ছেলেদেরও সমান অধিকার
নিজের যত্ন যদি ছেলেরা নিজেরাই নেয়, তা হলে তো ছিছি আর ঢিঢি বরাদ্দ। ও কী সব্বনেশে কথা, ছেলে হয়ে সাজগোজ, ত্বকের যত্ন-আত্তি, শীতে ময়শ্চারাইজার, গরমে ফেসওয়াশ!!! তবে যে নিয়মমাফিক ‘পুরুষালি’ সংজ্ঞাটাই লোপাট হয়ে যাবে। পুরুষ হবে মাচো, অগোছালো, সজ্জা-বিহীন (যেন এতে নখের কোণে ময়লা জমিয়ে রাখার লাইসেন্স পাওয়া যায়)। শীতকালে খড়ি ওঠা ত্বক যেন পুরুষের ঔদাসীন্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।
তবে এখনকার পুরুষরা বেশ সচেতন নিজেদের সম্পর্কে। নিজেকে সুন্দর করে তোলার দিকে তাঁদের তীক্ষ্ণ নজর। যদি রোমহীন ছাতি মেয়েদের ভাল লাগে কিংবা সেক্সি হওয়ায় একটু এগিয়ে রাখে, তা হলে সেই স্টাইল ধারণ করতে বাধা কোথায়?
মুশকিল হল ক্ষতিটা বাস্তবে নয়, মনে। ‘লোকে কী বলবে! আমি না পুরুষ’ কেবল এই দায়ভার বহন করতে গিয়ে কত ছেলেকে যে নিজের মন মেরে থাকতে হয়, বেচারা!
তবে যে সব পুরুষ এই বাধা ভেঙে হইহই করে নিজের রূপের প্রতি মনোযোগী হয়েছেন, তাঁদের কুর্নিশ। আর যাঁরা নিজের মেকওভার চান, কিন্তু মুখে বলতে পারেন না? তাঁরা চটপট পড়ে ফেলুন এই নামচা।
ছেলেরা নিজেদের চুল সম্পর্কে একটু কেয়ারলেস থাকেন, চুলের যত্ন এবং স্টাইলিংয়ের কিছু হেরফের সমস্ত চেহারাটার মধ্যে একটা বড় পরিবর্তন আনে। অর্থাৎ, বলা যেতে পারে ‘লুক’-এর একটা রদবদল ঘটে যায়। ছেলেরা সাধারণত পাশের বাড়ির সেলুন থেকেই চুল কাটেন, কিন্তু ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই ভাবে হেয়ারকাট এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাঁদের চুল পাতলা বা ভলিউম কম তাঁদের একটু বেশি সজাগ হয়ে থাকতে হবে হেয়ারকাটের সময়। ছেলেরা যদি কোনও সমঝোতা না করে কোনও বিশেষজ্ঞ বা স্পেশ্যালিস্টের কাছে যান, তবে খুবই ভাল হয়। হেয়ারস্টাইলিস্টরা ব্যক্তিত্ব, চাকরি, চুলের ভলিউম, সব কিছু মাথায় রেখে একটি সুন্দর স্টাইলের পরামর্শ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নিজের মাথার দায়িত্ব অন্য জনের হাতে তুলে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে আর একটি অভিযোগ স্বাভাবিক যে ঠিক মতো শ্যাম্পু করেন না এবং চুলের ন্যূনতম যত্ন সম্পর্কে উদাসীন থাকেন। সপ্তাহে তিন দিন অন্তত শ্যাম্পু করতেই হবে এবং চুল শুষ্ক ও সামলানো কঠিন হলে বেশ কয়েকটি হেয়ার স্পা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। হেয়ার স্পা সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। শ্যাম্পুর পরে কন্ডিশনিং করতে ভুললে চলবে না। এ ছাড়াও হেয়ার স্টাইলিংয়ের জন্য এখন নামী কোম্পানির ভাল ভাল প্রডাক্ট পাওয়া যায়। যেমন: সেরাম, বিভিন্ন ধরনের জেল, ওয়াক্স। এ সব ব্যবহার করে ইচ্ছে মতো নিজের চুলের একটা স্টাইল যথাযথ ভাবে সেট করে নেওয়া যায়। কিন্তু মনে রাখবেন, এ সব ব্যবহার করে চুল অবশ্যই ভাল করে ধুয়ে নেবেন। কারণ, এগুলি চুলের পক্ষে ক্ষতিকারক। যাঁদের চুল একটু লম্বা, তাঁরা স্ট্রেটনিং করিয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া চুলে কিছু অ্যাকসেসরিও ব্যবহার করতে পারেন। যাঁদের চুল পাতলা তাঁরা বিভিন্ন ট্রিটমেন্টের সাহায্য নিতে পারেন, এখন চুলের ভলিউম বাড়াতে অনেক রকম চিকিৎসাই হয়। এগুলি যথেষ্ট কার্যকর, তবে একটা রুটিন মেনে চালিয়ে যেতে হবে। মাঝপথে ছেড়ে দিলে চলবে না।
এ বার চুলের কালারিংয়ের কথায় আসা যাক। ব্যক্তিগত ভাবে চুলের বিভিন্ন ফ্যান্সি কালার আমার পছন্দ নয়। কমবয়সি যাঁরা, তাঁদের জন্য চলতি বিভিন্ন রং ভালই লাগে, কিন্তু বাদবাকিরা এগুলি থেকে নিজেকে দূরে রাখলেই ভাল। যাঁদের পাকা চুলের সমস্যা আছে, তাঁরা যে কোনও ন্যাচরাল শেড ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাধারণত পুরুষের ক্ষেত্রে হালকা কাঁচা পাকা চুল সব থেকে সুন্দর লাগে।

চুলের পর দ্বিতীয় ধাপে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। ছেলেরা শুধুমাত্র ‘শেভিং’ ছাড়া কোনও দিকেই কোনও মন দেয় না। একটি নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে ফেশিয়াল করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নিতে হবে। যাঁদের ত্বক শুষ্ক, তাঁরা আফটার শেভ ব্যবহার করা বন্ধ করুন। যদি ব্যবহার করতেই হল অ্যালকোহল নেই এমন আফটার শেভ ব্যবহার করুন।
পরের ধাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সমস্ত শরীরের লোম পরিষ্কার করা। পুরুষের নির্লোম শরীর এখন বেশি কাঙ্ক্ষিত। ওয়াক্সিং, হেয়ার রিমুভাল ক্রিম এইগুলি ব্যবহার করতে পারেন, অথবা কিছুটা ট্রিম করিয়ে নিতে পারেন। অনেকে সম্পূর্ণ লোমহীন শরীর পছন্দ করেন না। সে ক্ষেত্রে ট্রিমিং একটি গ্রহণযোগ্য পরামর্শ। এখন ছেলেরা অনেক নিচু কাটের কুর্তা, টি-শার্ট পরেন, সুতরাং এগুলি জরুরি।
ম্যানিকিয়োর, পেডিকিয়োর করাটা আপনার ইচ্ছের ওপর। তবে হাত ও পায়ের নখ পরিষ্কার রাখা এবং বিশেষ করে পায়ের পাতাটি পরিষ্কার রাখা দরকার। পরিচ্ছন্নতা আপনার ব্যক্তিত্বকে একটি অন্য মাত্রা দেয়। যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁরা ছ’মাস অন্তর অবশ্যই দাঁত পরিষ্কার করাবেন।
এই সমস্ত পরিচর্যা ছাড়াও আর একটি দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এটি হল কিছুটা নিয়মিত শরীরচর্চা। সাধারণত সকলের ঠিকঠাক এবং টোন্ড শরীর না হলেও দোহারা চেহারা সকলেরই পছন্দ, এবং তার জন্য চাই নিয়মিত এক্সারসাইজ।
ছেলেদেরও মেয়েদের মতো যথেষ্ট পরিমাণে সামগ্রিক যত্নের প্রয়োজন। তবে ছেলেদের কিছু বিষয়ে একটু সজাগ থাকতে হবে। যেমন কোনও সময় রঙিন রুমাল ব্যবহার করা চলবে না। চেষ্টা করবেন, সাদা রুমাল সঙ্গে রাখতে। পারফিউমের ক্ষেত্রে ফুলের গন্ধযুক্ত কোনও কিছু ব্যবহার করবেন না।

যদিও মেকআপ শব্দটি মেয়েদের সঙ্গেই যুক্ত, কিন্তু এখন ছেলেরাও মেকআপ ব্যবহার করছেন। কিছু দোষত্রুটি ঢাকতে ছেলেরা মেকআপ করতে পারেন, যেমন চোখের তলার কালি, পিগমেন্টেশন ইত্যাদি। এগুলির জন্য কনসিলার খুব ভাল। তবে ঠিক ভাবে, দক্ষতার সঙ্গে মিশিয়ে এটি করতে হবে। কারণ, মেকআপ যেন কখনও প্রকট না হয়ে ওঠে।

সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.