ষড়যন্ত্রী পুলিশ, দাবি রায়গঞ্জের প্রাক্তন অধ্যক্ষের
রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকার পুলিশের দিকে আঙুল তুললেন। দিলীপবাবুর অভিযোগ, পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশে তাঁকে কলেজের বাইরে টেনে নেওয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছিল। পুলিশের সামনেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কী ভাবে তাঁকে হেনস্থা করেছে, সে কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙেও পড়েন। শনিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের হলঘরে এক প্রতিবাদ-সভায় দিলীপবাবুর অভিযোগ শুনে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমি শিউরে উঠছি।” তাঁর সংযোজন, “পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা এমন হবে কেন? দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত।”
পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। কারণ তিনি ফোন ধরেননি। রাজ্যের প্রধান শাসক দল তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অমল আচার্য বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম সরকার বলেন, “দিলীপবাবুর অভিযোগ যে ভিত্তিহীন তা গোড়া থেকেই আমরা দাবি করছি। সে দিন কংগ্রেসের লোকজন আমাদের পতাকা নিয়ে ওসব করেছে। এখন দিলীপবাবুর কোনও অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।” রায়গঞ্জ-কাণ্ডের প্রতিবাদে ওই সভার আয়োজন করেন এবিটিএ-সহ একাধিক শিক্ষক সংগঠনের নেতারা, যাঁদের অনেকেই সিপিএম নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সেই ‘সূত্র’ ধরিয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশ বলছেন, “দিলীপবাবুর অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে।”
প্রতিবাদ সভায় দিলীপবাবুর সঙ্গে কথা বলছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী
অশোক ভট্টাচার্য ও সিপিএম নেতা জীবেশ সরকার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
দিলীপবাবু জানান, কলেজের ভোট ২২ ডিসেম্বর হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু, তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরী দাবি করেন, ডিসেম্বরে ভোট করা যাবে না। তা পিছিয়ে দিতে হবে। এ কথা দিলীপবাবু এসপি-কে জানান। তিনিও ‘পুলিশ দেওয়া যাবে না’ বলে ভোট পিছিয়ে দিতে বলেন। দিলীপবাবুর দাবি, “কিন্তু আমি জানিয়ে দিই, ভোট পিছোনো সম্ভব নয়। তার পরেই ছক কষে ওই দিন ডেপুটেশনের নামে কলেজের গেট ভেঙে লোকজন ঢুকে পড়ে।” তাঁর অভিযোগ, “ডেপুটেশন দিতে আসা লোকজন যে ভাবে গালি দিচ্ছিল, তাতে হামলার আশঙ্কায় দোতলায় উঠে যাই। ওই সময়ে পুলিশ আমাকে নীচে গিয়ে তৃণমূলের স্মারকলিপি নিতে বলে। গোলমাল হবে না বলে আশ্বাসও দেয়। তার পরেই শুরু হয় মারধর, হেনস্থা।
পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশে আমাকে টেনে কলেজের বাইরে নেওয়ার ষড়যন্ত্রও হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। এক সহশিক্ষক বাঁচাতে এগিয়ে আসায় বেঁচে যাই। না হলে হয়তো মরেই যেতাম।” তার পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রবীণ কলেজ শিক্ষক। তবে যে ভাবে রাজ্যের নানা প্রান্তের মানুষ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, সে জন্য বারেবারেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
পুলিশ সুপার ফোন না ধরলেও রায়গঞ্জের ডিএসপি প্রদীপ চক্রবর্তী অবশ্য বলেছেন, “দিলীপবাবুর অভিযোগ ঠিক নয়। কারণ, গণ্ডগোলের সময়ে পুলিশ গিয়ে ওঁকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়। কলেজ চত্বরে থাকা শতাধিক ছাত্র পরিষদ সমর্থককে একদিকে আটকে রাখে। না-হলে সেদিন আরও বড় গোলমাল হতে পারত।”
রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি সঞ্জয় সিংহ অবশ্য জানান, ওই ঘটনার তদন্ত সম্পূর্ণ হয়নি। আইজি বলেন, “একটা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয়েছে। কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছেন। তদন্ত এখনও চলছে। সবই দেখা হবে।” প্রতিবাদ-সভার মঞ্চে এ দিন ছিলেন এবিটিএ-এর দার্জিলিং জেলা সম্পাদক তমাল চন্দ, শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর তথা কলেজ শিক্ষক পার্থসারথি দাস ও শিলিগুড়ি কমার্স কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হরেন ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য ও সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকারও। তবে তাঁরা মঞ্চে ওঠেননি। অনুষ্ঠানের পরে দিলীপবাবুর সঙ্গে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী ও জীবেশবাবু কথাবার্তা বলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.