|
|
|
|
|
শীতে টান টান হয়ে আছেন?
শীতে প্রায়ই মাংসপেশিতে উটকো টান ধরে বা
গাঁটে গাঁটে ব্যথা দেখা দেয়। মোক্ষম দাওয়াই স্ট্রেচিং।
জানাচ্ছেন ফিটনেস এক্সপার্ট বিশ্বজিৎ তপাদার। |
|
|
দেহের সন্ধি আর মাংসপেশির তাড়াতাড়ি আর জড়তাহীন কাজকম্ম করে যাওয়াই হল ফ্লেক্সিবিলিটি। শীতের সময় আমরা সব জবুথবু হয়ে যাই, ফ্লেক্সিবিলিটি অর্থাৎ নমনীয়তার অভাব বোধ হয় শরীরে। আর তা থেকেই নানা রকম সমস্যায় ভুগতে হয় আমাদের। শুকনো আবহাওয়া আর তার ওপর প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণ জল খাওয়া, ঠান্ডা এড়ানোর জন্য জানলা বন্ধ করে থাকা, শীতের আলসেমি আর শরীরচর্চায় অনীহা এ সবই কিন্তু মাংসপেশির মধ্যে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় আর ফ্রি মুভমেন্ট-এ বাধা দেয়। ঠান্ডার সময় শরীরে প্রয়োজনীয় জল এবং অক্সিজেনের ঘাটতি হতে দেবেন না। এটাও খেয়াল রাখুন ‘ল্যাকটিক অ্যাসিড’, ‘কার্বন-ডাইঅক্সাইড’, ‘নাইট্রোজেন’ অথবা ‘সেলুলার মেটাবোলাইটস’-এর মতো কোনও বর্জ্য পদার্থ শরীরে যেন বাসা না বাঁধে। বছরভর যাঁদের গা-হাত-পায়ে ব্যথা-যন্ত্রণা লেগেই রয়েছে তাঁদের শীতের সময় অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এই সময় শরীরের নমনীয়তার ওপর সরাসরি একটা প্রভাব পড়ে। সামনের দিকে ঝুঁকে মাটি থেকে কিছু তুলতে যাওয়া, নিচু হয়ে জুতোর ফিতে বাঁধা, উঁচু জায়গা থেকে কোনও কিছু টেনে নামানো, বসা থেকে ওঠা অথবা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার মতো সাধারণ কাজও অসাধ্য মনে হতে পারে। এই সময় যদি ঘাড়ে, কোমরে বা পায়ের মাংসপেশিতে ঘন ঘন টান ধরে তা হলে অতি অবশ্যই মাংসপেশির নমনীয়তা এবং সারা শরীরের সন্ধিগুলির কোমলতা নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। |
|
সারা ক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থেকে কাজ, অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি, প্রচুর পরিশ্রম কিংবা মানসিক চাপ যে ধরনের পেশার সঙ্গেই আপনি যুক্ত থাকুন না কেন, ন্যূনতম একটা নমনীয়তা প্রত্যেকেরই চাই। একটু চেষ্টা করলেই সেটা সম্ভব। যেমন ধরুন, নিয়মিত নির্দিষ্ট কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করলেই শরীরটা অনেকটা নমনীয় থাকবে। স্ট্রেচিং-এর সঙ্গে হালকা কিছু ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ (মাল্টি-জয়েন্ট মোবিলিটি) এবং সাধ্যমত কার্ডিয়োভাসকুলার ব্যায়াম করে নিতে পারলে শীতের মরসুমে শরীর ফিট থাকবে। তবে একটা কথা মনে রাখা দরকার শীতকালে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ বেশি দরকার বলে বছরের বাকি সময় দরকার নেই, এমনটা কিন্তু মোটেই নয়। সারা বছর স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করলে শীতকালেও শরীর ঝরঝরে থাকবে।
|
স্ট্রেচিং কেন জরুরি: |
• আড়ষ্ট মাংসপেশি সচল রাখতে আর মাংসপেশিকে রোজকার জীবনযাত্রার জন্য প্রস্তুত রাখতে স্ট্রেচিং মোক্ষম দাওয়াই। এর উপকারগুলো বলি।
• চটজলদি মাংসপেশিতে রক্তের জোগান বাড়ায়। দ্রুত আলস্য ও অবসাদ দূর করে।
• হঠাৎ হঠাৎ মাংসপেশিতে টান ধরে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
• শিরদাঁড়ার মাংসপেশিকে নমনীয় রেখে কার্টিলেজের ডিস্কগুলির ওপর চাপ কমায়। ফলে কোমর আর ঘাড়ের আড়ষ্টতা প্রতিরোধ করা যায়।
• স্ট্রেচিং-এর দ্বারা প্রাকৃতিক ও সহজ উপায়ে ‘এনডরফিন্স’ ও ‘এনকেফ্যালিন্স’ নির্গত হয় মস্তিষ্ক থেকে, ফলে সারা দিন শরীর ও মন তাজা থাকে।
• ঠিক মাত্রায় স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, পরোক্ষ ভাবে হলেও, সাহায্য করে।
|
স্ট্রেচিং কখন করবেন |
স্ট্রেচিং-এর আগে সব সময় শরীরকে একটু Warm-up করে নেওয়া দরকার। হাঁটা, হালকা জগিং, ক্রসট্রেনার, ট্রেডমিল, সিঁড়ি ওঠানামা বা স্কিপিং-এর মতো কার্ডিয়ো-ভাসকুলার ব্যায়ামগুলি শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলতে প্রাথমিক ভূমিকা নেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম-এর পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রেচিং-এর সময় রক্তে এই ধরনের খনিজের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজনীয়।
যাঁরা নিয়মিত ওয়েট ট্রেনিং করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই এক্সারসাইজ দু’ভাবে কাজে লাগে। প্রথমত, ওয়েট ট্রেনিং-এর আগে মাংসপেশির ওয়ার্ম-আপ-এর মাধ্যমে প্রত্যেকটা টিস্যুকে অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য তৈরি রাখা এবং ওজন তোলার সময় চোট-আঘাত প্রতিরোধ করা। দ্বিতীয়ত, ওয়েট ট্রেনিং-এর পর স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ মাংসপেশিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সাহায্য করে। ফলে মাংসপেশিকে অতিরিক্ত ঝক্কি ও চাপ থেকে মুক্ত করে পেশির বিশ্রাম নিশ্চিত করে। আর যে কোনও ওজন নিয়ে, অথবা অন্যান্য পেশির ব্যায়ামের আগে ও পরে মাংসপেশির স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য বজায় রাখতে স্ট্রেচিং করতেই হবে। |
স্ট্রেচিং-এর সাধারণ কিছু নিয়ম
মেনে চলুন’ |
• শ্বাস বন্ধ রেখে কোনও স্ট্রেচিং নয়।
• কোনও ঝাঁকুনি বা ঝটকা টানে স্ট্রেচিং চলবে না।
• শক্ত মাংসপেশিকে জোর করে স্ট্রেচ করাবেন না।
• সব সময় শরীরে উভয় দিকের মাংসপেশিগুলিকে সমপরিমাণ স্ট্রেচ করুন।
প্রথম দিকে যে কোনও স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ দশ সেকেন্ড ধরে রাখা দিয়ে শুরু করুন, পরে সময়টা ৩০ সেকেন্ড অবধি বাড়িয়ে দিন। সারা শরীরের মাংসপেশির জন্য মোট ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি সময় লাগানো উচিত নয়। ছোট মাংসপেশির জন্য কম সময়ে আর বড় মাংসপেশিতে বেশি সময় টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করুন।
নিয়মিত স্ট্রেচ করলে এক একটা মাংসপেশির মোট এক বা দু’বার স্ট্রেচ করাই যথেষ্ট।
প্রথম থেকে পর পর চোয়াল, ঘাড়, কাঁধ, বুক, হাত, পিঠ, কোমর, পেট, উরুর পিছন দিক, উরুর সামনের দিক, কাফ ও গোড়ালির মাংসপেশি এই ক্রমান্বয়ে স্ট্রেচ করুন। সময় কম থাকলে ঘাড়, কোমর ও পায়ের মাংসপেশির স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন।
প্রথম প্রথম কয়েকটা দিন এক জন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে স্ট্রেচিং অনুশীলন করা জরুরি। পরে শিখে গেলে, বাড়িতে একা একা অনুশীলনে বাধা নেই। |
যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫ |
|
|
|
|
|