হিমগিরি-রহস্য ঘোরালো
ট্রেনে গুলি, জেনেও কী ভাবে ভুলে গেলেন কর্তারা
ট্রেনের মধ্যে গুলি চলল। যাত্রীরা টের পেলেন।
কিন্তু জানতেই পারলেন না ট্রেনের চালক, গার্ড এবং কর্তব্যরত আরপিএফ জওয়ানেরা।
যাত্রীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে টিকিট পরীক্ষক হাওড়ায় রেল কন্ট্রোলে জানিয়েছিলেন। হাওড়া থেকে আসানসোল স্টেশনের রেলকর্তাদের কাছে খবর পৌঁছলেও তাঁরা তা বেমালুম ভুলে গেলেন!
আসানসোল স্টেশন থেকে ট্রেনটি যখন ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তখন যাত্রীদের হইচইয়ে টনক নড়ে। উদ্ধার করা হয় গুলিতে নিহত এক ঠিকাকর্মী এবং আহত অন্য এক ঠিকাকর্মীকে। জম্মুগামী হিমগিরি এক্সপ্রেসে ওই ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে এমন চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছেন রেল পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা।
শুক্রবার মাঝরাতে হাওড়া থেকে আসানসোলের মধ্যেই হিমগিরিতে গুলি চলে। আসানসোলের স্টেশনকর্তারা সেটা জেনেও ভুলে গেলেন কী ভাবে?
সরাসরি জবাব মেলেনি। ফলে রহস্য ঘোরালো হয়েছে। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পরে কামরার এক যাত্রী বিষয়টি কর্তব্যরত এক টিকিট পরীক্ষককে জানিয়েছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা জানিয়ে দেন হাওড়া কন্ট্রোলে। তারা বিষয়টি জানিয়ে দেয় আসানসোল স্টেশনের ম্যানেজারকে। কিন্তু তার পরেও কেউ ঘটনাটিকে গুরুত্ব দেননি। এমনকী হিমগিরি আসানসোল স্টেশনে পৌঁছনোর পরে গার্ড নিয়মমতো ট্রেনের পাহারায় থাকা চার আরপিএফ জওয়ানকে ডিউটি থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছেড়েও দেন। ফের ট্রেন ছাড়তেই যাত্রীরা হইচই করে চেন টেনে ট্রেন থামান। তখন টনক নড়ে রেল-কর্তৃপক্ষের। প্রথমে আসে রেল পুলিশ। তার পরে আসেন রেল-কর্তৃপক্ষও। তার পরে নিহত ও আহতকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রহস্য বেড়েছে গুলিতে আহত ঠিকাকর্মী কর্মী গণেশ সাউয়ের কথায়। পুলিশের জেরায় গণেশবাবু শুক্রবার জানিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেরা লড়াই করে গুলি চালাননি। বাইরের কোনও তৃতীয় ব্যক্তি এসেই গুলি চালিয়েছিল। যদিও তদন্তকারীদের বক্তব্য, হিমগিরি এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছেড়ে সোজা আসানসোলে থামে। শুক্রবারেও তার অন্যথা হয়নি। ফলে মাঝপথ থেকে ওই ট্রেনে কারও ওঠা সম্ভব নয়। সবাই উঠেছিলেন হাওড়া থেকেই। তদন্তকারীদের বক্তব্য, গণেশবাবুর কথা একমাত্র সত্যি হতে পারে যদি কেউ সংরক্ষণ ছাড়াই সংরক্ষিত কামরায় উঠে থাকেন।
সে-ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, টিকিট পরীক্ষক তিন ঘণ্টায় ধরে কী করছিলেন? খবর পাওয়া সত্ত্বেও আসানসোলে পৌঁছনোর আগেই তল্লাশি শুরু হল না কেন? আসানসোলে ট্রেন থেমে থাকা অবস্থায় ‘আততায়ীদের’ পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হল কেন? রহস্য জোরদার হয়েছে এই সব প্রশ্নকে ঘিরেই।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, শুক্রবার সংরক্ষিত টিকিটের তেমন চাহিদা ছিল না। লোকজনও তেমন ঘোরাঘুরি করছিল না। যাত্রীরাও কেউ কেউ জানিয়েছেন, বাইরের কাউকে সে-ভাবে ওই সময়ের মধ্যে দেখা যায়নি। তদন্তের জন্য রেল পুলিশের এক ডিএসপি (সদর)-এর নেতৃত্বে একটি দল তৈরি করা হয়েছে। হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্ত দাস জানান, আহত গণেশবাবুকে এখনও তেমন ভাবে জেরা করা যায়নি। তাঁকে ভাল ভাবে জেরা করার পরেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে আশা করছে পুলিশ। উদ্ধার হয়নি আগ্নেয়াস্ত্রটিও।
এই ঘটনার পরে ট্রেনে যাত্রী-নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠছে। ট্রেনে এখন যাত্রী ছাড়াও বাইরের বহু লোক উঠছে। কেটারিং সংস্থা থেকে শুরু করে বাতানুকূল ট্রেনের কামরার দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মী, সবাই এখন বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার। তাঁদের সে-ভাবে কোনও ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ নেই। নিয়ম অনুযায়ী প্যান্ট্রির সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের সরকারি হেল্থ সার্টিফিকেট থাকার কথা। কিন্তু তা-ও সব সময় থাকছে না। এমনিতেই রেল এবং রেল পুলিশে কর্মী-সংখ্যা কমেছে। পুলিশকর্মীর অভাবে নিয়মিত তল্লাশি হয় না। কর্মীর অভাবে কোচ অ্যাটেন্ড্যান্টের অনেক পদও এখন ফাঁকা। ফলে তিন-চারটি কামরা মিলিয়ে এক জন করে কোচ অ্যাটেন্ড্যান্ট দিয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, টিকিট কেটেও ট্রেনে প্রাণ হাতে করে সফর আর কত দিন?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.