তিন বারের অভিজ্ঞতায় ঠেকে শিখেছে বিজেপি। তাই কংগ্রেস যতই লখনউয়ের তখ্ত দখল করার জন্য মুলায়মের সঙ্গে হাত মেলানোর পথে হাঁটুক, উত্তরপ্রদেশে সরকার গড়তে তাঁরা মায়াবতীর সঙ্গে কোনও ভাবেই জোট গড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, এর আগে তিন বার মায়াবতীর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশে হাত মিলিয়েছে দল। কিন্তু তাতে লাভের থেকে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। তা ছাড়া, উত্তরপ্রদেশে এ বারের নির্বাচনে সরকার গড়া নয়, ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোই আসল লক্ষ্য বিজেপির। যাতে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে সেই জনভিত্তিকে কাজে লাগিয়ে দিল্লির মসনদ দখল করা যায়। কারণ দল ভাল মতোই জানে, উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে নিজের ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে না পারলে কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। আর ভোটের পরে মায়াবতীর সঙ্গে হাত মেলালে বিজেপির দখল করা জমি ফের হাতছাড়া হতে পারে। তাই দলের সিদ্ধান্ত, ভোটের আগে যেমন কারও সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা হচ্ছে না, তেমনই ভোটের পরেও কারও হাত ধরবে না দল।
সম্প্রতি বাবুসিংহ কুশওয়াহা-সহ মায়াবতীর দল থেকে বিতাড়িত একগুচ্ছ নেতাকে বিজেপিতে আনার পর থেকেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কংগ্রেস থেকে শুরু করে কল্যাণ সিংহের মতো প্রাক্তন নেতা সব পক্ষেরই অভিযোগ, মায়াবতীর সঙ্গে বিজেপির আর্থিক লেনদেন হয়েছে। তাই মায়াবতী যাঁদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের দলে টেনে নিচ্ছেন নিতিন গডকড়ীরা। তাই বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে মায়াবতীকেই ভোট দেওয়া বলে ভোটারদের ‘সতর্ক’ও করে দিচ্ছেন তাঁরা। পাল্টা জবাবে বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, মায়াবতীর দলের নেতাদের এনে বহুজন সমাজ পার্টিরই ভোট কাড়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। বিতর্কের মুখে কুশওয়াহাকে বিজেপির সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি স্থগিত রাখা হলেও দলের নেতাদের বক্তব্য, বিতাড়িত ওই নেতা কার্যত বিজেপির হয়েই প্রচার করছেন যাতে মায়াবতীর ভোটে থাবা বসানো যায়।
বিজেপির শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি বলেন, “আমরা তো খোলাখুলি বলতে পারি, উত্তরপ্রদেশে কারও সঙ্গে আমাদের লেনাদেনা নেই। কিন্তু কংগ্রেস বলুক, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরার পর উত্তরপ্রদেশে তারা নতুন শরিকের সন্ধানে নামছে কেন? মুলায়ম সিংহ যাদব তো বলেই দিয়েছেন, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই!” বিজেপি নেতৃত্বের কৌশল, মায়াবতীর উপর রুষ্ট ব্রাহ্মণ, রাজপুতের মতো উচ্চবর্ণের ভোটকে ফের নিজেদের ঝুলিতে ফেরত আনা। পাশাপাশি কংগ্রেস যখন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) সংরক্ষণ কেটে চড়া মাত্রায় সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি করছে, তখন ওবিসি ভোটটিকে যথাসম্ভব নিজেদের দিকে টেনে আনা।
সে কারণেই কুশওয়াহার মতো নেতাকে আনা। সে কারণেই উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ারের মতো ওবিসি নেতাকে ময়দানে নামিয়ে দেওয়ার কাজ চালাচ্ছেন নেতারা। লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতা গোড়া থেকেই উমাকে উত্তরপ্রদেশের ‘মুখ’ করে প্রচারে নামার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু শুধু রাজ্য স্তরে নয়, কেন্দ্রীয় স্তরেও অনেক নেতার তাতে ঘোরতর আপত্তি। এ নিয়ে সম্প্রতি দলের ভিতরে এবং বাইরে উমা তাঁর অসন্তোষ ব্যক্তও করেছেন। দলের মধ্যে দরকষাকষির জন্য উমাকে ওবিসি অধ্যুষিত বুন্দেলখণ্ড এলাকায় আসন বেছে নিতে বলেছেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। উত্তরপ্রদেশের বাবিনা আসন থেকে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশও করেছেন উমা। দলীয় নেতৃত্ব একমত হলে গডকড়ী শীঘ্রই উমার আসনটি ঘোষণা করে দিতে পারেন। |