মেলবোর্ন, সিডনির পর পারথেও ভারতীয় ব্যর্থতা দেখতে দেখতে একটা কথাই মনে হচ্ছে। এই টিমটার গ্লুকোজ দরকার। দলে তরুণ রক্ত চাই। চনমনে মনোভাব চাই।
দ্রাবিড়-লক্ষ্মণদের বয়স নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। আমি বলব, বয়স-টয়স কিছু না। ওরা ভাল খেলতে পারছে না। লক্ষ্মণের কথা ধরুন। পেস আর বাউন্সের বিরুদ্ধে বরাবরের ভাল ব্যাটসম্যান। যার জন্য ইংল্যান্ডের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় ওর রেকর্ড এত ভাল। এ বার দেখছি ইংল্যান্ডের মতো অস্ট্রেলিয়ার পিচেও বল ‘সাইডওয়েজ’ মুভ করছে। সিমিং উইকেটে লক্ষ্মণ সামলাতে পারছে না।
একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছি না। সহবাগকে ডিফেন্সিভ খেলার পরামর্শটা কে দিল? ও তো ডিফেন্স করতেই পারে না। আজ ও যে জায়গায় আছে, সেখানে পৌঁছেছে ওর নিজস্ব স্টাইলের ক্রিকেট খেলে। আরে বাবা, বীরু তো কোনও দিন গাওস্কর বা সচিন হতে পারবে না! খামোখা নিজের স্বাভাবিক খেলাটা চেপে রাখছে কেন? পারথে দুটো ইনিংসেই ডিফেন্স করতে গিয়ে উইকেটটা দিয়ে এল। টিম ইন্ডিয়ার কোচিং স্টাফ নিয়েও কয়েকটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আমরা বরাবর বিদেশি কোচ পছন্দ করি যাতে বিদেশে ভারতের পারফরম্যান্স ভাল হয়। সেটাই যখন হচ্ছে না তখন ডানকান ফ্লেচার বা এরিক সিমন্সদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক। |
অবশ্য যে দলের ক্যাপ্টেনই টেস্ট ক্রিকেট খেলতে চায় না সে দলের কাছ থেকে আর ভাল পারফরম্যান্স আশা করব কী করে? ধোনিকে দেখে, ওর কথা শুনে আমার তো মনে হচ্ছে না ও টেস্ট খেলতে চায়। আমার মনে হয় না দলের এ রকম ক্যাপ্টেন দরকার, যার টেস্ট নিয়ে কোনও আগ্রহই নেই। একের পর এক সফরে নেতৃত্ব দিয়ে ধোনি বোধহয় মানসিক ভাবেও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ওকে ওয়ান ডে আর টি টোয়েন্টির অধিনায়ক রেখে টেস্ট দলের নেতৃত্ব অন্য কাউকে দেওয়ার কথা ভাবার সময় এসেছে। অবশ্য সেই ক্যাপ্টেন কে হতে পারে, সেটাই ‘মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন’! আমার অন্তত চট করে কারও নাম মাথায় আসছে না। তবে মনে হয় তরুণ কাউকে দায়িত্ব দিলে দলের ভালই হবে। আর এই বদলগুলো অ্যাডিলেড থেকেই করা হোক।
আগামী বছর দুয়েক বিদেশে কোনও টেস্ট সিরিজ খেলছে না ভারত। যা আছে সব দেশের মাঠে। দলটাকে ঢেলে সাজানোর এটাই সেরা সময়। তরুণদের এখন থেকেই তৈরি না করলে সচিন-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণরা অবসর নিয়ে নিলে দলটাকে সামলানোর কেউ থাকবে না। চারটে ছেলের ওপর বিশেষ ভাবে নজর রাখা দরকার। রায়না, রোহিত, অজিঙ্ক রাহানে এবং বিরাট কোহলি। এদের মধ্যে কোহলিকে দেখছি, চলতি টেস্টে কিছুটা হলেও পাল্টা লড়াই দিচ্ছে। প্রথম ইনিংসে ৪৪ করল। দ্বিতীয় ইনিংসে ২১ ব্যাটিং। যদি রবিবার একটা বড় ইনিংস কোহলি খেলে দিতে পারে, তা হলে বলতেই হবে ও অনেক তৈরি হয়ে গিয়েছে। আর বোলিংয়ে সম্ভবনা বলতে মাথায় আসছে উমেশ যাদব আর অশোক দিন্দার নাম। |
রোহিত শর্মারও অ্যাডিলেডে একটা সুযোগ প্রাপ্য। ও বেশ কয়েক সপ্তাহ দলের সঙ্গে রয়েছে। অ্যাডিলেডে দ্রাবিড়-সহবাগকে দিয়ে ওপেন করিয়ে মিডল অর্ডারে রোহিতের জন্য জায়গা করে দেওয়া যায়। সিনিয়রদের নিয়েই যখন ১০০-১৫০ রানের বেশি তুলতে পারছি না, পরের পর ম্যাচ হারছি, তা হলে তরুণদের খেলাতে অসুবিধে কোথায়? তরুণদের উপর প্রত্যাশার চাপ থাকে না বলে ওরা খোলা মনে ভয়ডরহীন ভাবে খেলতে পারে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট যেমন তরুণদের উপর আস্থা রাখার ফল পাচ্ছে।
ভেবে দেখুন, খুব কঠিন পরিস্থিতি থেকেই কিন্তু বড় ক্রিকেটার উঠে আসে। ১৯৯৬ ইংল্যান্ড সফরে নভজ্যোৎ সিধুর ফিরে আসা আর সঞ্জয় মঞ্জরেকরের চোটের জোড়া ধাক্কা থেকেই কিন্তু সৌরভ আর দ্রাবিড়কে পেয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট। হতে পারে এই দুঃস্বপ্নের মধ্য থেকেই উঠে আসবে আগামী দিনের নতুন চ্যাম্পিয়ন!
|
চলতি টেস্ট সিরিজে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের গড় |
গম্ভীর ২৪.০০ |
সহবাগ ১৯.৬৬ |
দ্রাবিড় ৩০.৬০ |
সচিন ৪১.৫০ |
লক্ষ্মণ ১৭.০০ |
কোহলি ২১.৬০ |
ধোনি ২৫.০০ |
|
|
পারথ টেস্টের স্কোর |
ভারত
প্রথম ইনিংস: ১৬১
অস্ট্রেলিয়া
প্রথম ইনিংস (আগের দিন ১৪৯-০): |
কাওয়ান বো উমেশ ৭৪
ওয়ার্নার ক উমেশ বো ইশান্ত ১৮০
মার্শ ক লক্ষ্মণ বো উমেশ ১১
পন্টিং বো উমেশ ৭
ক্লার্ক ক ধোনি বো জাহির ১৮
হাসি ক সহবাগ বো বিনয় ১৪
হাডিন ক ধোনি বো জাহির ০
সিডল বো উমেশ ৩০
হ্যারিস ক গম্ভীর বো উমেশ ৯
স্টার্ক ন.আ. ১৫
হিলফেনহস ক বিরাট বো সহবাগ ৬
অতিরিক্ত ৫,
মোট ৭৬.২ ওভারে ৩৬৯।
পতন: ২১৪, ২৩০, ২৪২, ২৯০, ৩০১, ৩০৩, ৩৩৯, ৩৪৩, ৩৫৭।
বোলিং: জাহির ২১-৩-৯১-২, উমেশ ১৭-২-৯৩-৫, বিনয় ১৩-০-৭৩-১,
ইশান্ত ১৮-০-৮৯-১, সহবাগ ৭.২-০-২০-১।
|
ভারত
দ্বিতীয় ইনিংস: |
গম্ভীর ক হাসি বো স্টার্ক ১৪
সহবাগ ক হাডিন বো সিডল ১০
দ্রাবিড় ব্যাটিং ৩২
সচিন এলবিডব্লিউ স্টার্ক ৮
লক্ষ্মণ ক মার্শ বো হিলফেনহস ০
বিরাট ব্যাটিং ২১
অতিরিক্ত ৩,
মোট ৩২ ওভারে ৮৮-৪।
পতন: ২৪, ২৫, ৪২, ৫১।
বোলিং: হ্যারিস ৮-১-২৩-০, হিলফেনহস ৯-২-২৫-১,
স্টার্ক ৬-২-১৪-২, সিডল ৭-২-২১-১, হাসি ২-০-৩-০। |
|
|