মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বৃহস্পতিবারই ঝাড়গ্রামে জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ হলে তার ‘রিজয়েন্ডার’ দেওয়া হবে। শনিবার থেকেই ‘প্রতিবাদের’ সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।
স্বাস্থ্য দফতরের কাজ নিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের ‘কটাক্ষের’ জবাব দিলেন শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে পার্থবাবু বলেন, “এখানে এসেছি উত্তর দিতে। আবার যদি ওঁরা (বাম নেতারা) কিছু বলেন, আবার আসব উত্তর দিতে।”
অন্য দিকে, সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন হচ্ছে না বলে ইমাম ক্বারী ফজলুর রহমান রাজ্য সরকারের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম মৌলানা নুরুর রহমান বরকতি এবং তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান ইদ্রিশ আলি। ঘটনাচক্রে, স্বাস্থ্য এবং সংখ্যালঘু উন্নয়নওই দুই দফতরেরই দায়িত্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দুই সরকারি হাসপাতাল ফিরিয়ে দেওয়ার পরে এক প্রসূতির মৃত্যুর প্রেক্ষিতে শুক্রবার বামফ্রন্টের চার শরিক দলের ছাত্র সংগঠনের কনভেনশনে সূর্যবাবু বলেছিলেন, “ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।” এর বিরুদ্ধে নিজে সরাসরি মুখ না খুলে পার্থবাবুকে জবাব দেওয়ার দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তৃণমূল ভবনে সে কথা জানিয়েই পার্থবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। আর তখন কিছু বাতিল নেতা মুখ খুলছেন। স্বাস্থ্য ও পঞ্চায়েতের বেহাল অবস্থা হয়েছে তো তাঁদের (সূর্যবাবুদের) আমলে! তখন উনি কেন ইস্তফা দেননি?”
 সাম্প্রতিক কালে একের পর এক ঘটনায় রাজ্যের প্রধান প্রশাসক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সূর্যবাবু বলেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তাতে ১০ সেকেন্ডও চুপ করে থাকতে পারছি না!” পার্থবাবুর জবাব, “অনেক মুখ পুড়িয়েছেন। অনেক শিশুমৃত্যু ঘটিয়েছেন। আর ও মুখ দেখাবেন না। আবার মুখ খুলতে চাইছেন!” সূর্যবাবুর নাম না-করে পার্থবাবুর হুঁশিয়ারি, “বেশি মুখ খোলাবেন না। তা হলে বলে দেব, কোন পিটিটিআইয়ের পিছনে কার আত্মীয় রয়েছেন বা স্বাস্থ্য দফতরে কারা খারাপ মালপত্র সরবরাহ করেছে।” প্রসঙ্গত, সূর্যবাবুর স্ত্রী একটি প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (পিটিটিআই) সঙ্গে একদা যুক্ত ছিলেন। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, পার্থবাবুর ‘হুঁশিয়ারি’ সে দিকে লক্ষ্য রেখেই।
বাম জমানার ‘অপদার্থতা’র উল্লেখ করে পার্থবাবুর বক্তব্য, “লড়াই-অনশন-আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে কৃষক-শ্রমিকের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করেছেন।” মানুষের কাছে ‘দায়বদ্ধ’ মমতা-সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে পার্থবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বাম সরকারের ৩৪ বছরের সার্বিক অপদার্থতা দূরে সরিয়ে রেখে কাজ করে দেখাচ্ছেন। ইস্তাহারের মুখ্য কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন তিনি।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম মমতাকে ‘হিটলারের নাতনি’ বলে যে মন্তব্য করেন, সেই প্রসঙ্গ টেনে পার্থবাবু এ দিন বলেন, “ওঁরাই (সিপিএম নেতৃত্ব) তো হিটলারের জাতভাই! হিটলারের আত্মীয়রা আলিমুদ্দিনে বসে রয়েছেন।”
গত বৃহস্পতিবারই ইমাম ক্বারী ফজলুর রহমান অভিযোগ করেছিলেন, নতুন সরকার মুসলমিদের জন্য কোনও কাজ করছে না। তার ‘প্রতিবাদ’ জানাতে এ দিন ইদ্রিশ বলেন, “ওই ইমাম সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম এবং আব্দুস সাত্তারের ঘনিষ্ঠ। আমরা মনে করি, তিনি সিপিএমের চর এবং
তাদের পরামর্শক্রমেই ওই মন্তব্য করেছেন। অথবা উচ্চতর পদের লোভে তিনি ওই সব বলছেন। উনি (রহমান) বর্তমানে রাজ্য হজ কমিটির সদস্য। তিনি নিশ্চয়ই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে উচ্চতর কোনও পদ চান।” তবে অভিযোগ নস্যাৎ করে ইমাম ফজলুর বলেন, “আমি কখনও কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত থাকিনি। সে
বাসনাও নেই। কখনও কোনও পদও চাইনি। কে কী পদ দিল, তা-ও দেখিনি। এখন তো প্রশ্নই ওঠে না! আমি মনে করি, যে ভাল কাজ করে, তাকে ভাল বলতে হবে। যেটা খারাপ, তার নিন্দা করতে হবে।”
|