লেগেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
দমকলের আগুন নেভানোর এই চেষ্টার মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকেরা বিক্ষোভ শুরু করে দেন। ইস্কোর বাজার পরিদর্শক অফিসে তালা ভেঙে ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় কাগজপত্রে। ভেঙে দেওয়া হয় দমকলের একটি গাড়ির কাচ-ও। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। দোকান মালিকদের অভিযোগ, ইস্কো কর্তৃপক্ষকে তাঁরা বার বার টিনের স্থায়ী ছাউনি বানিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। ঘটনাস্থলে হাজির ইস্কোর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নওলকিশোর ঝা-কে এ দিন টিনের পাকা ছাউনি বানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক-ও। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন ওই ইস্কোকর্তা। |
বার্নপুরের বাজারটি দেখাশোনা করে ইস্কো। দোকানিদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ভাড়া নেওয়া হয়। বাজার ঘুরে জানা গিয়েছে, রবিবার ভোর রাতে যে অংশে আগুন লেগেছিল সেখানে প্রচুর পলিথিনের ছাউনি দেওয়া বাঁশ ও বেড়ার অস্থায়ী দোকান বানানো হয়েছিল। অথচ ইস্কো সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিন বেচাকেনার পরে দোকান গুটিয়ে নিয়ে চলে যাওয়াই নিয়ম। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, দিনের পর দিন এই ভাবে দোকানগুলি চলল কী ভাবে? ইস্কোর বাজার পরিদর্শক দ্বিজোত্তম দে সরকারের জবাব, “পলিথিনের ছাউনি দেওয়া বাঁশ ও বেড়ার অস্থায়ী দোকানগুলি পুরোপুরি অবৈধ। আমরা বহু বার ওই দোকানগুলি ওঠানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু দোকানদারেরা মারমুখী হয়ে ওঠায় আমাদের হার মানতে হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, আগুন লাগার পরে দোকানদারেরা তাঁদের মারধর করতে তাড়া করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের হাতের নাগালে না পেয়েই পরিদর্শক-অফিস ভাঙচুর করেন।
এ দিকে, ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও এলাকার কিছু মানুষের অভিযোগ, বাজার পরিদর্শকদের যোগসাজসেই অবৈধ ছাউনিগুলি তৈরি হয়েছে। এর পরিবর্তে দোকান মালিকদের বাঁকা পথে মোটা টাকা মাসোহারাও দিতে হয়েছে। এই অভিযোগ অবশ্য পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন দ্বিজোত্তমবাবু।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারেরা পোড়া জিনিসপত্র বেছে বেছে তুলছেন। অনেকেই ধ্বংসাবশেষের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দশকর্মা ব্যবসায়ী গৌতম দাস বলেন, “দোকান সাজিয়েছিলাম অনেক টাকা খরচ করে। সব পুড়ে গেল। সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম।” শুকনো ফলের ব্যবসায়ী পরিমল পাল বলেন, “মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কয়েক লক্ষ টাকার শুকনো ফল মজুত করেছিলাম। কিছুই বাঁচল না। কাল থেকে কী ভাবে সংসার চলবে জানি না।” আলুর পাইকারি বিক্রেতা কিশোর বিট বলেন, “প্রায় ৬০ বস্তা আলু পুড়ে গেল। সব শেষ।” |
ইস্কো কারখানার আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চলছে সম্প্রসারণ। একই সঙ্গে ইস্পাত শহরও সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু করেছেন কতৃর্পক্ষ। সংস্থার কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির আওতায় শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকারও উন্নয়ন শুরু হয়েছে। এখন খোলনলচে বদলে নতুন করে সঠিক পদ্ধতি মেনে এই বাজার বানানো হয় কি না, সেটাই দেখার।
|