আয়লায় সহায় হারানো শিশুদের জন্য ‘অন্য বাড়ি’ দিল্লির দম্পতির
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নয়, এক স্বেচ্ছাসেবী দম্পতির কথা। ঘূর্ণিঝড় আয়লায় আশ্রয় হারানো ২৫টি শিশুকে যাঁরা কলকাতার দক্ষিণ শহরতলিতে যত্নে লালন-পালন করছেন বছর দু’য়েক ধরে।
২০০৯ সালে আয়লা-র তাণ্ডবে সুন্দরবনের একটা বড় অংশে হাজার হাজার বাড়ি শুধু ধ্বংসই হয়নি, প্রাণ হারান বহু মানুষ। কিন্তু, আয়লা কত শিশুকে অনাথ করেছে, সে ব্যাপারে বিশদ তথ্য প্রশাসন বা বেসরকারি সূত্রে মেলা দুষ্কর। তবে বহু শিশু যে অনাথ হয়েছে এবং তার চাইতেও বেশি শিশু অনাথ না হলেও সহায়-সম্বল হারিয়েছে-- সে কথা সুন্দরবনের মানুষের সঙ্গে কথা বললেই জানা যায়। এ রকমই অনাথ, সহায়-সম্বলহীন শিশুদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন রয়েছে দাস দম্পতি--ভবেশ এবং অর্চনার আশ্রয়ে। আর পাঁচটা সচ্ছল মধ্যবিত্ত বাড়িতে বাচ্চারা যে ভাবে বড় হয়, ওই শিশুরাও প্রায় সে ভাবেই বড় হচ্ছে। গড়িয়ায় একটি বাড়িতে আয়লা-বিধ্বস্ত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আনা ওই শিশুদের বড় করছেন ভবেশবাবুরা।
ভবেশ ও অর্চনা দাস।
ভবেশবাবু পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজের ‘কনসালটেন্সি ফার্ম’ চালান। অর্চনাদেবী একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের উচ্চ পদে ছিলেন। সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। নয়াদিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের বাসিন্দা ওই দম্পতি কেন করছেন এ সব? ভবেশবাবু বললেন, “আয়লার কিছু দিন পরে আমরা চেন্নাই বেড়াতে গিয়েছিলাম। মেরিন ড্রাইভে গাড়িতে যাওয়ার সময় চোখে পড়ল, সমুদ্রের ধারে অজস্র ঝুপড়ি। চালকের কাছ থেকে জানলাম, হাজার হাজার মানুষ আয়লায় সব খুইয়ে ওই অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তখনই সুন্দরবনের কথা মনে পড়ল। আয়লায় ভয়ঙ্কর ক্ষতি তো ওখানেও হয়েছে।”
আয়লা-দুর্গতদের সাহায্য করতে কলকাতায় আসবেন বলে মনস্থ করেন ওই দম্পতি। কিন্তু সংশয় ছিল। কারণ, ভবেশবাবুর অভিজ্ঞতা, “এর আগে কলকাতায় একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অর্থ সাহায্য করলেও, সে টাকায় কাজ কত দূর হয়েছে দেখতে পাইনি। কাজ দেখতে চাইলেও কেউ-ই আমাদের গ্রামে নিয়ে যাননি।” তবে আয়লা-বিধ্বস্ত সুন্দরবনে গিয়ে স্থানীয় সমাজসেবী মিহির দেবনাথের সহায়তা পেয়ে ‘অন্য রকম’ অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁদের। মিহিরবাবুর হাত ধরেই তাঁরা পৌঁছেছেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে।
এখন আর ওরা অনাথ নয়। —নিজস্ব চিত্র।
আমতলি, কুমিরখালি, ছোট মোল্লাখালি, রাধানগর, দয়াপুরের মতো সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গড়িয়ায় দাস-দম্পতির আশ্রয়ে এসেছে অচিন্ত্য, অলকা, আকবর, সুজাতারা। জনা দশেক অনাথ। বাকিদের আত্মীয়েরা আছেন। তবে আয়লা-র কোপে সম্বল হারানোয় নিজেদের গ্রাসাচ্ছদন জোগাড় করতেই তাঁরা বিপর্যস্ত।
পরিচ্ছন্ন ও উজ্জ্বল পোশাকে ঝলমলে তিন থেকে আট বছরের ওই হাসিখুশি শিশুদের দেখে বোঝা দুষ্কর, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং পারিবারিক অসহায়তা কখনও ওদের শৈশবে থাবা বসিয়েছিল। আয়লা-র স্মৃতি ওদের কাছে ততটা স্পষ্ট নয়। ওরা বরং বলতে ভালবাসে কম্পিউটার গেম, কার্টুন, আর যে স্কুলে পড়ে সেই স্কুলের বন্ধুদের কথা।
নিজেদের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত ওই ২৫টি শিশুর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব পালন করতে চান বলে জানালেন ভবেশবাবু। এ জন্য তাঁর পুঁজি বলতে সঞ্চিত অর্থ। বাচ্চাদের দেখাশোনা, পড়াশোনার কাজে ওই দম্পতিকে সাহায্য করছেন অপর্ণা হালদার, মহুয়া ঘোষ, রতন মাঝি, কার্তিক দে, রুবি কুণ্ডুরা। ভবেশবাবুর কথায় “ওঁরা সাহায্য করেন বলেই ওই বাচ্চাগুলোর কাছে এই জায়গাটা যথার্থই ‘হোম অ্যাওয়ে ফ্রম হোম’ হয়ে উঠেছে।”
আকবর, অলকাদের কথায়, “এটাই এখন আমাদের বাড়ি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.