ধান-চাল কেনার পর রাজ্যের তরফে বিল পাঠালে দ্রুত সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাজ্য সরকারকে দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ দফতরের সচিব বি সি গুপ্ত। শনিবার খাদ্য ভবনে রাজ্যের জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি তেমনই জানিয়েছেন বলে খাদ্যমন্ত্রী বক্তব্য।
টাকার অভাবেই রাজ্যের ধান সংগ্রহ মার খাওয়ায় কেন্দ্রের কাছে রাজ্য আরও ১০০০ কোটি টাকা অগ্রিম চেয়েছে। সেই টাকা এক লপ্তে রাজ্যকে না-দিলেও ধান-চাল কেনার পর বিল পাঠালেই দ্রুত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলেছে বলেই জ্যোতিপ্রিয়র দাবি। আপাতত কেন্দ্রের থেকে রাজ্য ১২০০ কোটি টাকা পেয়েছে। মহাকরণে মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে আলোচনার পর কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিব আবার বলেন, “এ রাজ্যে ধান-চাল সংগ্রহে এত সমস্যার কথা বলা হচ্ছে। আমার রাজ্য পঞ্জাবে ২৫ দিনে ১৪০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ হয়েছে।” আরও বেশি ধান-চাল সংগ্রহ করতে ২.৫ শতাংশ হারে কমিশন দিয়ে কৃষি সমবায়কে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যে ক্ষমতা ‘পরিবর্তনে’র পর এই প্রথম কেন্দ্রীয় খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ দফতরের এই পর্যায়ের পদস্থ অফিসার রাজ্যে এসে বৈঠক করলেন। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির সাপেক্ষেই কেন্দ্রীয় সচিবের সফর। তৃণমূলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতার মতে, সাম্প্রতিককালে ধান-পাটের সহায়ক মূল্য নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস যে ভাবে আন্দোলনে নেমেছে, তা মুখ্যমন্ত্রীকে যারপরনাই ক্ষুব্ধ করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর সেই ‘ক্ষোভ’ প্রশমনেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে খাদ্য সচিবকে রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পাঠানো হয়েছে। এবং তা ঘটেছে এমন একটা সময়ে, যখন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড মমতার সঙ্গে সম্পর্ক ‘মেরামত’ করতে আগ্রহী।
খাদ্য ভবনে বি সি গুপ্ত বলেন, “কেন্দ্র নেগোশিয়েবল ওয়্যারহাউসিং রেগুলেশন চালু করেছে। কৃষক ওই সব গুদামে পণ্য রাখলেই তাঁকে একটি রসিদ দেওয়া হবে। সেই রসিদ দেখিয়ে কৃষক ৭% হারে ব্যাঙ্ক ঋণ নিতে পারবেন। এ রাজ্যে এই সুবিধা চালু করা দরকার।” এ বার রাজ্যে ১৫০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান হয়েছে দাবি করে কেন্দ্রীয় খাদ্য সচিবের সামনেই খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্র আমাদের অনুমতি দিয়েছে, আমরা রাজ্য থেকে চাল সংগ্রহ করব। সেই চালই রেশনের মাধ্যমে রাজ্যে বিলিবন্টন করতে পারব।” খাদ্যসচিবও বলেন, “এ রাজ্যে যথেষ্ট ধান হয়। তাই গণবণ্টন ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ধান-চাল রাজ্য নিজেই সংগ্রহ করে নিতে পারে। বিশেষত, করে খাদ্য নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর এই উদ্যোগ প্রয়োজন।”
খাদ্যমন্ত্রী জানান, বৈঠকে গণবণ্টন ব্যবস্থায় কম্পিউটার ব্যবস্থা চালু করার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। কথা হয়েছে বায়োমেট্রিক অথবা বারকোড রেশন কার্ড তৈরির বিষয়টি নিয়েও। এ জন্য প্রয়োজন ২৬০ কোটি টাকা। সেই টাকা রাজ্য সরকারের নেই। কেন্দ্রকে টাকা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গ কথা বলবেন বলে খাদ্য সচিব তাঁকে জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় খাদ্য সচিব বলেন, “রেশন ব্যবস্থা কম্পিউটার-চালিত এবং বারকোড বা বায়োমেট্রিক রেশন কার্ড চালু হলে ৩০-৪০ শতাংশ খাদ্য শস্য বাঁচানো যাবে।” এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যসচিব বলেন, জঙ্গলমহলে ২টাকা কিলোগ্রাম দরে চাল দেওয়া শুরু হয়েছে। আরও কিছু ‘আউটলেট’ খোলা হবে থানার কাছাকাছি এলাকায়। সেখান থেকেই ওই চাল দেওয়া হবে। জঙ্গলমহলে বিশেষ রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। |