জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্কের জেরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে জখম হল বারো জন। শনিবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া কাওয়াখালি বাজারে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। ওই ঘটনার জেরে কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর হয়। লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মারধর এবং বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলেও অভিযোগ। বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। আগুন লাগানোর খবর পেয়ে যায় দমকলও। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় পুলিশি টহল রয়েছে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১২ জন জখম হয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাওয়াখালি বাজারের কাছে প্রায় ৮২ ডেসিমেল জমির দাবিদার অনিল রায় এবং অন্য এক পক্ষ। তা নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। জমি নিয়ে দু’পক্ষের ছোটখাট গোলমাল লেগেই থাকে দেখে পুলিশের আর্জিতে ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল। এ দিন অনিলবাবুদের তরফে জায়গাটি ঘেরার চেষ্টা হয়। ওই জমিতে থাকা একটি ক্লাবের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন তা নিয়ে প্রতিবাদ করেন। তার থেকে গোলমাল বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকে বুঝিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে চলেও আসে। পুলিশ ফিরে যাওয়ার পরেই অনিলবাবুর বাড়িতে স্থানীয় লোকজন চড়াও হয় বলে অভিযোগ। |
অনিলবাবুর পরিবারের তরফে জানানো হয়, বড় ঢিল, কংক্রিটের চাঙর ঘরের মধ্যে ছুঁড়তে শুরু করে কিছু লোক। অভিযোগ, বিকাশ দেবনাথ, শঙ্কর হালদার, রতিকান্ত হালদারের নেতৃত্বে লোকজন লাঠিসোটা, ধারাল অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে ঢুকে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। অনিলবাবু এবং তাঁর ভাইদের বাড়ি থেকে টিভি, মোবাইল তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অনিলবাবুর পরিবারের সদস্যেরা পুরনো একটি রান্নাঘরে লুকোতে গেলে সেখানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অনিলবাবু বলেন, “জমি আমাদের। তার কাগজপত্রও রয়েছে। এ দিন আমরা জমি ঘিরতে যাইনি। কোর্টে মামলা চলছে। তা না মেনে অপর পক্ষই জমি ঘিরতে গিয়েছিল। আমরা প্রতিবাদ করেছি। ওরা সব সিপিএমের লোক। তৃণমূল করি বলে আমাদের উপর চড়াও হয়েছে। তা ছাড়া আগে থেকেই জমি বিক্রি করতে ওরা চাপ দিচ্ছিল। বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করেছে। পুরনো রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। পুলিশকে জানিয়েছি।” ওই জমিতে থাকা ক্লাবের সম্পাদক শঙ্করবাবু, বিকাশবাবু এবং তাঁদের পরিবারের লোকের অভিযোগ, বিতর্কিত জমি হওয়ায় ক্লাবটিও তাঁরা ভাল করে তৈরি করছেন না। এই পরিস্থিতিতে এ দিন অনিলবাবু এবং তাঁদের পরিবারের লোকেরা জমিটি ঘিরতে চেষ্টা করলে তাঁরা প্রতিবাদ করেন। পুলিশ গিয়ে গোলমাল মিটিয়ে চলে যাওয়ার পরেই অনিলবাবু, তাঁর ভাইরা এবং পরিবারের লোকজন ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করে। প্রতিবাদ করলে লাঠিসোটা নিয়ে মারধর শুরু করে। জখম অবস্থায় তাদের ৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য কেশব চন্দ্র সিংহ বলেন, “বিতর্কিত জমি কেউ ঘিরতে পারেন না। তা নিয়ে দুই পক্ষের গোলমাল হয়। পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। তবে এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।” |