বৃহৎ নদীবাঁধ বিতর্কে ফের উত্তপ্ত অসম। তিনটি ঘটনা সমস্ত স্থিতাবস্থা ভেঙে দিল। গত কাল রাতে গুয়াহাটিতে এনএইচপিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, বাঁধ নির্মাণ অবিলম্বে শুরু করতে হবে। অন্য দিকে, লখিমপুরে বাঁধ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের উপরে গুলি চালাল পুলিশ। জখম ১৫ জন। এরই পাশাপাশি, টানা অবরোধে কাজ বন্ধ থাকায়, দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা প্রায় হাজার খানেক শ্রমিক প্রকল্পের কাজ ছেড়ে চলে গেল।
বৃহৎ নদীবাঁধ নিয়ে সরকার ও বাঁধ-বিরোধী মঞ্চের দ্বিতীয় দফার আলোচনার দিন ছিল আজ। তার আগেই, গত রাতে গুয়াহাটিতে এনএইচপিসি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন। এনএইচপিসির কার্যনির্বাহী অধিকর্তা ভি গর্গ বলেন, “কেন্দ্র ও অসম সরকার বাঁধ নির্মাণের কাজ ফের শুরু করতে যথাসম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা নিক।” বৃহৎ বাঁধ প্রকল্প নামনি সুবনসিরি উপত্যাকায় ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনবে আশঙ্কা করে ডিসেম্বর থেকে আসু, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, টিএমপিকে-সহ প্রায় ২০টি দল বাঁধের কাজ থামিয়ে দিয়েছে। সড়ক অবরোধ করে প্রকল্পস্থলে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি ট্রান্সফর্মার, টারবাইন। লখিমপুরে ট্যাঙ্কারও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে গেরুকামুখে বাঁধের কাজ বন্ধ। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা হাজারখানেক শ্রমিক কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্প ছেড়ে চলে গিয়েছে। গর্গের আশঙ্কা, এমনটা চলতে থাকলে দেশের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ সময়ে শেষ করা যাবে না। অন্যতম প্রকল্প আধিকারিক ওমপ্রকাশ আশ্বাস দেন, “সুবনসিরি উপত্যাকায় বাঁধের কোনও বিপজ্জনক প্রভাব পড়বে না। বাঁধ ভেঙে পড়ারও কোনও আশঙ্কা নেই। সারা দেশে ১৪টি প্রকল্প আমরা তৈরি করছি। কাশ্মীরে ৯ রিখটার স্কেলের কম্পনেও বাঁধ ভাঙেনি।” তাঁদের বক্তব্য, “বাঁধ বিরোধীরা যুক্তি মানছেন না। আমরা বাঁধ নির্মাণে বিশেষজ্ঞ। প্রতিটি পদক্ষেপে বাঁধের সুরক্ষার দিকটি মাথায় রাখা হয়েছে। মানুষ ভুল বুঝে এমন করছেন। সব নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।” প্রথমে এই বাঁধ থেকে অসমের ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা ছিল। রাজ্য সরকার দাবি করেছিল ৬০০ মেগাওয়াট। এখন অবশ্য রাজ্যকে ২০৮ মেগাওয়াট দেওয়া হবে বলে এনএইচপিসি জানিয়েছে।
গুয়াহাটিতে সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই ধেমাজি-লখিমপুর সীমানার থেকেরাগুড়ি এলাকায় মারমুখী বাঁধ-বিরোধীদের উপরে ধেমাজির এসপির নেতৃত্বে চড়াও হয় পুলিশ বাহিনী। দুই পক্ষে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। চলে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, গুলি। অন্তত ১০ জন বিক্ষোভকারী জখম হন। ৪০ জনকে পুলিশ আটক করেছে। প্রতিবাদে টায়ার জ্বেলে, গাছ ফেলে ৫২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। কৃষক সমিতির নেতা অখিল গগৈ বলেন, “বৈঠকের আগের দিন রাতে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে, গুলি চালিয়ে, সরকার বুঝিয়ে দিল, আলোচনা নয়, বাহুবলেই বাঁধ গড়তে চান তরুণ গগৈ।”
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ অবশ্য ফের স্পষ্ট করে দেন, “অসমের শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য বিদ্যুৎ আবশ্যক। তাই যে কোনও মূল্যে বাঁধ গড়বে অসম সরকার। যখনই আমরা অসমের উন্নয়নে কোনও পদক্ষেপ নিতে যাই তখনই একটি অশুভ চক্র তা বানচাল করতে উঠে পড়ে লাগে।” এতে পরোক্ষে চিনেরই সুবিধা হবে বলে কটাক্ষও করেন গগৈ। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই তিনি অভিযোগ করেছেন, বাঁধ-বিরোধী আন্দোলনে মাওবাদীরাও সামিল বলে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছে।
এ দিকে, আজ দিসপুরে বিদ্যুৎমন্ত্রী প্রদ্যোৎ বরদলৈয়ের নেতৃত্বাধীন বিশেষ কমিটি আট সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পরে আলোচনা হয় ২২ সদস্যের নাগরিক সমাজের সঙ্গেও। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ৪ জন গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২ জন করে ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয় ও আইআইটির অধ্যাপক। তাঁরা এ দিনও জানান, বাঁধের নির্মাণ ক্ষেত্র খুবই বিপজ্জনক। তার নির্মাণ পরিকল্পনাতেও ত্রুটি আছে। |