সিডলদের বিরুদ্ধে সচিনরা শুধু নন। অস্ট্রেলিয়ায় বিপর্যয়ের ধাক্কায় এ বার আক্রান্ত কিনা আইপিএল-ও!
ডনের দেশে ভারতীয় সুপারস্টারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় এখন আইপিএল কর্তাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, এপ্রিলে এক মাসব্যাপী প্রতিযোগিতাতেও এর রেশ পড়বে কি না? একেই গত বছর দর্শক উপস্থিতির হার পূর্বেকার আইপিএল গুলোর থেকে ২৫ ভাগ কম ছিল। টেলিভিশন ভিউয়ার্স রেটিং (টিভিআর) কমে গিয়েছিল ৩.৯১ শতাংশ। এই বিভীষিকার সঙ্গে যোগ হয়েছে এ বার অস্ট্রেলিয়ার মহাবিপর্যয়।
নিজেদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সঙ্কটের মুখে দাঁড়ানো আইপিএল কর্তারা দর্শক টানার নানা স্ট্র্যাটেজি ছকছেন। সাধারণ ধারণা হল, দর্শক অনুৎসাহে দেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত টেস্ট ক্রিকেট। এমনকী ইডেনও শততম টেস্ট সেঞ্চুরির মুখে দাঁড়ানো সচিনকে দেখতে ভেঙে পড়ে না। কিন্তু টি-টোয়েন্টি নিরাপদ। তিন ঘণ্টার ক্রিকেট দেখতে লোকে ঠিক ভিড় করে আসে। আসবে।
কিন্তু গোয়ায় খুব সম্প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের সঙ্গে বসা দু’দিনের বৈঠকে আইপিএল কর্তারা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তাঁরা অশনি সঙ্কেত দেখছেন এবং অবিলম্বে দর্শক টানার স্ট্র্যাটেজি চালু করে দিতে চান। দেশে এমনকী টি-টোয়েন্টিরও বাজার আর নিশ্চিত বলে কর্তারা মনে করছেন না। বরঞ্চ ভাবছেন দর্শক অর্থাৎ কনজিউমার-ই আসল রাজা। তাকে বিনোদন দেওয়ার নিত্য নতুন পথ আবিষ্কার করতে হবে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের কাছে এঁদের দেওয়া চার প্রস্তাব যদি গৃহীত হয়, তা হলে ভারতের মতো ক্রিকেটশাসিত দেশে প্রথম সচেতন ভাবে দর্শক টানার স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ হবে। সচিন-সৌরভ-রাহুল-সহবাগরা থেকেও হাড়ে কনকনে হাওয়া ঢুকে গিয়েছে যে, এঁদের সম্মিলিত চৌম্বকক্ষেত্রও স্টেডিয়াম ভরানোর জন্য যথেষ্ট হবে না। |
গ্যালারি ভরাতে নতুন স্ট্র্যাটেজির ভাবনা আইপিএল কর্তাদের। |
কর্তাদের সবচেয়ে বেশি ভয় দিনের ম্যাচগুলো নিয়ে। গত বারের আইপিএলে দেখা গিয়েছে দিনের ম্যাচগুলো না পেয়েছে টিভি রেটিং। না দর্শক আনুকূল্য। এ বার অনুষ্ঠেয় ৭৬ ম্য্যাচের মধ্যে ২৩ ম্যাচ দিনের বেলায়। সেগুলোতে লোক টানার ব্যাপারে নির্দিষ্ট তিন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। আপাত পরিকল্পনা হল, হয় দু’ইনিংসের মধ্যবর্তী সময় বা ম্যাচ শেষ হওয়ার পর নতুন কিছু বিনোদন উদ্ভাবন করা।
১) ক্রিকেটার নন অথচ আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটি। সবাই এক ডাকে চেনে এমন কিছু মানুষকে দিয়ে হাফটাইমে ডাবল উইকেট খেলিয়ে দেওয়া। তিন জনের নাম নমুনা হিসেবে আইপিএল কর্তারা দিয়েছেন। উসেইন বোল্ট। লুই হ্যামিল্টন। এবং হ্যারি পটারের নায়ক ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ।
২) ম্যাচের মধ্যে বা শেষে সিঙ্গল উইকেট ছক্কা মারার প্রতিযোগিতা করা। দু’টো দলকেই বলা হবে এক জন করে ক্রিকেটারকে মনোনয়ন করতে। এঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়বেন। অনেকটা বোলআউট-এর ঢঙে ‘সিক্সার্স আউট’।
৩) দু’দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা দল করে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলবেন।
এই আইডিয়াটা কর্তাদের মাথায় আসে গত বছর আইপিএলে বিজয় মাল্য বনাম প্রীতি জিন্টার টিমের ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দেখার পর। হঠাৎ স্বতঃর্স্ফূত ভাবে ম্যাচটা হয়েছিল কিন্তু দর্শকদের মধ্যে তুমুল সাড়া পড়ে। শুধু হালকা অস্পষ্টতা রয়েছে যে, মালিকরা টিম করে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলবেন মানে কি তাঁদের দলে সাপোর্ট স্টাফে থাকা প্রাক্তনরাও খেলতে পারেন?
ধরা যাক কেকেআর খেলছে আরসিবি-র বিরুদ্ধে। তখন কি মাল্যর অধিনায়কত্ব করা টিমে কুম্বলে আর শাহরুখের টিমে আক্রম খেলতে পারেন? প্রাথমিক ভাবে নাকি বলা হয়েছে, প্রথম শ্রেণি আর টেস্ট ক্রিকেট যাঁরা খেলেছেন তাঁরা খেলতে পারবেন না। এর অর্থ আক্রম বা অন্য কেউ শাহরুখের ক্যাপ্টেন্সিতে খেলতে পারবেন না। তৈরি হওয়ার আগেই এই খসড়া অংশ নিয়ে উত্তেজনা প্রচুর। সুতরাং যদি প্রাক-এপ্রিল খসড়া নিয়ম বদলে যায়, অবাক হওয়ার কিছু নেই।
অস্ট্রেলিয়ান হিমশৈলের ধাক্কায় আইপিএল কর্তারা এতটাই কম্পমান যে, দিনের ম্যাচে লোক টানার স্ট্র্যাটেজি ছাড়াও তাঁরা আরও একটা বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন। সেই চতুর্থ বিষয় হল উইকেট। এঁদের গবেষণা অনুযায়ী গত আইপিএলে যে দর্শক হার কমেছিল তার পিছনে দেশে বিভিন্ন প্রান্তে উইকেট-ধারাবাহিকতার অভাব। কোথাও তা ছিল প্রচণ্ড ভাবে বোলিং নির্ভর, কোথাও ব্যাটিং নির্ভর। এ বার সার্কুলার দিয়ে বলে দেওয়া হচ্ছে, সব কেন্দ্রে ব্যাটিং নির্ভর উইকেট করতে হবে। যাতে প্রচুর রান ওঠে এবং দর্শকরা খেলা থেকে প্রয়োজনীয় বিনোদন পান। অতীতে বিভিন্ন কেন্দ্রে পিচ প্রস্তুতকারীদের ওপরই দায়িত্ব দেওয়া হত। অথবা পিচ কমিটিকে। এ বারের আইপিএল কর্তারা পিচের দায়িত্ব সরাসরি বোর্ড সচিব সঞ্জয় জাগদালেকে দিয়েছেন। জাগদালেও গোয়ার বৈঠকে হাজির ছিলেন।
তিনি-সহ কোনও বোর্ড কর্তা নতুন প্রস্তাবগুচ্ছ নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি দেখে আরও বোঝা যাচ্ছে, ডনের দেশের হত্যালীলায় কর্তারা ভেতরে ভেতরে কতটা ভয়ার্ত হয়ে আছেন! |