সকাল ৭টা: কয়েকশো বাসের লম্বা লাইন ডায়মন্ড হারবার শহরে। বন্ধ যান চলাচল।
সকাল ১০টা: লাইন বাড়ল কুলপির হটুগঞ্জ পর্যন্ত।
দুপুর ২টো: যান চলাচল বন্ধ হল করঞ্জলিতে। কারণ, রাস্তা জুড়ে বাসের সারি।
বিকেল ৫টা: কুলপিরই তুলসির চকে হাজার তিনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে।
একটি অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করা সম্ভব না হওয়ায় শনিবার, মকর সংক্রান্তির আগের দিন সাগরমেলায় যেতে চূড়ান্ত নাকাল হতে হল পুণ্যার্থীদের। যাঁদের ভোরে মেলাপ্রাঙ্গণে পৌঁছনোর কথা ছিল, তাঁরা পৌঁছলেন বিকেলে। দীর্ঘ সময় রাস্তায় কাটিয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, কাউকে খাবার কিনতে হল চার গুণ দাম দিয়ে। কেউ খাবার পেলেনই না। অভিযোগ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুণ্যার্থীদের হয়রানি কমাতে ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। রাস্তাঘাটে পুলিশও কম ছিল।
ফি-বছরই কাকদ্বীপের লট-৮ জেটিঘাটের কাছে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হয়। এ বার বৃষ্টিতে সেই বাসস্ট্যান্ডে জল জমে। জল শুকোলেও বাসস্ট্যান্ড কাদায় ভরা। ফলে, সেখানে বাস দাঁড়াচ্ছে না। বিকল্প ব্যবস্থাও হয়নি। শনিবার সকালে দেশের দূরদূরান্ত থেকে শ’য়ে শ’য়ে বাস এসে পড়ায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে কাকদ্বীপ থেকে ডায়মন্ড হারবার হয়ে কুলপি পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার জুড়ে। যার মোকাবিলায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ব্যর্থ বলে অভিযোগ। |
বিকল্প ব্যবস্থা যে করা যায়নি, তা মানছে জেলা প্রশাসন। কর্তারা জানিয়েছেন, লট-৮ জেটিঘাটের কাছে চাষজমি ভাড়া নিয়ে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড করা হয়। কিন্তু বৃষ্টিতে সমস্যা হয়েছে। বালি ফেললে জমি নষ্ট হয়ে যাবে। আশপাশে প্রশাসনের নিজস্ব জমি না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়নি। অন্য জমি ভাড়া নিয়ে কেন অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড হল না, সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা মেলেনি। অতিরিক্ত জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “প্রতি বছরই সংক্রান্তির আগের দিন প্রচুর ভিড় হয়। এ বারে বৃষ্টির জন্যই অসুবিধা হয়েছে। তবু, পরিস্থিতির মোকাবিলায় জোর চেষ্টা চালিয়েছি।”
পুণ্যার্থীদের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য। কলকাতার তপন বসু এ দিন ভোরে সপরিবার বাবুঘাট থেকে বাসে চাপেন। সওয়া দু’টোতে সেই বাস দাঁড়িয়ে কুলপি মোড়ে। তিতিবিরক্ত তপনবাবু বলেন, “সকাল থেকে খাবার জল পাচ্ছি না। হোটেলে খাবারের চার গুণ দাম চাইছে। প্রশাসনের দেখাই নেই।’’ মধ্যপ্রদেশ থেকে বাসে করে আসা ষাটোর্ধ্ব রামবিহারি লাল ভেবেছিলেন ভোরে লট-৮ ঘাটে পৌঁছে যাবেন। কিন্তু সকাল ৯টায় তাঁদের বাস দাঁড়িয়ে ডায়মন্ড হারবারে। প্রৌঢ়ের ক্ষোভ, “কয়েক বছর আগেও এমন সমস্যা ছিল না। বাসে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।”
বস্তুত, এ বার লট-৮ এর চার কিলোমিটার আগে কাকদ্বীপের নতুন রাস্তার মোড়ে পুণ্যার্থীদের নামিয়ে দিয়ে যত্রতত্র ‘পার্ক’ করা হচ্ছে বাস। তা থেকেই যানজটের সৃষ্টি। পুণ্যার্থীদের আরও সমস্যা বাড়ে মুড়িগঙ্গা নদীতে সকাল ১১টা থেকে ভাটা শুরু হয়ে যাওয়ায়। দীর্ঘ ক্ষণ বন্ধ থাকে ভেসেল চলাচল। তার জেরে লট-৮ জেটিঘাটেও হাজার হাজার পুণ্যার্থী জড়ো হয়ে যান। চেমাগুড়ি-কচুবেড়িয়ার মধ্যেও বাস চলাচল ওই সময়ে বন্ধ রাখা হয়। এ দিনের ভিড়ে অবশ্য হাসি ফুটেছে ‘প্রি-পেড’ ট্যাক্সি-চালকদের। বিকেল থেকে মেলাও সরগরম। প্রশাসনের দাবি, এসেছেন প্রায় ২ লক্ষ পুণ্যার্থী। এ দিন প্রথম বার মেলায় এসে কপিলমুনির আশ্রমে পুজো দেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ যশোবন্ত সিংহ। বলেন, “ব্যবস্থা খুব ভাল। রাজ্য ভাল কাজ করেছে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ জন্য শুভেচ্ছাও জানান তিনি। সন্ধ্যায় আসেন বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী।
সাগরে এ দিন মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। শুক্রবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন কুলপির বিডিও। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
|
সহ প্রতিবেদন: দিলীপ নস্কর |