মালদহের কাছে কারনপুরাতো স্টেশনে ব্রহ্মপুত্র মেলের দুর্ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যুর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ডিআরএম-সহ দুই কর্তাকে ‘ছুটি’-তে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে, শনিবার সকালে পূর্ব রেলের মালদহ ডিভিশনের রেলওয়ে ম্যানেজার হর্ষ কুমার এবং সিনিয়র ডিভিশনাল অপারেশন ম্যানেজার অবিনাশ মিশ্রকে সরে যেতে হয়েছে।
১২ বছর আগে গাইসালের রেল দুর্ঘটনায় ডিআরএম-কে ‘সাসপেন্ড’ করা হয়েছিল। লালুপ্রসাদ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বিহারের পটনা স্টেশনে রেল লাইনে মল-মূত্র পড়ে থাকার ঘটনায়ও এক ডিআরএম-কে ‘শো-কজ’ করা হয়েছিল। এর পরে অনেক রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সম্প্রতি সাঁইথিয়া স্টেশনে বনাঞ্চল এক্সপ্রেস ও উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সংঘর্ষের মতো বড় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও কখনও ডিআরএম-কে সরে যেতে হয়নি।
রেল সূত্রের খবর, রেলবোর্ড সদস্য আর গুপ্তকে মালদহে ডিআরএম পদে বসানো হয়েছে। নতুন সিনিয়র ডিভিশনাল অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন নবীন চন্দ্র। তিনি পূর্ব রেলের ডেপুটি চিফ ভিজিল্যান্স অফিসার ছিলেন। এই দুর্ঘটনায় এর আগে ছ’জন রেল কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তার মধ্যে মালগাড়ির চালক, গার্ড এবং কারনপুরাতোর স্টেশনমাস্টার রয়েছেন। নতুন ডিআরএম-এর অবশ্য দিল্লি থেকে মালদহে পৌঁছতে সময় লাগবে। মালদহে ‘ভারপ্রাপ্ত’ ডিআরএম হিসেবে পূর্ব রেলের (সদর) চিফ কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার যশোবন্ত সিংহ এ দিনই দায়িত্বভার নিয়েছেন। বিদায়ী ডিআরএম অবশ্য তাঁকে ‘সরানোর’ কারণ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
গত ১১ জানুয়ারি, বুধবার ভোরে মালদহ ডিভিশনের অন্তর্গত সাহেবগঞ্জ-বারহাড়ওয়া শাখায় কারনপুরাতো স্টেশনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পাথর-বোঝাই মালগাড়ি ‘ব্রেকহীন’ অবস্থায় আচমকাই পিছন দিকে গড়িয়ে ছুটন্ত ব্রহ্মপুত্র মেলের একটি সংরক্ষিত কামরার মাঝবরাবর ধাক্কা দেয়। তাতে কামরাটি দুমড়ে-মুচড়ে ‘কাপলিং’ খুলে লাইনচ্যুত হয়ে হেলে যায়। গুয়াহাটি থেকে নয়াদিল্লিগামী ব্রহ্মপুত্র মেলের পাঁচ জন যাত্রী এতে মারা যান। দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তেই রেলকর্তারা জানিয়েছিলেন, শুধু মালগাড়ির চালক বা গার্ডের ‘ভুল’ নয়, বেশ কয়েক জন কর্মী ‘গাফিলতি’তেই ঘটেছে এই কাণ্ড। দুর্ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি তদন্তের কাজে কারনপুরাতো স্টেশনে গিয়েছিলেন রেলের সেফটি কমিশনার (এনএফ সার্কেল) বলবীর সিংহ। গোড়ায় রেলবোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী, ছ’জন রেলকর্মীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার মালদহ ডিআরএম অফিসে গিয়েও তদন্তকারী রেলকর্তারা বেশ কয়েক জন রেলকর্মী এবং অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর পরেই ওই দুই রেলকর্তাকে ‘সরিয়ে’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে ২ জুন হর্ষ কুমার মালদহে ডিআরএমের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাঁর স্বল্প দিনের কার্যকালে ডিভিশনে দু’টি গুরুতর রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি খালতিপুর স্টেশনের কাছে বেঙ্গালুরুমুখী এর্নাকুলাম এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হলে উল্টোদিক থেকে আসা আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই দুর্ঘটনায় দু’জন মারা গিয়েছিলেন। ফের গত বুধবার করনপুরাতো স্টেশনে ব্রহ্মপুত্র মেলের দুর্ঘটনা। রেলের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ডিভিশনে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থায় রেলকর্তাদের খামতি ছিল।” বস্তুত, এ বিষয়ে তদারকির দায়িত্ব ডিআরএমের। কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি (এনএফ সার্কল) বলেন, “রেলের অফিসার-কর্মীদের গাফিলতিতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।” কারনপুরাতো স্টেশনে দুর্ঘটনার পরে ‘উদ্ধার’ কাজ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। মালদহ স্টেশন থেকে দুর্ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। কিন্তু দুর্ঘটনার দিন ‘রিলিফ ট্রেন’ অনেক দেরিতে পৌঁছয় বলে অভিযোগ। ওই ট্রেন আসার আগে স্থানীয় লোকজনই আহত এবং মৃতদের অনেককে উদ্ধার করেছিলেন। কোনও কোনও রেলকর্তার অভিমত, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এই ‘ত্রুটি’র জেরেও ডিআরএম-কে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে। |