খুলেছে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ। তবে স্বাভাবিক হয়নি এখনও। ছবি: তরুণ দেবনাথ।
পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও শুক্রবারও পুরোপুরি স্বাভাবিক হল না রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের পঠনপাঠন। এদিন কলেজের তিনটি বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের সব কটি ক্লাস হলেও কলা ও বাণিজ্য বিভাগের একাধিক ক্লাস হয়নি। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের একাংশ গরহাজির থাকার কারণেই একাধিক ক্লাস বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এদিন সকাল থেকেই কলেজের গেটের সামনে বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শত্রুঘ্ন সিংহ এদিনও ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে কলেজে এসেছিলেন। বহিরাগতরা যাতে বিনা কারণে কলেজে ঢুকতে না পারে তার জন্য এদিন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের কর্মীরা পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে পড়ুয়াদের কলেজে ঢোকার ছাড়পত্র দিচ্ছেন। পাশাপাশি, বহিরাগত তথা কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়ারা খাতায় সই করে নির্দিষ্ট কারণ দর্শিয়ে তবেই কলেজের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন। ওই খাতার এদিন মোট ১৩ জন প্রাক্তন পড়ুয়া বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল ও শংসাপত্র নিতে কলেজে ঢুকেছিলেন। এদিকে কলেজের পঠন পাঠন স্বাভাবিক না হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে ছাত্র পরিষদ পরিচালিত কলেজের ছাত্র সংসদ। আগামী সোমবারের মধ্যে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক না হলে ছাত্র পরিষদের তরফে টানা আন্দোলনে নামার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ সাহা বলেন, “১৯ জানুয়ারি থেকে কলেজের তিনটি বর্ষের স্নাতক স্তরের অনার্সের পড়ুয়াদের টেস্ট পরীক্ষা শুরু হবে। তাই আগামী সোমবারের মধ্যে কলেজের পঠন পাঠন স্বাভাবিক না হলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।” কলেজ সূত্রের খবর, ১৯ জানুয়ারি থেকে তিনটি বর্ষের তিনটি বর্ষের স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের টেস্ট শুরু হবে। পড়ুয়াদের একাংশ পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকায় কলেজে পড়ুয়াদের হাজিরা কম। স্বচ্ছভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি তিলক চৌধুরী ও টিএমসিপির জেলা পর্যবেক্ষক প্রিয়ব্রত দুবের নেতৃত্বে তৃণমূলের একদল সমর্থক কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। সেই সময়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারকে মারধরের অভিযোগে রাজ্য তোলপাড় হয়। পুলিশ তৃণমূলের ৯ জন সমর্থককে গ্রেফতার করলেও লঘু ধারায় মামলা শুরু হওয়ায় তারা জামিন পেযে যান। অভিযুক্ত তিলকবাবু ও প্রিয়ব্রতবাবুও আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ দেখা দেয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অপমানিত বোধ কর পদ থেকে ইস্তফা দেন। তাঁর জায়গায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক শত্রুঘ্ন সিংহ। তাঁকে জেলা পুলিশ তাঁকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দেয়। শত্রুঘ্নবাবু বলেন, “পড়ুয়া ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় কলেজের পরিবেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। দু একদিনের মধ্যেই তিনটি বর্ষের সমস্ত বিভাগের ক্লাসও স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি। সমস্ত পড়ুয়া ও শিক্ষকদের কোনও আতঙ্কে না ভুগে কলেজে আসার আবেদন জানানো হচ্ছে।” তিনি জানান, পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিজের নিরাপত্তারক্ষী ও কলেজ চত্বরে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। |