রবীন্দ্রভারতীর নাট্যবিভাগ
পুরনো ক্যাম্পাসে ফেরার দাবি, ‘হুমকি’র মুখে সিঁটিয়ে পড়ুয়ারা
শিক্ষার উপযুক্ত পরিকাঠামো চেয়ে পড়ুয়াদের আন্দোলন। রাজনৈতিক রং ছাড়াই। অথচ সেই আন্দোলনের বিরোধিতা করছে তৃণমূল পরিচালিত ছাত্র ইউনিয়ন, অভিযোগ এমনই। ‘দাদা’দের শাসানিতে জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ভয় পাচ্ছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যবিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা।
রবীন্দ্রভারতীর নাট্যবিভাগটি বয়সে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা-র চেয়েও প্রাচীন। জোড়াসাঁকোর সঙ্গীতভবনেই দীর্ঘকাল ধরে চারুকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে নাট্যবিভাগেরও ক্লাস হয়ে এসেছে। ২০০৭ সালে এই বিভাগগুলিকে আচমকাই বিটি রোডের ক্যাম্পাসে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। নাট্যবিভাগের ছাত্রছাত্রীরা তখন থেকেই তাঁদের অসন্তোষ জানিয়ে আসছেন।
অসন্তোষের কারণ? ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, বিটি রোড ক্যাম্পাসে ব্যবহারযোগ্য কোনও নাট্যমঞ্চ নেই, উপযুক্ত কর্মশালাকক্ষ নেই, মঞ্চসজ্জা এবং মেকআপের সরঞ্জাম রাখার জায়গাও নেই। যে কারণে প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা এখনও জোড়াসাঁকোতেই নেওয়া হয়। একাধিক আলোচনাসভায় শুভাপ্রসন্ন, বিভাস চক্রবর্তীরাও বরাবর জোড়াসাঁকোয় ফিরে যাওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন। দীর্ঘ চার বছর চিঠিচাপাটির পর্ব পার করে গত বছরের শেষ থেকে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেন পড়ুয়ারা।
ছাত্র সংসদ এতে নারাজ কেন? তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ছাত্র সংগঠনের পর্যবেক্ষক সুজিত সাম বলেন, “কোন বিভাগের ক্লাস কোথায় হবে, সেটা কর্তৃপক্ষ ঠিক করবেন। এতে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।” ওয়াকিবহাল মহল অবশ্য দাবি করছে, ২০০৭ সালে এসএফআই-ও যা চেয়েছিল, এখন টিএমসিপি-ও তাই চাইছে। সব ক’টি বিভাগকে এক ক্যাম্পাসে রাখতে পারলে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা হয়। সে কারণেই ক্যাম্পাস বদলের বিরোধিতা করছে তারা। ২০০৭ সালে বলা হয়েছিল, হেরিটেজ ভবনের সুরক্ষার স্বার্থে ক্যাম্পাস বদল জরুরি। অথচ জোড়াসাঁকোর যে অংশে ক্লাস হত, তাতে মূল ভবনের ক্ষতির প্রশ্ন নেই বলেই মনে করেন বিভাসবাবুরা।

আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নাট্যবিভাগের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সই করা একটি চিঠি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে জমা দেন গত ২৬শে ডিসেম্বর। তার পর ২রা জানুয়ারি পড়ুয়ারা জোড়াসাঁকোয় জমায়েত হন। চারুকলা বিভাগের অধ্যক্ষ সোমনাথ সিংহ (সোমনাথবাবুর নামে দলবাজির অভিযোগ এনেই ৫ জানুয়ারি উপাচার্য়কে ঘেরাও করে টিএমসিপি), নাট্যবিভাগের শিক্ষক সৌমিত্র বসু, পীযূষ চক্রবর্তী, এবং তরুণ প্রধান ছাত্রদের দাবিকে সমর্থন করেন। ৯ জানুয়ারি থেকে স্নাতকোত্তর দু’টি বর্ষ ও স্নাতক তৃতীয় বর্ষ এবং পরে স্নাতক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের প্র্যাক্টিকাল ক্লাস জোড়াসাঁকোয় ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন সোমনাথবাবু। ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য চান, গোটা বিভাগটিকেই জোড়াসাঁকোয় ফিরিয়ে আনতে। নইলে সমন্বয়ের অভাব থাকবে বলে তাঁদের দাবি।
কিন্তু ২রা জানুয়ারির জমায়েতের পর থেকেই তৃণমূল শাসিত ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে আন্দোলনকারীদের উপরে প্রবল চাপ আসতে থাকে বলে অভিযোগ। ছাত্রছাত্রীদের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কথায়, “কোনও রকম রাজনৈতিক রং ছাড়া যা ছিল শুধুমাত্র শিক্ষার স্বার্থে ছাত্রদের প্রতিবাদ, তার মধ্যে জোর করে রং লাগানোর চেষ্টা শুরু হয়। আমাদের নিয়মিত হুমকি দেওয়া হতে থাকে।” এই ‘নিরাপত্তাহীনতা’র কথা জানিয়ে ছাত্ররা শিক্ষামন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের কাছে চিঠি দেন ৬ জানুয়ারি। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্রনেতাদের তরফে শাসানি আবার শুরু হয়েছে। অভিযোগ নস্যাৎ করে সুজিত বলছেন, “সামনেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন। অন্য বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার সময় এখন নেই।” ব্রাত্যবাবু ফোনে বলেন, “ভীতি প্রদর্শনের বিষয়টি আগে ছাত্ররা আমাকে জানিয়েছিলেন। আমি ব্যবস্থাও নিয়েছিলাম। এখন যা বলা হচ্ছে, সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রটনা। তেমন কোনও ঘটনা ঘটলে আবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাম্পাস বদলের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাপার। উপাচার্য যদি এ ব্যাপারে সাহায্য চান, আমি অবশ্যই তা করব।”
আপাতত ক্যাম্পাস ফিরে পাওয়ার দাবিতে ১১ এবং ১২ জানুয়ারি অ্যাকাডেমি চত্বরে সই সংগ্রহ অভিযান চালিয়েছেন নাট্যবিভাগের পড়ুয়ারা। তাঁরা কথা বলেছেন, নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গৌতম হালদারের সঙ্গে। কৌশিক বললেন, ‘‘ছাত্রদের দাবি অত্যন্ত ন্যায্য। প্রয়োজনে নাট্যকর্মীরা এর সমর্থনে পথে নামবেন।” ছাত্রদের বক্তব্য নিজে টেলিফোনে ব্রাত্য বসুর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বিপ্লব। এ ব্যাপারে রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য করুণাসিন্ধু দাস কী বলছেন? তাঁর কথায়, “হেনস্থা করা হচ্ছে বলে কোনও পড়ুয়া আমার কাছে অভিযোগ জানাননি।” ছাত্ররা উপাচার্যকে জানাননি কেন? ছাত্রদের বক্তব্য, “উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে তো জোড়াসাঁকোয় যেতে হবে! আমাদের ওখানে গেলেই মারধর করা হবে বলে ভয় দেখানো হচ্ছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.