সরকারের জমি নিয়ে সরকারেরই তিন বিভাগের কাজিয়া শুরু হয়েছে। কৃষি দফতরের একই জমির কিছু অংশ সরকারেরই দুই বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এতে তৃতীয় একটি সরকারি বিভাগের দফতরে যাওয়ার রাস্তা আটকে পড়েছে।
ম্যাপ ঠিকমতো না-দেখে জমি বণ্টন করায় সরকারের একটি দফতরের রাস্তা সমেত জমি বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসকের নির্দেশ উপেক্ষা করে পাঁচিল গাঁথার অভিযোগ উঠেছে একটি দফতরের বিরুদ্ধে। সেই কাজ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে।
প্রায় সাড়ে তিনশো একর জমি নিয়ে চুঁচুড়ায় ধান গবেষণা কেন্দ্র। এই কেন্দ্র কৃষি দফতরের অধীন। কৃষি দফতরেরই জমিতে গড়ে ওঠে উদ্যান পালন দফতরের ভবন। ২০০৭ সালে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের আওতায় চলে যায় উদ্যান পালন দফতর। দফতর ভিন্ন হয়ে যাওয়ায় ধান গবেষণা কেন্দ্রের ৩০ একর জমি কৃষি দফতর থেকে তাদের দেওয়া হয়। এর পর কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্যান পালন ভবন লাগোয়া ২২ একর জমি দেয় কৃষি দফতর। সেখানে কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র (কেভিকে) গড়ে তোলা হয়। উদ্যান পালন দফতরের জমিটির ডান দিকে কেভিকে-র অবস্থান। আর বাঁ-দিকে জমি দেওয়া হয় শিক্ষা দফতরকে। এই ডান দিক-বাঁদিকের জমির মাঝখান দিয়ে গিয়েছে উদ্যান পালন দফতরে যাওয়ার রাস্তা। বিবাদের সূত্রপাত এই রাস্তার জমিকে ঘিরেই। অভিযোগ, দুই দফতরের জমিই ওই রাস্তার মধ্যে পড়েছে। ফলে, রাস্তাটিই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। |
শিক্ষা দফতরের জমিতে রয়েছে রাজ্যের মহিলাদের শারীর শিক্ষা বিভাগের ভবন। এই ভবনটি সম্প্রতি তৈরি হয়েছে। ভবনটিকে ঘিরে শুরু হয়েছে সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ। ওই বিভাগের দাবি, সীমানা প্রাচীরটি জমির মাপ মতো ওই রাস্তার উপর দিয়েই যাওয়ার কথা। কারণ, রাস্তাটি ম্যাপ অনুযায়ী তাদের জমির মধ্যেই পড়ে। মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামল মজুমদার বলেন, “আমরা কোনও দফতরের জমিতে হস্টেল বা সীমানা প্রাচীর করিনি। উল্টে, কেভিকে আমাদের ২ একর জমি তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে নিয়েছে। আমাদের হাতে প্রমাণ আছে।” ইতিমধ্যেই হুগলির জেলাশাসক মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষকে সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
শ্যামলবাবুর বক্তব্য, “অযথাই হুগলি জেলা প্রশাসন আমাদের কাজ বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে। খরচও বাড়ছে। সময়ে কাজ না হলে টাকা ফেরত চলে যাবে। অথচ বিষয়টির মীমাংসা হচ্ছে না।”
এই দাবি অবশ্য মানতে চাননি জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক দীপক ঘোষ। তিনি বলেন, “ম্যাপে থাকা ৬০ বছরের পুরনো রাস্তা আইনত এ ভাবে হস্তান্তর করা যায় না। রাস্তা সমেত জমি আদৌ হস্তান্তর করা হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। কারণ, রাস্তার ডান দিকের জমিটির দাবিদার দু’পক্ষই। শারীর শিক্ষা দফতর এবং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র— দু’টি দফতরেরই দাবি, জমি তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে।” কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের ডিরেক্টর (এক্সটার্নাল এডুকেশন) অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একই জমি দু’টি দফতরকে দেওয়াতেই এই সমস্যা। বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়। রাইস রিসার্চ দফতরের জয়েন্ট ডিরেক্টরকে বিষয়টি মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনও ব্যবস্থা না-নেওয়ায় জটিলতা বাড়ছে।” এই বিষয়ে চুঁচুড়ার রাইস রিসার্চ সেন্টারের জয়েন্ট ডিরেক্টর চিন্ময় কুণ্ডু বলেন, “সমস্যা একটা আছে। তবে এটি একেবারেই আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।”
জেলা প্রশাসন চলতি মাসে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক ডেকেও তা বাতিল করে। অবশ্য হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আর অ্যালিয়াস ভেজ বলেন, “এখন মহিলাদের হস্টেল তৈরির কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বিএলআরও-কে পুরো বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী নরেন দে বলেন, “মহিলাদের হস্টেলের নিজস্ব জমি না-থাকায় ওঁদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তাই আমি ওঁদের জমি দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছিলাম। কিন্তু কতটা জমি, কী ভাবে বণ্টিত হয়েছে তা অনেক আগের ব্যাপার। এখন আর ঠিক মনে নেই।” |