তাঁর সওয়া চার বছরের অধিনায়কত্ব জীবনে এ রকম সন্ধিক্ষণে আর কখনও দাঁড়াননি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। যেখানে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় নজিরবিহীন বিপর্যয়ের জন্য দেশের ক্রিকেটমহল তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। চ্যানেলে বিশেষজ্ঞরা আক্রমণ করছেন। জনতা গর্দান চাইছে। কে বলবে মাত্র কয়েক মাস আগেই তিনি ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী বন্দিত ভারত অধিনায়ক!
আর এ রকম একটা আবহেই কি না রবিবার চেন্নাইয়ে জাতীয় নির্বাচক কমিটি বসছে অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্টের দল বাছতে! এমনিতে ওয়ান ডে-র নিয়মমাফিক সব অদলবদল। সুরেশ রায়না-মনোজ তিওয়ারিরা ঢুকবেন। শোনা যাচ্ছে সচিন তেন্ডুলকর বোর্ডকে জানিয়েছেন তিনি এক দিনের সিরিজে খেলবেন। শনিবার রাত পর্যন্ত নির্বাচকদের কাছে যদিও কোনও বার্তা নেই। হরভজনের প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নেই কারণ তিনি এখনও ফিট নন। তেমনই ফিট নন যুবরাজ সিংহ। ইরফান পাঠানকে ফেরানোর কথা উঠছে। বরুণ অ্যারণ ফিট নন বলে অশোক দিন্দার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
কিন্তু এ সব ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠছে ক্রিকেটমহলে আরও বড় জল্পনা। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় উপর্যূপরি বিপর্যয়ে কি বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী? অধিনায়ক বদল-টদল নিয়ে কথা হতে পারে? বৈঠকের আগের রাতে জাতীয় নির্বাচকদের কারও কারও সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, ধোনির মধ্যে সেই ঝলক তাঁরাও খুঁজে পাচ্ছেন না। বিশেষ করে বিদেশে তাঁর নেতৃত্বগুণ ভীষণ ভাবে মাইক্রোস্কোপের তলায় পড়ছে। কিন্তু নির্বাচকদের যতটা উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে ধোনির নেতৃত্ব নিয়ে তার চেয়েও বেশি জেরবার দেখাচ্ছে তাঁর বিকল্প বাছা নিয়ে। একদম সোজা হিসেবে ধোনির বিকল্প হতে পারতেন বীরেন্দ্র সহবাগ। বহু দিন ধরে সহ-অধিনায়ক। সমস্যা হচ্ছে ব্যাটসম্যান সহবাগের চলতি ফর্ম। কাঁধের চোট সারিয়ে ফেরার পর ওয়ান ডে-তে ডাবল সেঞ্চুরি করলেও টেস্টের ফর্ম ভয়াবহ। ইংল্যান্ডে দু’টো টেস্ট খেলে ব্যর্থ হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত তিন টেস্টের ছয় ইনিংসে করেছেন ১১৮ রান। একটা মাত্র পঞ্চাশ। গড় ১৯.৬৬। এ রকম ফর্মে থাকা একটা লোককে কী করে এখন অধিনায়ক বাছা যায়? শনিবার রাতেও চেন্নাইতে বসে নির্বাচকেরা এ নিয়ে কথা বলেছেন। আর সহবাগের চলতি ফর্ম সেখানেও বার বার চিন্তার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। আর একটা বড় কারণ হচ্ছে, এর পর ত্রিদেশীয় এক দিনের টুর্নামেন্ট খেলবে ভারত। ওয়ান ডে-তে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি মানে এখনও বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
অধিনায়ক নিয়ে জল্পনা যদিও একমাত্র বিষয় নয়। জাতীয় নির্বাচকেরা ঘরোয়া আলোচনায় ঠিক করে নিতে পারেন ভারতীয় ক্রিকেটের আগামী দিনের ‘রোডম্যাপ’। এর পর ভারতের টেস্ট সিরিজ আবার জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কায়। তারপর অগস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ড। বছরের শেষে আসবে ইংল্যান্ড। সব মিলিয়ে দশটা টেস্ট। কথা উঠছে, অপেক্ষাকৃত কম আতঙ্কের এই টেস্টগুলোকে ভারতীয় ক্রিকেটের প্রজন্ম বদলের জন্য কাজে লাগানো হোক। এ ব্যাপারে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ডানকান ফ্লেচারের বক্তব্য। সম্মানজনক অবসরের প্রকল্প নিয়ে সবথেকে বেশি করে উঠছে ভিভিএস লক্ষ্মণের নাম। ইংল্যান্ডে ব্যর্থ। অস্ট্রেলিয়ায় তিন টেস্টের ছয় ইনিংস থেকে লক্ষ্মণের সংগ্রহ এখন পর্যন্ত ১০২ রান। একটা মাত্র হাফ সেঞ্চুরি। গড় ১৭। প্রশ্ন হচ্ছ, ০-৩ হয়ে গেলে কি লক্ষ্মণকে এখনই বলে দেওয়া হবে যে, অ্যাডিলেডের শেষ টেস্টকেই তোমার বিদায়ী টেস্ট ঘোষণা করে দাও। না হলে গ্যারান্টি দেওয়া যাচ্ছে না পরের সিরিজে আমরা রাখতে পারব কি না। রাহুল দ্রাবিড় কি সেটারও অপেক্ষা না করে নিজে থেকে সরে দাঁড়াবেন? নানা প্রশ্ন। নানা ধোঁয়াশা।
নামেই ত্রিদেশীয় এক দিনের টুর্নামেন্টের দল নির্বাচন। আদতে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সরণি নির্ধারণের মহাবৈঠক! |