ধানের ‘দাম না পাওয়া’ এবং তার জেরে চাষির আত্মহত্যার অভিযোগকে ঘিরে তেতে উঠছে রাজ্য রাজনীতি। প্রশাসন এই অভিযোগ মানতে নারাজ। কিন্তু শুক্রবার মালদহের হবিবপুরের পরে, শনিবার বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। চলতি মরসুমে এমন অভিযোগ আগেও মিলেছে বর্ধমানে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা কৃষকসভার রাজ্য সভাপতি মদন ঘোষ শনিবার বলেন, “যদি আমরি এবং বিষমদ-কাণ্ডে মৃতদের ক্ষেত্রে সরকার ক্ষতিপূরণ দেয়, তা হলে কৃষকেরা আত্মহত্যা করলে দেবে না কেন?” মদনবাবু জানান, মৃতদের ক্ষতিপূরণ এবং ফসলের ন্যায্য দামের দাবিতে বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি পথে নামবে। পক্ষান্তরে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কৃষকের মৃত্যু দুঃখজনক। তবে জেলা থেকে খবর নিয়েছি, মালদহের কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনার পিছনে পারিবারিক কারণ যুক্ত। ধানের দাম না পাওয়ায় কৃষক আত্মহত্যা করেননি।”
যদিও শুধু বিরোধীরা নন, সরকারের দিকে তোপ দেগেছে শাসক জোটের শরিক কংগ্রেস নেতৃত্বও। ‘ধানের দাম না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা লজ্জাজনক’ বলে এ দিনই মন্তব্য করেছেন রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী কংগ্রেসের সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁরও অভিযোগ, “সরকারের উদাসীনতার জন্যই চাষি আত্মহত্যা করছেন।” উত্তর মালদহের সাংসদ তথা প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নূর বলেন, “রাজ্য সরকারের উদাসীনতার জন্য চাষিরা সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। চালকলের মালিকেরা ৩-৪ দিনের পরে এখন ধান কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারি আধিকারিকদের সামনেই দালালেরা কম দামে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনছেন। এমন চললে আগামী দিনে অনেক চাষি আত্মহত্যা করবেন।” তবে মালদহের জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনার বক্তব্য, “ওই চাষি (হরিদাস রত্ন) মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করেছেন।” রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষও মহাকরণে বলেন, “কৃষকের আত্মহত্যার দু’-একটি ঘটনার কথা রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছেছে। কিন্তু তাঁরা ধান-চালের দাম না পেয়েই আত্মহত্যা করেছেন, এমন তথ্য নেই।” তবে ফসলের দাম না পেয়ে আত্মহত্যার খবর যদি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়, সে ক্ষেত্রে প্রতিটি ঘটনার বিশদ তদন্ত-রিপোর্ট পাঠাতে জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যসচিব বলেন, “জেলাশাসকেরা রিপোর্ট পাঠালে দেখা যাবে।”
ধানের দাম না পেয়ে পূর্বস্থলীতে যে কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁর নাম তাপস মাঝি (৩৫)। বাড়ি পূর্বস্থলী ১ ব্লকের চণ্ডীপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে একটি আমবাগান থেকে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। মৃতের দাদা সুধীর মাঝি ও গদাধর মাঝি জানান, তাপস নিজের এক বিঘা জমিতে চাষ করতেন। আবার কখনও ভাগচাষও করতেন। তাঁদের দাবি, “গত তিনটি মরসুম ধরে ভাই ধান চাষ করে দাম পায়নি। বাজারে বেশ কিছু ঋণ হয়ে গিয়েছিল। পাওনাদারেরাও মাঝে মাঝে তাগাদা করত। তাই ও আত্মহত্যা করেছে।” বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য দাবি করেছেন, “বাড়ির লোকেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই চাষির মানসিক সমস্যা ছিল।” |