ভোটে উত্তরপ্রদেশ
প্রশ্ন দলে, তবু সংখ্যালঘু
সংরক্ষণই বাজি রাহুলের
লের একাংশে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও সংখ্যালঘু সংরক্ষণের বিষয়টিকে উত্তরপ্রদেশের ভোট-ময়দানে জোরালো ভাবেই তুলে ধরতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের বিশ্বাস, এই কৌশলেই উত্তরপ্রদেশে এ বার আগের চেয়ে ভাল ফল করবে কংগ্রেস। যদিও বিজেপি শিবিরে ধারণা, কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে বেশি হইচই করলে সেটা তাদের পক্ষে ব্যুমেরাং হবে। লাভ পাবে বিজেপি-ই।
কংগ্রেসের কিছু নেতারও এই আশঙ্কা রয়েছে। তবে রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কিন্তু ভোটের দোরগোড়ায় পৌঁছে এ ব্যাপারে আর কোনও রকম ইতস্তত করতে নারাজ। গত কাল দলীয় মুখপাত্রের বক্তব্যে কিছু মহলে এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের থেকে কিছুটা দূরত্ব রাখতে চাইছেন। আজ কিন্তু সে ধারণা মুছে দিতে কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভি স্পষ্ট বলেন, “দূরত্ব তৈরির প্রশ্নই নেই। কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটকের ধাঁচে কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার যে শিক্ষা ও চাকরিতে সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে, গত লোকসভা ভোটের ইস্তাহারেই তা ঘোষণা করা হয়েছিল। নিজের ইস্তাহার থেকে কংগ্রেস কেন দূরত্ব বাড়াবে?”
রশিদের কথায়, “অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র আওতায় সংখ্যালঘুদের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য সাড়ে চার শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রাজ্যে সেই হার বাড়ানো হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে তখন সংখ্যালঘু সংরক্ষণের হার কত হবে, তা নির্বাচনী ইস্তাহারে ঘোষণা করা হবে।” দলীয় সূত্রে যে ইঙ্গিত মিলেছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, ওবিসি কোটার মধ্যেই পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘুদের জন্য কংগ্রেস তার ইস্তাহার ও দিশা-প্রস্তাবে সাড়ে আট শতাংশ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিতে চলেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কংগ্রেসের এই কৌশল কতটা ফল দেবে? এ রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে মুলায়ম সিংহের দীর্ঘদিনের জনভিত্তি রয়েছে। ফলে মুসলিম মন পেতে কংগ্রেসের মূল লড়াইটা এখন মুলায়মের সঙ্গে। আর তাই আজ মুলায়ম সিংহের তীব্র সমালোচনা করে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “এত দিনে টনক নড়েছে মুলায়মের। সংখ্যালঘুদের কাছে টানতে ১৮ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলছেন। কিন্তু এত দিন কি তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন? ১৮ শতাংশ সংরক্ষণের জন্য সংবিধান সংশোধনের কথাও খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছেন মুলায়ম। অথচ লোকসভায় তার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যে মুলায়মের কোনও দিনই হবে না, সেটা তিনিও ভাল করেই জানেন। ফলে স্রেফ বিভ্রান্তিই ছড়াচ্ছেন মুলায়ম?” স্পষ্টতই, সংরক্ষণের প্রশ্নে কংগ্রেস যে মুলায়মের থেকে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত দাওয়াই দিচ্ছে, সেই বার্তাই সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন দিগ্বিজয়রা।
তবে দলের একাংশের আশঙ্কা, সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা বেশি বললে কংগ্রেস উচ্চ বর্ণের ভোট হারাতে পারে। যে-হেতু ওবিসি-র জন্য বরাদ্দ ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের মধ্যে থেকেই মুসলিমদের সাড়ে আট শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তাই ওবিসি-রা কংগ্রেসের ওপর চটবেন। যদিও দিগ্বিজয়দের বক্তব্য, সংখ্যালঘু ভোটের বড়সড় অংশ পেয়েই কংগ্রেস লোকসভা ভোটে ভাল ফল করেছিল। তা ছাড়া, মুসলিম সংরক্ষণের জন্য উচ্চ বর্ণের স্বার্থে মোটেও ঘা পড়ছে না, তাই তাদের সমর্থন হারানোর আশঙ্কা নেই। আবার উত্তরপ্রদেশে ওবিসি-দের মধ্যে কংগ্রেসের জনভিত্তি এমনিতেই দুর্বল। তার পর আর কত ক্ষতি হতে পারে? বরং রাজ্যের অবিসংবাদিত কুর্মী নেতা বেণিপ্রসাদ বর্মাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার পর ওবিসি-দের একটা অংশের ভোটও কংগ্রেস পেতে পারে। সেই সঙ্গে মায়াবতীর দলিত ভোট ব্যাঙ্কে ভাগ বসানোও কংগ্রেসের লক্ষ্য। যে লক্ষ্য সামনে রেখে গত তিন বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের দলিত মহল্লায় ঘুরেছেন রাহুল।
বিজেপি নেতৃত্বের অবশ্য ধারণা, কংগ্রেস সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা বেশি বললে, লাভ তাঁদেরই। অরুণ জেটলিদের মতে, মুলায়ম ও তাঁর পুত্র অখিলেশ এখন যে ভাবে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় আগ্রাসী প্রচার চালাচ্ছেন, তাতে অর্ধেক সংখ্যালঘু ভোট সপা একাই নিয়ে নেবে। বাকি অর্ধেক মায়াবতী ও কংগ্রেস ভাগাভাগি করবে। সংখ্যালঘু সংরক্ষণের জেরে অসন্তুষ্ট ওবিসি-দের কিছু ভোট পাবে বিজেপি। সেই সঙ্গে মায়াবতীর দলিত ভোট ব্যাঙ্কের একাংশও ভাঙিয়ে নিতে পারবে বলে বিজেপি-র দাবি। বড় বিষয় হল, মেরুকরণের রাজনীতি হলে উচ্চ বর্ণের ভোট যাবে বিজেপি-তেই।
সম্ভবত এই হিসেব কষেই কংগ্রেসের মুসলিম তোষণ নিয়ে আজ আক্রমণাত্মক হন জেটলি। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতি করছে। তা ছাড়া, বাটালা হাউসের সংঘর্ষ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ দু’মুখে কথা বলছেন। কংগ্রেসের এই দ্বিচারিতার জবাব দেবেন মানুষ।”

অমেঠি যাচ্ছেন প্রিয়ঙ্কা
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভাই রাহুলের নির্বাচনী কেন্দ্র অমেঠিতে আসছেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের ১৬ তারিখ অমেঠি পৌঁছবেন প্রিয়ঙ্কা। সেখানে তিনি তিন দিন থাকবেন। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন। তবে এই সফরে প্রিয়ঙ্কা কোনও নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেবেন না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.