স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা প্রকল্পে একটি ফলের বাগান থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১৩ জনকে ‘সিপিএম ঘনিষ্ঠ’ তকমা লাগিয়ে তাড়ানো এবং বাগানটি দখল করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হুগলির আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের সাতমাসা গ্রামের মালিকপাড়ার এই ঘটনা অবশ্য প্রায় ১০ মাস আগের। শুক্রবার দুপুরে ওই ১৩ জনের পক্ষ থেকে আরামবাগের মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যাঁর নেতৃত্বে ওই ‘দখলদারি’ হয় বলে অভিযোগ, সেই তৃণমূল নেতা অবশ্য অভিযোগ মানেননি। মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তিন দিনের মধ্যে বিডিও-কে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাতমাসা গ্রামে ‘সবুজ ভাণ্ডার’ নামে ওই স্বনির্ভর দলটি কাজ শুরু করে ২০০৬ সালে। দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী ১৩ জনকে নিয়ে গড়ে ওঠা দলটি পঞ্চায়েত থেকে অনুমতি নিয়ে এক একর খাস জমিতে বাগান তৈরি শুরু করে। সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পের টাকায় ওই বাগানে আম, পেয়ারা, কাঁঠাল-সহ মোট ২৯০টি গাছ লাগানো হয়। পাঁচ বছরে গাছগুলির উচ্চতা হয়েছে ১৮ থেকে ২০ ফুট। বাগান থেকে আয়ের মুখ দেখছিলেন ওই ১৩ জন। অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে, গত ১৪ মে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বে কয়েক জন দলীয় সমর্থক বাগানটিতে লুঠপাট চালায় এবং তার দখল নেয়। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন এবং মহকুমা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জানানো হলেও লিখিত অভিযোগ হল এত দিন পরে।
এর কারণ প্রসঙ্গে ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পক্ষে তপন মালিক, অষ্ট পরামানিক এবং শান্তিনাথ মালিক বলেন, “গাছে হাত দিলে বা বাগানে ঢুকলে আমাদের হাত কেটে নেবে বলেছে সোহরাবের লোকেরা। কোথাও অভিযোগ করলেও ঘরে আগুন জ্বালিয়ে প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। সেই ভয়েই এত দিন লিখিত অভিযোগ জানাইনি। কিন্তু দিনমজুরি করে আর সংসার চালাতে পারছি না। তাই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।” তৃণমূল নেতা সোহরাব হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সিপিএম-ঘনিষ্ঠ ১৩ জনের দলটিকে তাড়াইনি। তারা নিজেরাই চলে গিয়েছে।” তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “ওখানে বেনিয়ম হচ্ছিল বলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। যেখানেই বেনিয়ম হচ্ছে মনে হবে, সেখানেই হস্তক্ষেপ করব। মাটি ফেলে বাগানটি সংস্কার করা হবে। বাগানের সব ফল বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছিল। গ্রামের লোককে আগে খেতে দিতে হবে। তারপরে বিক্রি হবে। আমি যে দলকে দায়িত্ব দিয়েছি তাদের কিন্তু এখান থেকে আর্থিক ফায়দা নেই।”
পঞ্চায়েতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সিপিএমের যুথিকা পণ্ডিত বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসে আমরা আতঙ্কিত। ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ললোকজন খালি পঞ্চায়েত অফিসে এসে কাঁদছেন তাঁরা। সমস্ত বিষয়টি বিডিও এবং মহকুমাশাসককে জানিয়েছি।” ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল সভাপতি শেখ জায়েদ রহমান ঘটনাটি প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, “দলের ভাবমূর্তি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার ঘটনাগুলি দলের বিভিন্ন স্তরে জানানো হচ্ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” তবে আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার বক্তব্য, “এত বড় অন্যায়ের কথা আমাকে কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” |