প্রসূতির মৃত্যু
স্বামী আর মেয়ের বয়ানে গরমিল, বিভ্রান্ত স্বাস্থ্যকর্তারা
মজ সন্তানের জন্মের পর ঊষা তাঁতিকে নিয়ে ঠিক কোন হাসপাতালে প্রথমে গিয়েছিলেন স্বামী টিটু, তা নিয়ে ধোঁয়াশা শনিবারও কাটেনি। ঠিক কখন উষাদেবীর মৃত্যু হয়েছিল তা-ও জানতে পারেননি স্বাস্থ্য-কর্তারা।
ঊষা তাঁতির এক মেয়ে নিক্কি শনিবার বলেছে, “একটি সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে মা বাবাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিল। তা না শুনে তখনই ব্লেড দিয়ে নাড়ি কেটে দেয় বাবা। এর পরে মায়ের আর একটি সন্তান হয় এবং রক্তপাতে মা নেতিয়ে পড়ে।’’ নিক্কির দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে তারা প্রথমে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিল। তার কারণ নিজে গর্ভবতী হওয়ার সুবাদে সে ওখানেই কার্ড করিয়েছে। তার অভিযোগ, “মায়ের অবস্থা দেখে হাসপাতালের লোকেরা বলল, ‘মেরে এনেছেন। এর বাচ্চাদের নিয়ে আমরা বিপদে পড়ব। নেব না।’ তার পর আমরা শম্ভুনাথ হাসপাতালে যাই। ওরাও ফিরিয়ে দিল।” টিটু অবশ্য এ দিনও তাঁর আগের দাবি থেকে সরে আসেননি। বলেছেন, “আমার মেয়ে ঠিক বলছে না। আমরা ওই রাতে প্রথমে চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে গিয়েছিলাম। ওখানেই আমার বউয়ের কার্ড ছিল। কিন্তু ওরা ফিরিয়ে দিল। তখন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে গেলাম। ওরাও নিল না। শেষে বাড়ি ফিরে এলাম।” ঊষার মৃত্যু বাড়িতেই হয়েছে বলে টিটুর দাবি।
চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে এখন দুই ভাইবোনকে যে ওয়ার্মারে রাখা হয়েছে, শনিবার দুপুরে তার পাশেই বসেছিল বছর পনেরোর নিক্কি। তার চার বছরের ছেলে রয়েছে। এখন ফের আট মাসের গর্ভবতী। তাই বেঞ্চিতে বসে থাকতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল তার। হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, “পরপর দু’টো বাচ্চা হওয়ার পর আমার সামনেই মায়ের দম বেরিয়ে গেল। বাবা ভয় পেয়ে ট্যাক্সি ডাকল। তার পর মাকে পিছনের সিটে তুলে আমি একটা বাচ্চাকে নিলাম, বাবা আর একটাকে।” হাসপাতাল ফিরিয়ে দেওয়ার পরে মাকে নিয়ে তারা আবার ঝুপড়িতে ফিরে আসে। নিক্কি জানাচ্ছে, পরের দিন বেবি বিবি নামে স্থানীয় এক দিনমজুর দুই সদ্যোজাতকে নিয়ে চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে যান।
উষাদেবীর চার সন্তান। - নিজস্ব চিত্র
তখন তাদের ভর্তি নেওয়া হয়। নিক্কির যাবতীয় বক্তব্য এ দিন লিখিত আকারে স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন চিত্তরঞ্জন সেবাসদন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “চার সদস্যের তদন্ত কমিটি এই ঘটনায় হাসপাতালের কোনও গলদ খুঁজে পাননি। আমরা রোগীকে ফেরাইনি। মৃতার মেয়েও সে কথা বলেছে। প্রসূতি ও সদ্যোজাতদের ফিরিয়েছে অন্য হাসপাতাল।”
স্বাস্থ্য দফতর কী বলছে? মেয়ে ও বাবার দু’রকম বক্তব্যে তাঁরা বিভ্রান্ত। তদন্ত কমিটি সব দিক খতিয়ে দেখছে। স্বাস্থ্য-কর্তাদের বক্তব্য, “প্রসূতি মারা গেলেও সদ্যোজাতদের ভর্তি করে নেওয়া উচিত ছিল, হাসপাতালগুলো সেটা করেনি। এটা গর্হিত অপরাধ।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনিবার দুই সদ্যোজাতের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এই দু’জনকে নিয়ে মৃতা ঊষা তাঁতির ১০টি সন্তান। তিনটি মেয়ে কিছুটা বড়। দু’টি মেয়ে ইতিমধ্যে অন্যত্র চলে গিয়েছে। ছেলে তিনটির মধ্যে বড় দু’টি এখনই নেশাসক্ত। লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। শনিবার বিকেলে এদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার তাদের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে হাজির করা হবে। ঊষা তাঁতির মৃত্যু প্রশ্ন তুলেছে, স্বাস্থ্য পরিষেবায় উন্নতির জন্য জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন থাকলেও শহরের বস্তিবাসীদের জন্য কেন সেই ধরনের প্রকল্প নেই। পরিবার কল্যাণ দফতরের কর্তারা স্বীকার করেছেন, কলকাতার ফুটপাথে কিংবা ঝুপড়িতে বহু শিশুর জন্ম হচ্ছে। মৃত্যুও হচ্ছে অনেকের। টিকাকরণের বালাই নেই। নেই জন্মনিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সচেতনতার উদ্যোগ। রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফুটপাথে কোথায় শিশুর জন্ম হচ্ছে, মা মারা যাচ্ছে, তা দেখা স্বাস্থ্য দফতরের কাজ নয়।” ফলে এমন যে আর ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.